বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান।
ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া (scientia) থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।
বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতি ও সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।[৩] বর্তমান বিশ্ব এবং এর প্রগতি নিয়ন্ত্রিত হয় বিজ্ঞানের মাধ্যমে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যাপক অর্থে যেকোনো জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হলেও এখানে বিশেষায়িত ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহার করা হবে।
বিজ্ঞানের ক্ষেত্র মূলত দুটি: সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ এ ধরনের সকল বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে মানুষের আচার-ব্যবহার এবং সমাজ নিয়ে যে বিজ্ঞান তা সমাজ বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তবে যে ধরনেরই হোক, বিজ্ঞানের আওতায় পড়তে হলে উক্ত জ্ঞানটিকে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। আর একই শর্তের অধীনে যে গবেষকই পরীক্ষণটি করুন না কেন ফলাফল একই হতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি চেতনা অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষণের ফলাফল কখনও পরিবর্তিত হতে পারে না।
গণিতকে অনেকেই তৃতীয় একটি শ্রেণি হিসেবে দেখেন। অর্থাৎ তাদের মতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান আর গণিত এই তিনটি শ্রেণি মিলে বিজ্ঞান। ঐ দৃষ্টিকোণে গণিত হলো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান হলো পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে গণিতের মিল-অমিল উভয়ই রয়েছে। গণিত একদিক থেকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, উভয়টিই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন করে। আর পার্থক্য হচ্ছে, পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হলেও গণিতে কোনো কিছু প্রতিপাদন করা হয় আগের একটি সূত্রের (প্রায়োরি) উপর নির্ভর করে। এই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান, যার মধ্যে পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাও পড়ে, অনেক সময়ই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের প্রসার আবশ্যক। কিভাবে কোনো কিছু কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) বা কীভাবে মানুষ চিন্তা করে (সামাজিক বিজ্ঞান) তাই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে।
বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
সৌরজগৎ
1. সৌরজগৎ কাকে বলে?
উঃ সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সূর্য। পৃথিবীসহ মোট ৮ টি গ্রহ, এদের বিভিন্ন উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কা, গ্রহাণু এবং আরও অনেক ছোট ছোট জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্যকে নিয়ে এই যে জগৎ তাকে সৌরজগৎ বলে।
2. জ্যোতিষ্ক কাকে বলে?
উঃ সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব আলোকিত বিন্দু রাতের আকাশের গায়ে দেখা যায় তাদের সাধারণভাবে জ্যোতিষ্ক বলে।
3. গ্রহ কাকে বলে?
উঃ যারা নির্দিষ্ট কক্ষপথে থেকে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এবং যাদের নিজস্ব আলো বা উত্তাপ নেই, তাদের গ্রহ বলে। যেমন –পৃথিবী, মঙ্গল প্রভৃতি।
4. উপগ্রহ কাকে বলে?
উঃ যারা গ্রহের চারিদিকে ঘোরে তাদের উপগ্রহ বলে। যেমন – চাঁদ।
5. হ্যালির ধূমকেতু কত বছর অন্তর দেখা যায়?
উঃ ৭৬ বছর অন্তর।
6. সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহের নাম কী?
উঃ বুধ।
7. সূর্য থেকে বুধের দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ৫ কোটি ২৭ লক্ষ কিমি।
8. বুধের নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ৪৮২৮ কিমি।
9. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে বুধের কত সময় লাগে?
উঃ ৫৮ দিন ১৭ ঘণ্টা।
10. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে বুধের কত সময় লাগে?
উঃ ৮৮ দিন।
11. পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ কোনটি?
উঃ শুক্র।
12. সূর্য থেকে শুক্রের গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ১০ কোটি ৭৮ লক্ষ কিমি।
13. শুক্রের নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ১২৭৫৭ কিমি।
14. সূর্য থেকে মঙ্গলের গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ২২ কোটি ৮০ লক্ষ কিমি।
15. মঙ্গলের নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ৬৭৯০ কিমি।
16. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে মঙ্গলের কত সময় লাগে?
উঃ ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট।
17. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে মঙ্গলের কত সময় লাগে?
উঃ ৬৮৭ দিন।
18. মঙ্গলের কটি উপগ্রহ? কী কী?
উঃ দুটি উপগ্রহ। ফোবোস ও ডাইমোস।
19. সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ কোনটি?
উঃ বৃহস্পতি।
20. সূর্য থেকে বৃহস্পতির গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ৭৭ কোটি ৯১ লক্ষ কিমি।
21. বৃহস্পতির নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৪৫ কিমি।
22. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে বৃহস্পতির কত সময় লাগে?
উঃ ৯ ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
23. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে বৃহস্পতির কত সময় লাগে?
উঃ ১২ বছর ।
24. বৃহস্পতির কটি উপগ্রহ আছে?
উঃ ১৬ টি।
25. বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম কী?
উঃ গ্যানিমিড।
26. সূর্য থেকে শনির গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ১৪২ কোটি ৬০ লক্ষ কিমি।
27. শনির নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ৮৫৮ কিমি।
28. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে শনির কত সময় লাগে?
উঃ ১০ ঘণ্টা ১৪ মিনিট।
29. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে শনির কত সময় লাগে?
উঃ ২৯ বছর ৬ মাস।
30. শনির কটি উপগ্রহ আছে?
উঃ ১৮ টি।
31. শনির সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম কী?
উঃ টাইটান।
32. সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম কী?
উঃ টাইটান।
33. সূর্য থেকে ইউরেনাসের গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ২৮৭ কোটি কিমি।
34. ইউরেনাসের নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ৪৯ হাজার ১৫২ কিমি।
35. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে ইউরেনাসের কত সময় লাগে?
উঃ ১০ ঘণ্টা ৪২ মিনিট।
36. সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে ইউরেনাসের কত সময় লাগে?
উঃ ৮৪ বছর ১ মাস।
37. ইউরেনাসের কটি উপগ্রহ আছে?
উঃ ১৫ টি।
38. সূর্য থেকে নেপচুনের গড় দূরত্ব কত?
উঃ প্রায় ৪৪৯ কোটি ৩০ লক্ষ কিমি।
39. নেপচুনের নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ ৪৪ হাজার ৮০০ কিমি।
40. নিজের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে নেপচুনের কত সময় লাগে?
উঃ ১৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।
41. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে নেপচুনের কত সময় লাগে?
উঃ ১৬৫ বছর।
42. নেপচুনের কটি উপগ্রহ আছে?
উঃ ৮টি।
43. সূর্য থেকে প্লুটোর গড় দুরত্ব কত?
উঃ প্রায় ৫৮৯ কোটি ৮০ লক্ষ কিমি।
44. প্লুটোর নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ৬৪০০ কিমি।
45. নিজের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে প্লুটোর কত সময় লাগে?
উঃ ৬ দিন।
46. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে প্লুটোর কত সময় লাগে?
উঃ ২৪৮ বছর।
47. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে শুক্রের কত সময় লাগে?
উঃ ২৪৩ দিন।
48. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে শুক্রের কত সময় লাগে?
উঃ ২২৪ দিন।
49. ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল কত?
উঃ ৫১ কোটি ৬৬ হাজার বর্গ কিমি।
50. কলকাতায় পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ কত?
উঃ ১৫৩৬ কিমি (ঘণ্টায়)।
51. সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে পৃথিবী কততম গ্রহ?
উঃ তৃতীয় গ্রহ।
52. আয়তন অনুসারে সূর্য পৃথিবীর কত নং গ্রহ?
উঃ পঞ্চম গ্রহ। (প্রথম –বৃহস্পতি, দ্বিতীয় – শনি, তৃতীয় – ইউরেনাস, চতুর্থ নেপচুন)।
53. পৃথিবীর গড় পরিধি কত?
উঃ প্রায় ৪০০০০ কিমি।
54. ইরাসথেনিসের মতে পৃথিবীর পরিধি কত?
উঃ ৪৬ হাজার ২৫০ কিমি।
55. পৃথিবীর ওজন কত?
উঃ প্রায় ৫৯৭৬ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মেট্রিক টন ।
56. পৃথিবীর কটি গতি? কী কী?
উঃ দুটি গতি। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি।
57. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে একবার আবর্তন করতে পৃথিবীর কত সময় লাগে?
উঃ ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ২ সেকেণ্ড।
58. সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর কত সময় লাগে?
উঃ ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ড।
59. পৃথিবীর উপগ্রহের নাম কী?
উঃ চাঁদ।
60. চাঁদের ব্যাস কত?
উঃ প্রায় ৩৪৭৬ কিমি।
61. পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব কত?
উঃ প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিমি।
62. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে চাঁদের একবার ঘুরতে কত সময় লাগে?
উঃ ২৭.৩ দিন।
63. পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব কত?
উঃ প্রায় ১৫ কোটি কিমি।
64. সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কত সময় লাগে?
উঃ ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
65. আলোর গতিবেগ কত?
উঃ সেকেণ্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিমি (১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল)।
66. প্রথম মহাকাশযানের নাম কী? সেটি কবে মহাকাশে যাত্রা করে?
উঃ স্পুৎনিক। ১৯৫৭ সালের ৪ ঠা অক্টোবর।
67. প্রথম মহাকাশচারীর নাম কী? তিনি কবে কোন মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে?
উঃ ইউরী গ্যাগারিন। ১৯৬১ সালের ১২ ই এপ্রিল ভস্টক-১ নামে মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে।
68. মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে?
উঃ উজ্জ্বল নীল গোলক বলে মনে হয়।
69. পৃথিবীর মেরুব্যাস কত?
উঃ ১২৭১৪ কিমি।
70. পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
উঃ ১২৭৫৭ কিমি।
71. পৃথিবীর মেরুব্যাস ও নিরক্ষীয় ব্যাসের মধ্যে পার্থক্য কত?
উঃ ৪৩ কিমি।
72. পৃথিবীর গড় ব্যাস কত?
উঃ ১২৭৩৫ কিমি।
73. পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ কত?
উঃ ৬৩৬৮ কিমি।
74. এরাটস্থনিস পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কত নির্ণয় করেছিলেন?
উঃ ৬৪০০ কিমি।
পৃথিবীর গতি
1. পৃথিবীর কটি গতি এবং কী কী?
উঃ দুটি গতি। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি।
2. কে প্রথম প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে?
উঃ কোপারনিকাস।
3. আহ্নিক গতি কাকে বলে?
উঃ সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে অবিরাম ঘুরে চলেছে। নিজের অক্ষকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই ধরণের ঘূর্ণনকে বলে আবর্তন গতি।
4. বার্ষিক গতি কাকে বলে?
উঃ পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে অবিরাম আবর্তন করতে করতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ ধরে অনবরত সূর্যকে প্রদক্ষিণ বা পরিক্রমা করে। সূর্যকেন্দ্রিক এই ধরণের গতিকে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি বলে।
5. সৌরদিন ও নাক্ষত্রদিন কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর একবার সম্পূর্ণভাবে আবর্তন করতে সময় লাগে সূর্যের হিসাবে ২৪ ঘণ্টা, কিন্তু নক্ষত্রের হিসাবে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেণ্ড। এজন্য ২৪ ঘণ্টাতে একটি সৌরদিন এবং এর থেকে ৩ মিনিট ৩৬ সেকেণ্ড কম সময়ে একটি নাক্ষত্রদিন ধরা হয়।
6. আবর্তন বা আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে কী কী পরিবর্তন হয়?
উঃ দিন-রাত্রি হয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়, সময় নির্ধারণ করা যায়, নিয়ত বায়ুপ্রবাহের ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ হয়, জোয়ার ভাঁটা হয়, উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি হয়েছে।
7. ফেরেলের সূত্র কী?
উঃ পৃথিবীর আবর্তনের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে-কোন গতিশীল পদার্থের উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে গতিবিক্ষেপ হয় বা বেঁকে যায়। এই সূত্রটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ফেরেল। তাই ফেরেলের নাম অনুসারে সুত্রটিকে ফেরেলের সূত্র বলা হয়।
8. বার্ষিক গতির ফলে ভু-পৃষ্ঠে কী কী পরিবর্তন হয়?
উঃ বছর বা সময়কাল নির্ধারণ করা যায়, দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, ঋতু পরিবর্তন হয়।
9. মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা কী?
উঃ মেরু অঞ্চলে যখন একটানা ৬ মাস রাত্রি থাকে তখন ওখাঙ্কার রাতের আকাশে মাঝে মাঝে রামধনুর মত এক অপূর্ব সুন্দর আলোর জ্যোতি দেখা যায়। একেই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে।
10. পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ১। আহ্নিক গতিতে পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরে।
বার্ষিক গতিতে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করে।
২। একবার আবর্তন করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা।
আর একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণে সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা।
৩। আবর্তন গতির জন্য ভূ-পৃষ্ঠে দিন-রাত্রি হয়।
আর পরিক্রমণ গতির ফলে পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তন ঘটে।
৪। আবর্তন গতির জন্য ভূ-পৃষ্ঠের ওপর যেকোন চলমান বস্তুর গতিবিক্ষেপ ঘটে।
আর পরিক্রমণ গতির জন্য ভূ-পৃষ্ঠে দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।
11. পৃথিবীর মেরুদণ্ড বা অক্ষরেখা কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর উত্তর মেরু বা সুমেরু এবং দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যুক্ত করা হয়, তাকে অক্ষরেখা বা মেরুদণ্ড বলে।
12. পৃথিবীর কোন গতির জন্য ভূ-পৃষ্ঠে দিন-রাত্রি হয়?
উঃ আহ্নিক গতির জন্য।
13. আবর্তনের সময় পৃথিবী কোন দিক থেকে কোন দিকে ঘোরে?
উঃ পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে।
14. পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ কাকে বলে?
উঃ যে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ ধরে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সেই পথটিকে বলে পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ।
15. আবর্তন গতির অপর নাম কী?
উঃ আহ্নিক গতি।
16. পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির অপর নাম কী?
উঃ বার্ষিক গতি।
17. ‘অহ্ন’ কথাটির অর্থ কী?
উঃ দিন।
18. নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে সম্পূর্ণ আবর্তন করতে পৃথিবীর কত সময় লাগে?
উঃ ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেণ্ড অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা।
19. নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর গতিবেগ কত?
উঃ ১৬৩০ কিমি।েম্বর দিনটিকে বলে জলবিষুব।
20. ৬০ ডিগ্রী উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে পৃথিবীর গতিবেগ কত?
উঃ ৯৯০ কিমি (ঘণ্টায়)।
21. কোথায় পৃথিবীর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি?
উঃ নিরক্ষরেখায়।
22. সূর্য পৃথিবীর তুলনায় কত গুণ বড়ো?
উঃ ১৩ লক্ষ গুণ বড়ো।
23. ছায়াবৃত্ত কী?
উঃ ভূপৃষ্ঠের আলোকিত অর্ধাংশ এবং অন্ধকার অর্ধাংশের সীমারেখাকে বলে ছায়াবৃত্ত।
24. সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর একবার ঘুরে আসতে কত সময় লাগে?
উঃ ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ড।মহাবৃত্ত বলে।
25. সৌরবছর কাকে বলে?
উঃ সূর্যের চারিদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেণ্ড। এই সময়কালকে বলে সৌরবছর।
26. কক্ষপথের আকৃতি কেমন?
উঃ উপবৃত্তাকার।
27. কক্ষপথের পরিধি কত?
উঃ ৯৬ কিমি।
28. অপসূর অবস্থান কী?
উঃ ৪ ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি। কক্ষপথের এই অবস্থানের নাম পৃথিবীর অপসূর অবস্থান।
29. অনুসূর অবস্থান কী?
উঃ ৩রা জানুয়ারি সুর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম থাকে প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি। কক্ষপথের এই অবস্থানের নাম পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান।
30. সূর্যকে পরিক্রমণ করার সময় পৃথিবী নিজের কক্ষতলের সঙ্গে কত ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে?
উঃ ৬৬.৫ (সাড়ে ৬৬) ডিগ্রী কোণে হেলে থাকে।
31. মহাবিষুব ও জলবিষুব কী?
উঃ ২১ শে মার্চ ও ২৩ শে সেপ্টেম্বর সুর্য ঠিক পূর্বদিকে ওঠে এবং ঠিক পশ্চিমদিকে অস্ত যায়। বছরে মাত্র এই দুটি দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। ২১ শে মার্চ দিনটিকে উত্তর গোলার্ধে মহাবিষুব বলে। আর ২৩ শে সেপ্টেম্বর দিনটিকে বলে জলবিষুব।
32. উত্তরগোলার্ধে কোন দিনটি কর্কটসংক্রান্তি?
উঃ ২১ শে জুন।
33. উত্তরগোলার্ধে কোন দিনটি মকরসংক্রান্তি?
উঃ ২২ শে ডিসেম্বর।
34. নিশীথ সূর্যের দেশ কাকে বলে?
উঃ নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দরকে।
35. নিরক্ষরেখা কাকে বলে?
উঃ সুমেরু বিন্দু ও কুমেরু বিন্দু থেকে সমান দূরে পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে যে কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখাটি পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে, তাকে নিরক্ষরেখা বলে।
36. নিরক্ষরেখার মান কত?
উঃ ০ (শূন্য) ডিগ্রী।
37. কাকে কেন মহাবৃত্ত বলা হয়?
উঃ নিরক্ষরেখার কেন্দ্র এবং পৃথিবীর কেন্দ্র একই বিন্দু, ফলে রেখাটির কোণের মান শূন্য (০) ডিগ্রী। এজন্য রেখাটির নাম নিরক্ষরেখা। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুটি সমান গোলার্ধে ভাগ করে। এজন্য একমাত্র নিরক্ষরেখাকে মহাবৃত্ত বলে।
38. অক্ষাংশ কাকে বলে?
উঃ ভূ-পৃষ্ঠের কোনো জায়গা থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত একটি সোজা রেখা বা ব্যাসার্ধ টানলে ঐ রেখা নিরক্ষীয় তলের সঙ্গে যে কোণ তৈরি করে সেই কোণই হল সেই জায়গার অক্ষাংশ।
39. কলকাতার অক্ষাংশ কত?
উঃ ২২ ডিগ্রী ৩০ মিনিট উত্তর।
40. অক্ষরেখা কাকে বলে?
উঃ নিরক্ষরেখার উভয়দিকে ভূ-পৃষ্ঠকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে থাকা সম-অক্ষাংশযুক্ত কাল্পনিক রেখাগুলিকে বলে অক্ষরেখা বা সমাক্ষরেখা।
41. প্রতিটি অক্ষরেখার কোণের সমষ্টি কত?
উঃ ৩৬০ ডিগ্রী।
42. কর্কটক্রান্তি রেখা কী?
উঃ নিরক্ষরেখার উত্তরে ২৩ (সাড়ে ২৩) ডিগ্রী কৌণিক দুরত্বে অঙ্কিত কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখাটিকে বলে কর্কটক্রান্তি রেখা বলে।
43. মকরক্রান্তি রেখা কী?
উঃ নিরক্ষরেখার দক্ষিণে ২৩.৫ (সাড়ে ২৩) ডিগ্রী কৌণিক দূরত্বে অঙ্কিত বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখাটির নাম মরকক্রান্তি রেখা।
44. সুমেরু বৃত্ত কী?
উঃ নিরক্ষরেখার উত্তরে ৬৬.৫ (সাড়ে ৬৬) ডিগ্রী কৌণিক দূরত্ব অঙ্কিত কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখাটির নাম সুমেরুবৃত্ত।
45. কুমেরু বৃত্ত কী?
উঃ নিরক্ষরেখার দক্ষিণ ৬৬.৫ (সাড়ে ৬৬) ডিগ্রী কৌণিক দূরত্ব অঙ্কিত কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখাটির নাম সুমেরুবৃত্ত।
46. মূল মধ্যরেখা কোন শহরের উপর দিয়ে টানা হয়েছে?
উঃ গ্রীনিচ শহরের রয়াল অবসার্ভেটরী-র উপর দিয়ে।
47. মূলমধ্যরেখার মান কত?
উঃ শূন্য (০) ডিগ্রী।
48. দ্রাঘিমা বা দ্রাঘিমাংশ কাকে বলে?
উঃ মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্বদিকে বা পশ্চিমদিকে অবস্থিত কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের দ্রাঘিমা বা দ্রাঘিমাংশ বলে।
49. দ্রাঘিমারেখা কাকে বলে?
উঃ সুমেরু বিন্দু থেকে কুমেরু বিন্দু পর্যন্ত ভু-পৃষ্ঠের ওপর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত অর্ধ-বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখাগুলিকে দ্রাঘিমারেখা বলে।
50. দ্রাঘিমারেখাকে দেশান্তর রেখা বলা হয় কেন?
উঃ দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে পূর্বে বা পশ্চিমে কোন দেশের অবস্থান নির্ণয় করা হয় বলে দ্রাঘিমারেখাকে দেশান্তর রেখাও বলে।
51. প্রত্যেকটি দ্রাঘিমার কোণের সমষ্টি কত?
উঃ ১৮০ ডিগ্রী।
52. কলকাতার দ্রাঘিমা কত?
উঃ ৮৮ ডিগ্রী ৩০ মিনিট পূর্ব।
53. ১ ডিগ্রী দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য কত হয়?
উঃ ৪ মিনিট।
54. গ্রীনিচের দ্রাঘিমা কত?
উঃ শূন্য (০) ডিগ্রী।
55. ভারতের প্রামাণ্য দ্রাঘিমা কত?
উঃ ৮২ ডিগ্রী ৩০ মিনিট।
56. আন্তর্জাতিক তারিখরেখার মান কত?
উঃ ১৮০ ডিগ্রী।
57. নিরক্ষরেখায় ১ ডিগ্রী অন্তর দুটি দ্রাঘিমারেখার রৈখিক ব্যবধান কত?
উঃ ১১৩•৩ কিমি।
58. মেরুপ্রদেশের কাছাকাছি স্থানসমূহের অক্ষাংশকে কী বলে?
উঃ উচ্চ অক্ষাংশ।
59. প্রতিটি অক্ষরেখার কোণের সমষ্টি কত?
উঃ ৩৬০ ডিগ্রী।
60. মূল মধ্যরেখার দ্রাঘিমার মান কত?
উঃ শূন্য (০) ডিগ্রী।
61. গ্রীনিচ শহরের ওপর দিয়ে বিস্তৃত দ্রাঘিমারেখার নাম কী?
উঃ মূল মধ্যরেখা।
62. অক্ষরেখার আর এক নাম কী?
উঃ সমাক্ষরেখা।
63. সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ও সর্বোচ্চ অক্ষাংশ কত?
উঃ সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ১৮০ ডিগ্রী এবং সর্বোচ্চ অক্ষাংশ ৯০ ডিগ্রী।
64. কোন রেখাগুলি পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেস্টন করে আছে?
উঃ অক্ষরেখাগুলি।
65. শূন্য (০) ডিগ্রী দ্রাঘিমারেখাটির নাম কী?
উঃ মূল মধ্যরেখা।
66. কোন জায়গার স্থানীয় সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় ধরা হয়?
উঃ এলাহাবাদের।
67. কলকাতা ও এলাহাবাদের স্থানীয় সময়ের পার্থক্য কত?
উঃ ২৪ মিনিট।
68. কোন স্থানের অক্ষাংশ ৩০ ডিগ্রী দক্ষিণ হলে ঐ স্থানের প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ কত?
উঃ ৩০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ।
69. ক্রনোমিটার কী?
উঃ বিশেষ ধরণের ঘড়ি। এই ঘড়ির মাধ্যমে গ্রীনিচের সময় জানা যায়।
70. কলকাতার প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা কত?
উঃ ৯১ ডিগ্রী ৩০ মিনিট পশ্চিম ।
71. কোন সমাক্ষরেখাকে মহাবৃত্ত বলে?
উঃ নিরক্ষরেখাকে।
72. কোন স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য কত?
উঃ ১২ ঘণ্টা।
73. উত্তর গোলার্ধের কোন স্থানে ধ্রুবতারার উন্নতি ৯০ ডিগ্রী ?
উঃ উত্তর গোলার্ধের সুমেরুতে।
74. কর্কটক্রান্তি রেখা ও সুমেরুবৃত্তের অক্ষাংশ কত?
উঃ কর্কটক্রান্তি রেখার অক্ষাংশ ২৩.৫ ডিগ্রী (সাড়ে ২৩ ডিগ্রী) উত্তর এবং সুমেরু বৃত্তের অক্ষাংশ ৬৬.৫ ডিগ্রী (সাড়ে ৬৬ ডিগ্রী) উত্তর।
75. ভারতের প্রমাণ সময় নির্ণয়ের জন্য কোন দ্রাঘিমা নির্ধারিত হয়েছে?
উঃ ৮২ ডিগ্রী ৩০ মিনিট পূর্ব।
76. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কাকে বলে?
উঃ আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হল এমন একটি কাল্পনিক রেখা, যে রেখাটি মোটামুটিভাবে ১৮০ ডিগ্রী দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যে রেখাটিকে সাধারণভাবে পৃথিবীর বার ও তারিখের শুরু ও শেষ হিসাবে ধরা হয়।
77. গ্রীনিচ সময় যন্ত্রের নাম কী?
উঃ ক্রনোমিটার।
78. কোন প্রণালীর মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কল্পনা করা হয়েছে?
উঃ বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে।
শিলা
1. শিলা কাকে বলে?
উঃ ভূ-ত্বক যেসব উপাদানে গঠিত সেগুলিকে সাধারণভাবে শিলা বলে।
2. উৎপত্তি অনুসারে শিলাকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়? কী কী?
উঃ তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা।
3. ভূত্বকের কটি স্তর কী কী?
উঃ দুটি স্তর। সিয়াল ও সিমা।
4. কোন শিলা পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হয়?
উঃ আগ্নেয় শিলা।
5. আগ্নেয় শিলা কাকে বলে?
উঃ ভূত্বকে উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়েছে তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন- গ্রানাইট, ব্যাসল্ট।
6. কোন শিলাকে অস্তরীভূত শিলা বলা হয় এবং কেন?
উঃ আগ্নেয় শিলাকে। আগ্নেয় শিলার মধ্যে কোনো স্তরভাগ বা স্তরবিন্যাস থাকে না বলে একে অস্তরীভূত শিলা বলে।
7. আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উঃ ১। আগ্নেয় শিলার উপাদানগুলি পরস্পরের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে।
২। বিশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনের কেলাস নিয়ে এই শিলা গঠিত হয়।
৩। এই শিলা খুব কঠিন, ভারী হয় এবং সহজে এর ক্ষয় হয় না।
৪। অনেক সময় স্বচ্ছ বা স্ফটিকাকার হয়।
৫। এই শিলার স্তর থাকে না।
৬। এতে কোনো জীবাশ্ম থাকে না।
8. উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ করো।
উঃ উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলাকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নিঃসারী শিলা ও উদ্বেধী শিলা।
নিঃসারী শিলা আবার দু-প্রকার। যথা- লাভা শিলা (ব্যাসল্ট) ও পাইরোক্ল্যাস্টিক শিলা (টাফ)।
উদ্বেধী শিলা দু-প্রকার। যথা- পাতালিক (গ্রানাইট) ও উপপাতালিক শিলা (পরফাইরি)।
9. নিঃসারী শিলা কাকে বলে?
উঃ গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা আগ্নেয়গিরি বা ভূ-ত্বকের ফাটল দিয়ে বেরিয়ে এসে গলন্ত লাভারূপে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবাহিত হয় এবং বাতাস লেগে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে তাকে নিঃসারী শিলা বলে। যেমন- ব্যাসল্ট, রায়োলাইট, অ্যাণ্ডেসাইট।
10. উদ্বেধী শিলা কাকে বলে?
উঃ অনেক সময় ভূ-গর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে না পেরে ভূ-গর্ভের ভিতরেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়, এই ধরণের শিলাকে উদ্বেধী শিলা বলে। যেমন- গ্রানাইট, গ্যাব্রো।
11. পাতালিক শিলা কাকে বলে?
উঃ ম্যাগমা যখন ভূ-গর্ভের অনেক নীচে দীর্ঘকাল ধরে খুব ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়, তখন তাকে পাতালিক শিলা বলে। যেমন- গ্রানাইট, গ্যাব্রো, পেরিডোটাইট।
12. উপপাতালিক শিলা কাকে বলে?
উঃ ভূ-গর্ভের খুব নীচে নয়, ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় কাছাকাছি কোনো ফাটলের মধ্যে ম্যাগমা বা উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে উপপাতালিক শিলা। যেমন- ডোলেরাইট, পরফাইরি।
13. আগ্নেয় শিলার অপর নাম কী?
উঃ প্রাথমিক শিলা।
14. নিঃসারী লাভা শিলার তিনটি উদাহরণ দাও
উঃ ব্যাসাল্ট, রায়োলাইট, অ্যাণ্ডিসাইট।
15. পাইরোক্লাস্টিক লাভা শিলার একটি উদাহরণ দাও?
উঃ টাফ।
16. পাতালিক শিলার চারটি উদাহরণ দাও?
উঃ গ্রানাইট, গ্যাব্রো, ডায়োরাইট, পেরিডোটাইট।
17. উপপাতালিক শিলার তিনটি উদাহরণ দাও?
উঃ গ্রানোপার, পরফাইরি, ডলোরাইট।
18. উদাহরণসহ রাসায়নিক গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ কর?
উঃ ক। অম্লধর্মী শিলা – রায়োলাইট, গ্রানোপার, গ্রানাইট।
খ। মধ্যবর্তী শিলা – অ্যান্ডিসাইট, পরফাইরি, ডায়োরাইট।
গ। ক্ষারকীয় শিলা – ব্যাসাল্ট, ডলোরাইট, পেরিডোটাইট।
ঘ। অতিক্ষারকীয় শিলা – অবসিনিয়াম।
19. মহারাষ্ট্রের মালভূমি বা ডেকানট্র্যাপ অঞ্চল কোন শিলায় গঠিত?
উঃ ব্যাসাল্ট শিলায়।
20. ছোটনাগপুরের মালভূমিতে কোন শিলা দেখা যায়?
উঃ গ্রানাইট শিলা।
21. পাললিক শিলা কাকে বলে?
উঃ সাগর, মহাসাগর বা হ্রদের তলদেশে দীর্ঘকাল ধরে বিপুল পরিমাণে পলি সঞ্চিত হলে নীচের পলিস্তরগুলি ধীরে ধীরে উপরের ভারী জলভাগ ও পলিরাশির চাপে এবং নীচের তাপে জমাট বেঁধে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। পলি জমাট বেঁধে এই শিলা সৃষ্টি হয় বলে এর নাম পাললিক শিলা। যেমন- বেলেপাথর, চুনাপাথর।
22. কাকে স্তরীভূত শিলা বলা হয় এবং কেন?
উঃ পাললিক শিলাকে। সাগর, মহাসাগরের তলদেশে স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় বলে এর আর এক নাম স্তরীভূত শিলা।
23. জীবাশ্ম কাকে বলে?
উঃ অনেক সময় পাথরের মধ্যে উদ্ভিদ বা প্রাণির দেহ প্রোথিত হয়ে ধীরে ধীরে প্রস্তরীভূত হয় এবং পাথরের মধ্যে তার ছাপ থেকে যায়। এইভাবে উদ্ভিদ বা প্রাণির দেহ পাথরে পরিণত হলে তাকে জীবাশ্ম বলে।
24. পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উঃ ১। বিভিন্ন জাতীয় পলি সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় বলে এই শিলার স্তরগুলি স্পষ্ট থাকে।
২। প্রচণ্ড চাপের জন্য স্তরায়ণ তলের সঙ্গে সমকোণে বা বিভিন্ন কোণে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এর নাম সন্ধিস্থল।
৩। অন্যান্য শিলার তুলনায় নরম ও হালকা।
৪। এই শিলা কেলাসিত হয় না।
৫। এই শিলায় জীবাশ্ম থাকে।
৬। সচ্ছিদ্রতা এই শিলার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
৭। অধিকাংশ পাললিক শিলা দ্রুত ক্ষয় হয়।
৮। জৈব উপাদানে গঠিত হয় বলে একমাত্র এই শিলায় কয়লা, খনিজতেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চিত থাকে।
25. কোন শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায়?
উঃ পাললিক শিলায়।
26. উদাহরণসহ যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ ক। শিলাখণ্ডময় – ব্রকাসিয়া, কংগ্লোমারেট, বোল্ডার।
খ। বালুকাময় – বেলেপাথর, গ্রিট।
গ। মৃন্ময় – কাদাপাথর, শেল
27. উদাহরণসহ রাসায়নিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ ক। কার্বনেট – ডলোমাইট
খ। সালফেট – জিপসাম
গ। ক্লোরাইড – খনিজলবণ
ঘ। সিলিকেট – ফ্লিন্ট চার্ট
ঙ। লৌহপ্রস্তর – লিমোনাইট, সিডেরাইট।
28. উদাহরণসহ জৈব উপায়ে গঠিত পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ ক। চুনময় – চক ও চুনাপাথর
খ। অঙ্গারময় – লিগনাইট, পিট
গ। বালুকাময় – ডায়াটম
ঘ। লৌহময় - লৌহপ্রস্তর
29. উদাহরণসহ পলির উৎপত্তি অনুসারে গঠিত পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ ক। সংঘাত শিলা – বেলেপাথর, কাদাপাথর, পলিপাথর
খ। অসংঘাত শিলা – ডলোমাইত, ক্যালসাইট, জিপসাম, সৈন্ধবলবণ, চক, চুনাপাথর।
30. সংঘাত শিলা কাকে বলে?
উঃ আদি শিলা বা প্রাথমিক শিলা সংঘাতের ফলে ক্রমশ ভগ্ন বা চূর্ণ-বিচূর্ণ পলিতে পরিণত হয় এবং ওই পলি থেকে যে পাললিক শিলা উৎপন্ন হয় তার নাম সংঘাত শিলা। যেমন- বেলেপাথর, কাদাপাথর।
31. অসংঘাত শিলা কাকে বলে?
উঃ কিছু কিছু পাললিক শিলা সংঘাতের মাধ্যমে উৎপন্ন না হয়ে রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি হয়, এদের বলে অসংঘাত শিলা। যেমন- চুনাপাথর, ডলোমাইট।
32. কয়েকটি রূপান্তরিত শিলার উদাহরণ দাও?
উঃ গ্রানাইট থেকে নিস,
বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট,
চুনাপাথর থেকে অ্যাম্ফিবোলাইট,
কয়লা থেকে শ্লেট,
নিস থেকে ফিলাইট এবং ফিলাইট থেকে শিস্ট,
ডলোমাইট থেকে মার্বেল।
33. গ্রানাইট শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ ফেল্ডস্পার, অভ্র, কোয়ার্টজ।
34. ব্যাসাল্ট শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ ফেল্ডসপার, পাইরোক্সিন, মাগনেটাইট।
35. ডায়োরাইট শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ ফেল্ডসপার, পাইরোক্সিন, হর্নব্লেন্ড।
36. পেগমাটাইট শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ কোয়ার্টজ, অভ্র, টুরমেলিন।
37. বেলেপাথর শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ কোয়ার্টজ, ক্যালসাইট, ডলোমাইট।
38. চুনাপাথর শিলায় কোন কোন খনিজদ্রব্য পাওয়া যায়?
উঃ ক্যালসাইট, ডলোমাইট, কোয়ার্টজ।
39. কোন শিলায় স্তর থাকে না?
উঃ অগ্নেয় শিলায়।
40. দুটি আগ্নেয় শিলার উদাহরণ দাও?
উঃ গ্রানাইট ও ব্যাসাল্ট।
41. দুটি পাললিক শিলার উদাহরণ দাও?
উঃ বেলেপাথর ও চুনাপাথর।
42. রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?
উঃ অনেক সময় ভূ-ত্বকের প্রচণ্ড চাপ ও তাপের জন্য বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা আগেকার চেয়ে আরও কঠিন ও কেলাসিত হয়ে নতুন আর এক ধরণের শিলায় পরিণত হয়। পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন- নিস, মার্বেলপাথর, শ্লেট।
43. দুটি রূপান্তিরিত শিলার উদাহরণ দাও?
উঃ গ্রানাইট থেকে নিস,
বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট।
44. কোন শিলার অপর নাম প্রাথমিক শিলা?
উঃ আগ্নেয় শিলার।
45. কোন শিলাকে স্তরীভূত শিলা বলা হয়?
উঃ পাললিক শিলাকে।
46. ভারতে কোথায় প্রচুর পরিমাণে গ্রানাইট শিলা দেখতে পাওয়া যায়?
উঃ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা এবং বিহারের ছোটনাগপুর মালভূমিতে।
47. স্তরায়ন কাকে বলে?
উঃ পাললিক শিলায় একটি স্তর অপর একটি স্তরের সঙ্গে যে তল দ্বারা যুক্ত থেকে তাকে স্তরায়ন বলে।
48. জৈব শিলা কাকে বলে?
উঃ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ বা জীবাশ্ম থেকে যে শিলা উৎপন্ন হয় তাকে জৈব শিলা বলে। যেমন – কয়লা, চুনাপাথর।
49. কোন শিলায় কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি সঞ্চিত থাকে?
উঃ পাললিক শিলায়।
50. ডলেরাইট শিলা ভারতের কোথায় বেশি পাওয়া যায়?
উঃ ভারতের সিংভূম এলাকা ও দক্ষিণ ভারতের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়।
51. কী কী প্রক্রিয়ায় শিলা রূপান্তরিত হয়?
উঃ চাপ, তাপ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার প্রভাবে।
52. গ্রানাইট শিলা-গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ কীরূপ হয়?
উঃ গোলাকার।
53. ব্যাসাল্ট শিলা-গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ কীরূপ হয়?
উঃ চ্যাপ্টা প্রকৃতির।
54. মার্বেল কোন শিলার পরিবর্তিত রূপ?
উঃ চুনাপাথরের।
55. সিস্ট কীভাবে গঠিত হয়?
উঃ পাললিক শিলা কাদাপাথর বা শেল –এ রূপান্তরিত হলে স্লেট, স্লেট রূপান্তরিত হলে ফিলাইট এবং ফিলাইট রূপান্তরিত হলে সিস্ট গঠিত হয়।
56. স্থানীয় রূপান্তর কাকে বলে?
উঃ ভূ-গর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার সংস্পর্শে খুব অল্প পরিসর স্থানে শিলার রুপান্তর ঘটলে তাকে স্থানীয় রূপান্তর বলা হয়।
57. ড্রেকান ট্র্যাপ এবং রাজমহল পাহাড় কোন শিলায় গঠিত?
উঃ ব্যাসাল্ট শিলায়।
58. একটি নিঃসারী আগ্নেয় শিলার উদাহরণ দাও?
উঃ ব্যাসল্ট।
59. সচ্ছিদ্রতা কোন শিলার বৈশিষ্ট্য?
উঃ পাললিক শিলার।
60. সন্ধিস্থল কী?
উঃ পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে প্রচণ্ড চাপের ফলে স্তরায়ণ তলের সঙ্গে সমকষে বা বিভিন্ন কোণে ফাটল সৃষ্টি হয়। এর নাম সন্ধিস্থল।
61. কয়লা কী ধরণের শিলা?
উঃ পাললিক শিলা।
62. কোন শিলা-গঠিত পাহাড়ের মাথা গোলাকার হয়?
উঃ গ্রানাইট শিলা।
63. আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম থাকে না কেন?
উঃ গলিত আগ্নেয় পদার্থসমূহ জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম থাকে না।
64. কোয়ার্টজাইট কোন শিলার পরিবর্তিত রূপ?
উঃ বেলেপাথরের।
65. অস্তরীভূত শিলা কাকে বলে?
উঃ যে শিলার মধ্যে কোন স্তরভাগ বা স্তরবিন্যাস থাকে না, তাকে অস্তরীভূত শিলা বলে। যেমন - আগ্নেয় শিলা।
66. অ্যাম্ফিবোলাইট কোন শিলার পরিবর্তিত রূপ?
উঃ ব্যাসল্ট শিলার।
67. কয়লা, শিলা না খনিজ?
উঃ কয়লা একটি শিলা। এটি জৈব শিলা যা পাললিক শিলার অন্তর্গত।
68. গ্রাফাইট কোন শিলার রূপান্তর?
উঃ কয়লা একটি পাললিক শিলা। কয়লা রূপান্তরিত হয়ে গ্রাফাইট সৃষ্টি করে।
69. কংগ্লোমারেট কোন জাতীয় শিলার পর্যায়ে পড়ে?
উঃ পাললিক শিলার।
70. হর্নব্লেন্ড কী জাতীয় শিলা?
উঃ রূপান্তরিত শিলা। আগ্নেয় শিলা অগাইট রূপান্তরিত হলে হর্নব্লেন্ড সৃষ্টি হয়।
পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি
1. ভূ-প্রকৃতিকে ক’টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ তিনটি শ্রেণিতে। পাহাড় ও পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি।
2. পাহাড় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ অল্প উচ্চ (৩০০ থেকে ১০০০ মিটার) এবং অল্পদূর বিস্তৃত শিলাস্তূপকে বলে পাহাড়। যেমন - অযোধ্যা, বাগমুণ্ডি, শুশুনিয়া, রাজমহল পাহাড়।
3. পর্বত কাকে বলে?
উঃ সুউচ্চ শৃঙ্গ বিশিষ্ট, অসমান এবং সুদূর বিস্তৃত শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। যেমন হিমালয়।
4. পর্বতকে ক’ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ চারভাগে। ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত, ক্ষয়জাত পর্বত, আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত।
5. ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে?
উঃ বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে শিলায় ঢেউ এর মত ভাঁজ পড়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে বলে ভঙ্গিল পর্বত।
6. ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ১। ভাঁজ পড়ে এই পর্বতের সৃষ্টি এবং এজন্য নানাধরণের অনেক ভাঁজ থাকে।
২। দুটি ভাঁজের মাঝে যে উঁচু অংশ থাকে তাকে বলে অধোভঙ্গ এবং ভাঁজের ওপরের উঁচু অংশকে বলে ঊর্ধ্বভঙ্গ।
৩। সমুদ্রগর্ভ থেকে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয় বলে পর্বতের বিভিন্ন অংশে অনেক জীবাশ্ম দেখা যায়।
৪। চাপ অত্যন্ত বেশি হলে এক বাহু থেকে একেবারে আলাদাহয়ে স্থানচ্যুত হয়। একে বলে ন্যাপ।
7. দুটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের নাম লেখ?
উঃ ভারতের আরাবল্লী ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান।
8. দুটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতের নাম লেখ।
উঃ এশিয়ার হিমালয় পর্বত এবং ইউরোপের আল্পস পর্বত।
9. রিকাম্ববেন্ট ফোল্ড কাকে বলে?
উঃ ভঙ্গিল পর্বতে ঊর্ধ্বভঙ্গের দুই বাহু ক্রমশ হেলতে হেলতে যদি একটি বাহু অপর একটি বাহুর ওপর শায়িত হয়, তখন তাকে বলে রিকাম্ববেণ্ট ফ্লোল্ড।
10. ওভারথ্রাস্ট কাকে বলে?
উঃ প্রচণ্ড চাপ এবং টানের ফলে যখন ঊর্ধ্বভঙ্গের (ভঙ্গিল পর্বতে) একটি বাহু অপর একটি বাহু থেকে আলাদা হয়ে কিছুটা এগিয়ে যায়, তখন তাকে বলে ওভারফ্রাস্ট।
11. ন্যাপ কী?
উঃ ভঙ্গিল পর্বত গঠনের সময় চাপ অত্যন্ত বেশি হলে ঊর্ধ্বভঙ্গের এক বাহু অন্য বাহু থেকে একেবারে আলাদা হয়ে স্থানচ্যুত হয়। একে ন্যাপ বলে।
12. প্রতিসম ও অপ্রতিসম ভাঁজ কী?
উঃ ভঙ্গিল পর্বতে ঊর্ধ্বভঙ্গের দু-দিকের বাহু যদি সমানভাবে হেলানো থাকে তবে তাকে প্রতিসম ভাঁজ বলে। আর যদি একদিকের বাহুর তুলনায় অন্যদিকের বাহু একটু বেশি খাড়া থাকে তখন তাকে বলে অপ্রতিসম ভাঁজ।
13. স্তূপ পর্বত কাকে বলে?
উঃ ভূ-আলোড়নজনিত টান ও সংনমনের প্রভাবে যখন ভূত্বকের শিলাস্তরে ফাটল ও চ্যুতি দেখা দেয় এবং তার ফলে চ্যুতির একদিকের শিলাস্তর স্তূপাকারে ওপরে উঠে পড়ে পর্বতের সৃষ্টি করে, তখন তাকে বলে স্তূপ পর্বত। যেমন – ভারতের সাতপুরা, ফ্রান্সের ভোজ।
14. স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ১। স্তূপ পর্বতের দুপাশের ঢাল বেশ খাড়া এবং মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা হয়।
২। ভঙ্গিল পর্বতের মত অত উঁচু হয় না বা অত সুবিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে স্তূপ পর্বত দেখা যায় না।
15. গ্রস্ত উপত্যকা কাকে বলে?
উঃ দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ উঁচু না হয়ে কোন কারণে নিচে বসে গেলে ঐ অবনত বা বসে যাওয়া অংশকে বলে গ্রস্ত উপত্যকা। যেমন –ফ্রান্সের ভোজ এবং জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট এই দুই স্তূপ পর্বতের মাঝখানে আছে গ্রাবেন জাতীয় গ্রস্ত উপত্যকা।
16. চ্যুতিরেখা ও চ্যুতিতল কী?
উঃ ভূ-ত্বকে যে রেখা বরাবর চ্যুতি ঘটে তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতি ঘটে তাকে চ্যুতিতল বলে।
17. গ্রাবেন কী?
উঃ যে গ্রস্ত উপত্যকার দু-পাশে স্তূপ পর্বত থাকে, তাকে গ্রাবেন জাতীয় গ্রস্ত উপত্যকা বলে।
18. জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট কী জাতীয় পর্বত?
উঃ স্তুপ পর্বত।
19. আগ্নেয় পর্বত কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা মাগমা কখনো কখনো ভূত্বকের কোনো গভীর ফাটল বা সুড়ঙ্গপথ ধরে ওপরে উঠে আসে এবং নির্গমন মুখের চারধারে স্তূপীকৃত হয়ে জমতে জমতে পর্বতের আকার ধারণ করে। এইভাবে আগ্নেয় পদার্থ সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্টি হয় বলে একে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে। যেমন- ভারতের ব্যারেন, নারকোণ্ডাম।
20. আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ১। আগ্নেয় পর্বত কিছুটা ত্রিভুজ বা শঙ্কুর মত।
২। এর চূড়ায় একটি মুখ থাকে, একে জ্বালামুখ বলে।
৩। বড় বড় আগ্নেয়গিরির একাধিক জ্বালামুখ থাকে। এর মধ্যে প্রথম যে মুখটি দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হয় তাকে প্রধান বা মুখ্য জ্বালামুখ এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য যেসব মুখ সৃষ্টি হয় সেগুলিকে অপ্রধান জ্বালামুখ বলে।
৪। জ্বালামুখ একটি নলাকৃতি পথের মাধ্যমে ভূ-গর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৫। আগ্নেয় পর্বতের চারপাশে যথেষ্ট খাড়া ঢাল থাকে।
৬। আগ্নেয় পর্বতের উচ্চতা মাঝারি ধরণের হয়।
21. আকৃতি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয় পর্বত কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ চারপ্রকার।
১। শঙ্কু বা মোচার মত আকৃতি।
২। গম্বুজের মত আকৃতি বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত।
৩। বিস্ফোরণ জ্বালামুখ-বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত।
৪। মিশ্র-শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয় পর্বত।
22. অগ্ন্যুৎপাতের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি অনুসারে আগ্নেয় পর্বত কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ তিন প্রকার।
১। জীবন্ত বা সক্রিয় আগ্নেয় পর্বত। যেমন – ইতালির ভিসুভিয়াস।
২। সুপ্ত আগ্নেয় পর্বত। যেমন – জাপানের ফুজিয়ামা।
৩। মৃত আগ্নেয় পর্বত। যেমন –মায়ানমারের পোপা।
23. জ্বালামুখ কী?
উঃ আগ্নেয় পর্বতের চূড়ায় একটি মুখ থাকে যার মধ্য দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হয়, তাকে জ্বালামুখ বলে।
24. প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা কী?
উঃ প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৫০০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। এই আগ্নেয়গিরিগুলি প্রশান্ত মহাসাগরকে যেন রিং বা বন্ধনীর মত ঘিরে আছে। প্রশান্ত মহাসাগরকে কিছুটা বন্ধনীর মত ঘিরে থাকা এই আগ্নেয়গিরি মণ্ডলটিকেই ভূতাত্ত্বিকগণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলে।
25. অগ্ন্যুৎপাতের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ ১। জীবন্ত আগ্নেয়গিরিঃ
ক। অবিরাম আগ্নেয়গিরি – হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালৌয়া, পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মাউণ্ট পিলি, ইতালির ভিসুভিয়াস।
খ। সবিরাম আগ্নেয়গিরি – ইতালির স্ট্রোম্বলি, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া, আলাস্কার মাউণ্ট ম্যাজমা, ভারতের ব্যারেন।
২। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি – জাপানের মাউণ্ট ফুজি (ফুজিয়ামা), মেক্সিকোর পারিকুতিন, আফ্রিকার মাউণ্ট কেনিয়া।
৩। মৃত আগ্নেয়গিরি – মায়ানমারের মাউন্ট পোপো, মেস্কিকোর কটোপাস্কি, চিম্বোরাজো, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নারকোণ্ডাম।
26. ভিসুভিয়াস কী জাতীয় পর্বত?
উঃ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।
27. ভারতের দুটি আগ্নেয় পর্বতের নাম লেখ।
উঃ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন এবং নারকোণ্ডাম।
28. হিমালয় পর্বতমালা কোন শ্রেণির পর্বত?
উঃ নবীন ভঙ্গিল পর্বত।
29. টেথিস সাগরের অবস্থান কোথায় ছিল?
উঃ বর্তমানে হিমালয় পর্বতশ্রেণী যে অঞ্চলে বিস্তৃত আছে, সেখানে একসময় টেথিস সাগর ছিল।
30. গিরিজনি আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি পর্বতের নাম লেখো।
উঃ আন্দিজ, আল্পস, আটালাস, হিমালয় পর্বত ইত্যাদি।
31. গ্রীক শব্দ ‘ওরস’ এর অর্থ কী?
উঃ পর্বত।
32. মহাদেশীয় চলনতত্ত্বটি কে কবে প্রকাশ করেন?
উঃ ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে আলফ্রেড উইলসন।
33. পাতসংস্থানতত্ত্ব কে সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন?
উঃ মার্কিন ভূবিজ্ঞানী উইলসন।
34. পাত সংস্থান মতবাদের প্রকৃত স্রস্টা কে?
উঃ ফরাসী ভূবিজ্ঞানী পিঁচো।
35. ভূবিজ্ঞানীদের মতে কটি পাতের সমন্বয়ে ভূত্বক গঠিত?
উঃ ১১ টি প্রধান পাত এবং ২০ টি অপ্রধান পাত।
36. কয়েকটি স্তূপ পর্বতের নাম লেখো।
উঃ ফ্রান্সের ভোজ, জার্মানীর ব্ল্যাকফরেস্ট, স্কটল্যাণ্ডের চেভিয়ট, ভারতের নীলগিরি, সাতপুরা ও বিন্ধ্যপর্বত, আফ্রিকার ড্রাকেন্সবার্গ, আমেরিকার হেনরিপর্বত, ব্রাজিলের ব্যাণ্ডিভার, জার্মানির কিওলেন ইত্যাদি।
37. কয়েকটি গ্রস্ত উপত্যকার নাম লেখো।
উঃ ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাকফরেস্ট দুটি স্তূপ পর্বত এবং তাদের মাঝে অবস্থিত রাইন নদীর উপত্যকা গ্রস্ত উপত্যকা। ভারতের বিন্ধ্য ও সাতপুরা দুটি স্তুপ পর্বত এবং তাদের মাঝে অবস্থিত নর্মদা নদীর উপত্যকা গ্রস্ত উপত্যকা।
38. একটি শঙ্কু বা মোচাকৃতি আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালোয়া।
39. মিশ্র শঙ্কুবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরির দুটি উদাহরণ দাও?
উঃ মেক্সিকোর ওরিজাবা, চিম্বারাজো।
40. একটি গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মাউণ্ট পিলি।
41. দুটি বিস্ফোরণ জ্বালামুখবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ আইসল্যান্ডের ক্রাফলা, ইন্দনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া।
42. কয়েকটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালৌয়া, পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মাউণ্ট পিলি, ইতালির ভিসুভিয়াস।ইতালির স্ট্রোম্বলি, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া, আলাস্কার মাউণ্ট ম্যাজমা, ভারতের ব্যারেন।
43. কয়েকটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ জাপানের মাউণ্ট ফুজি (ফুজিয়ামা), মেক্সিকোর পারিকুতিন, আফ্রিকার মাউণ্ট কেনিয়া।
44. কয়েকটি মৃত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উঃ মায়ানমারের মাউন্ট পোপো, মেস্কিকোর কটোপাস্কি, চিম্বোরাজো, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নারকোণ্ডাম।
45. পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরির নাম কী?
উঃ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালৌয়া।
46. কাকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলা হয়?
উঃ ইতালির স্ট্রোম্বলিকে।
47. পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বিধ্বংসী আগ্নেয়গিরির নাম কী?
উঃ পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মাউণ্ট পিলি।
48. ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম কী?
উঃ ব্যারেন।
49. ক্ষয়জাত পর্বত কাকে বলে?
উঃ কখনো কখনো বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির কশয়কার্যের ফলে প্রাচীন পার্বত্যভূমি বা উচ্চভূমির নরম শিলা গঠিত অংশসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমভূমির আকার ধারণ করে, কিন্তু কঠিন শিলা-গঠিত অংশসমূহ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত না হয়ে উচ্চভূমি বা পর্বতের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ধরণের পর্বতকে ক্ষয়জাত পর্বত বলে। যেমন – আরাবল্লী।
50. ক্ষয়জাত পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ১। শিখরদেশ তীক্ষ্ম বা ছুঁচালো নয়।
২। ঢাল খুব খাড়া নয়।
৩। এগুলির উচ্চতা খুব বেশি হয় না।
51. কয়েকটি ক্ষয়জাত পর্বতের নাম লেখো।
উঃ উত্তর আমেরিকার অ্যাপালচিয়ান ও সিয়েবানেভেদা, ইউরোপের গ্লিণ্টারটিন, অস্ট্রেলিয়ার হামার্সলেরেঞ্জ, ভারতের আরাবল্লী।
52. ভারতের দুটি ক্ষয়জাত পর্বতের নাম লেখ।
উঃ রাজস্থানের আরাবল্লী ও বিহারের রাজমহল।
53. পশ্চিমবঙ্গের শুশুনিয়া কী জাতীয় পর্বত?
উঃ ক্ষয়জাত পর্বত।
54. ক্ষয়জাত পর্বতকে অবশিষ্ট পর্বত বলা হয় কেন?
উঃ মূল পর্বত বা মলভূমির অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বত্র অপর নাম অবশিষ্ট পর্বত।
55. মালভূমি কাকে বলে?
উঃ সমুদ্রতল থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত (প্রায় ৩০০-৬০০মিটার) উপরিভাগ যথেষ্ট তরঙ্গায়িত বা বন্ধুর এবং চারদিকে খাড়াই ঢালযুক্ত - এরকম বিস্তৃত ভূমিকে বলে মালভূমি। যেমন- তিব্বতের মালভূমি, ছোটনাগপুরের মালভূমি।
56. মালভূমি সৃষ্টির কারণগুলি উল্লেখ কর।
উঃ প্রধানত তিনটি কারণে মালভূমি সৃষ্টি হয়। যথা-
১। ভূ-আলোড়নের ফলে- যেমন- দাক্ষিণাত্য মালভূমি।
২। প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহের কার্যের ফলে – যেমন – ছোটনাগপুর মালভূমি।
৩। লাভা সঞ্চয়ের ফলে, যেমন – দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ লাভা মালভূমি।
57. গঠনের বৈশিষ্ট্য অনুসারে মালভূমিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায়।যথা-
১। পর্বতবেষ্টিত মালভূমি
২। ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি
৩। লাভা মালভূমি।
58. পর্বত বেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে?
উঃ ভূআলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হবার সময় সমান্তরাল পর্বশ্রেণির মাঝখানের জায়গাগুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি হয়। এই মালভূমির চারদিকে পর্বত থাকে বলে একে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে। যেমন – তিব্বতের মালভূমি।
59. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কাকে বলে?
উঃ নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় এবং উচ্চতাও হ্রাস পায়। নদ-নদী এবং এর শাখা-প্রধাখা মালভূমিটিকে ধীরে ধীরে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলে। এইভাবে কোন বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে বলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। যেমন- ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি।
60. লাভা মালভূমি কাকে বলে?
উঃ অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা দূত্বকের কোন ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্যে দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে সঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা ও কঠিন হয়ে মালভূমি সৃষ্টি করে। একে লাভাগঠিত মালভূমি বলে। যেমন – ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি বা ড্রেকান ট্রাপ।
61. পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমির নাম কী?
উঃ পামীর মালভূমি (গড় উচ্চতা ৪৮০০ মিটার)।
62. মালভূমি সৃষ্টির কারণগুলি কী কী?
উঃ ভূ-আলোড়ন, প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহের কাজ এবং লাভ সঞ্চয়।
63. মালভূমিকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা যায় কী কী?
উঃ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। পর্বতবেষ্টিত মালভুমি, ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি, লাভা গঠিত মালভূমি।
64. পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় কেন?
উঃ অন্যান্য মালভূমির মতো পামীরের উপরিভাগ কিছুটা সমতল এবং চারপাশের ঢাল খাড়া। পামীরের পরিচয় শুধু মালভূমি হিসাবেই নয়, এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮০০ মিটার। এজন্য পামীরকে পৃথিবীর ছাদ বলে।
65. একটি লাভাগঠিত মালভূমির নাম লেখ।
উঃ মহারাষ্ট্রের লাভা মালভূমি বা ড্রেকান ট্র্যাপ অঞ্চল।
66. কাকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়?
উঃ পামীর মালভূমিকে।
67. পামীর মালভূমির উচ্চতা কত?
উঃ ৪৮০০ ফুট।
68. পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির নাম কী? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ তিব্বতের মালভূমি।
69. পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মালভূমির নাম কী?
উঃ বলিভিয়ার মালভূমি।
70. লাদাখ মালভূমির গড় উচ্চতা কত?
উঃ ৪০০০ মিটার।
71. পশ্চিমবঙ্গের একটি মালভূমির নাম লেখো। এর উচ্চতা কত?
উঃ গোর্গাবুরু। এর উচ্চতা ৬৭৭ মিটার।
72. ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়সাধনের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি মালভূমির নাম লেখ।
উঃ ক্যালিডোনিয়ার মালভূমি, ফিজেল্ড মাওভূমি।
73. লাভা সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি মালভূমির নাম লেখ।
উঃ ভারতের মালব মালভূমি ও মহারাষ্ট্রের মালভূমি বা ড্রেকান ট্র্যাপ, আফ্রিকার আবিসিনিয়ার মালভূমি, উত্তর আমেরিকার কলম্বিয়া।
74. কয়েকটি মহাদেশীয় মালভূমি বা শিল্ড মালভূমির নাম লেখ।
উঃ আফ্রিকার মালভূমি, আরবের মালভূমি, ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, ব্রাজিলের মালভূমি, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মালভূমি।
75. কয়েকটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির নাম লেখ।
উঃ পামীর মালভূমি, তিব্বতের মালভূমি, ছয়ডাম বা শৈদাম মালভূমি, সিনকিয়াং মালভূমি, ইরানের মালভূমি,অ্যানাটোলিয়া মালভূমি।
76. একটি তির্যক মালভূমির নাম লেখ।
উঃ স্পেনের মেসেটা মালভূমি, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি পামভূমি, ফান্সের প্যারিস অববাহিকা।
77. একটি চ্যুতি মালভূমির নাম লেখ।
উঃ ফান্সের সেন্ট্রাল ম্যাসিফ।
78. একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির নাম লেখ।
উঃ কর্ণাটকের মালনাদ অঞ্চল, স্কটল্যাণ্ডের ও ওয়েলসের উচ্চভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির অন্তর্গত।
79. সমভূমি কাকে বলে?
উঃ স্থলভাগের যেসব বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু এবং সামান্য ঢালু, সেই ভূভাগগুলিকে সমভূমি বলে।
80. উৎপত্তি ও ভূমিরূপের পার্থক্য অনুসারে সমভূমিকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ তিনটি শ্রেণিতে। যথা-
১) ভূ-গাঠনিক সমভূমি
২) ক্ষয়জাত সমভূমি
৩) সঞ্চয়জাত সমভূমি।
81. প্লাবন সমভূমি কাকে বলে?
উঃ বর্ষাকালে বন্যার জল স্বাভাবিক বাঁধ অতিক্রম করে বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত করে। বন্যার জল অপসারিত হলে প্লাবিত অঞ্চলে পলি জমা হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
82. পলি সমভূমি কাকে বলে?
উঃ নদীর মধ্যগতিতে জলের পরিমাণ বাড়লে (উপনদীর মিশ্রণে) এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটলে নদীখাত অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে পারে না। দুই কূল ছাপিয়ে নদী প্লাবন ঘটায়, উপত্যকার পলি, প্লাবন ভূমিতে ছড়িয়ে সৃষ্টি করে প্লাবন সমভূমি।
83. ব-দ্বীপ সমভূমি কাকে বলে?
উঃ মোহনার কাছে পৌঁছে নদী একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই শাখাগুলির মাঝে পলি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তা দেখতে অনেকটা মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’-অক্ষরের মতো হয়। তাই এই সমভূমিকে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে।
84. পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমির নাম লেখ।
উঃ গঙ্গা ব-দ্বীপ সমভূমি।
85. ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমি কোনটি?
উঃ উত্তর ভারতের সমভূমি।এর অন্য নাম সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
86. একটি উন্নত ও একটি অবনত সমভূমির নাম লেখ।
উঃ উন্নত সমভূমি – মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি।
অবনত সমভূমি – তুরানের নিম্নভূমি।
87. একটি সমপ্রায়ভূমির নাম লেখ।
উঃ মিশরের সিনাই অঞ্চল।
88. একটি পলিগঠিত সমভূমির নাম লেখ।
উঃ গঙ্গা সমভূমি।
89. একটি বন্যাগঠিত সমভূমির নাম লেখ।
উঃ মিশরের নীলনদের সমভূমি।
90. একটি উপকূলের সমভূমির নাম লেখ।
উঃ করমণ্ডল সমভূমি।
91. একটি ব-দ্বীপ সমভূমির নাম লেখ।
উঃ সুন্দরবনের ব-দ্বীপ সমভূমি।
92. একটি হিমবাহ সমভূমির নাম লেখ।
উঃ কানাডার উত্তরাংশ এবং সাইবেরিয়ার সমভূমি।
93. একটি হ্রদ সমভূমির নাম লেখ।
উঃ মালব মালভূমির দক্ষিণাংশ।
94. পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমির নাম লেখ।
উঃ গঙ্গা ব-দ্বীপ সমভূমি।
95. একটি উন্নত ও একটি অবনত সমভূমির নাম লেখ।
উঃ উন্নত সমভূমি – মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি।
অবনত সমভূমি – তুরানের নিম্নভূমি।
96. ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমি কোনটি?
উঃ উত্তর ভারতের সমভূমি।এর অন্য নাম সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
97. একটি লোয়েস সমভূমির নাম লেখ।
উঃ উত্তর চীনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
98. কোথায় বাজাদা বা মরুমরুভূমি দেখা যায়?
উঃ আফ্রিকা মহাদেশে সাহরীয় আটলাসের পাদদেশে শটসের জলাভূমির সন্নিকটে বাজাদা দেখা যায়।
99. পেডিমেন্ট কোথায় দেখা যায়?
উঃ সাহারা মরভুমির উত্তরে আতলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেণ্ট দেখা যায়।
100. মোনাডনক কী? কোথায় দেখা যায়?
উঃ সমপ্রায়ভূমির মধ্যস্থিত অবশিষ্ট পাহাড়কে মোনাডনক বলা হয়। মেঘালয়ে দেখা যায়।
আবহবিকার
1. আবহবিকার কাকে বলে?
উঃ ‘আবহবিকার’ শব্দটি এসেছে ‘আবহাওয়া’ থেকে। কোন জায়গার বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির দৈনিক অবস্থাকে বলে সেই জায়গার আবহাওয়া। আবহাওয়ার এইসব উপাদানের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের শিলাসমুহের যে ক্ষয় বা পরিবর্তন হয়, তাকে বলে আবহবিকার।
2. আবহবিকারের অপর নাম কী?
উঃ বিচূর্ণীভবন।
3. আবহবিকারের অপর নাম বিচূর্ণীভবন কেন?
উঃ আবহবিকার হল আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা শিলার বিকৃতি বা বিকার। শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয় বলে আবহবিকারের অপর নাম বিচূর্ণীভবন।
4. ক্ষয়ীভবন কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতির দ্বারা শিলাস্তর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে স্থানান্তরিত হলে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে।
5. পুঞ্জিত স্খলন কাকে বলে?
উঃ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো অংশ হঠাৎ অভিকর্ষের টানে, ঘর্ষণ জনিত বাধা অতিক্রম করে ঢাল বরাবর ধীরে অথবা দ্রুতগতিতে নেমে আসাকে পুঞ্জিত স্খলন বলে।
6. নগ্নীভবন কাকে বলে?
উঃ আবহবিকারের ফলে চূর্ণীকৃত বা বিয়োজিত শিথিল শিলাপুঞ্জ পুঞ্জিতক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারিত হলে নীচের মূল শিলা উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে পড়ে। একে নগ্নীভবন প্রক্রিয়া বলে।
7. আবহবিকার কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ দুইপ্রকার। যান্ত্রিক ও রাসায়নিক।
8. যান্ত্রিক আবহবিকার কাকে বলে?
উঃ উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষার প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে যান্ত্রিক বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন ভূ-পৃষ্ঠের শিলাসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়, তাকে বলে যান্ত্রিক আবহবিকার।
9. গ্রানাইট শিলা গঠিত অঞ্চলে কোন আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ যান্ত্রিক আবহবিকার।
10. কী ধরণের জলবায়ুতে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ উষ্ণ মরু জলবায়ু, শীতপ্রধান জলবায়ু এবং শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে।
11. মরু অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্যের কারণগুলি কী কী?
উঃ মরু অঞ্চলের দৈনিক ও বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর সর্বাধিক। যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলা খন্ডিত হলে নীচের শিলাস্তরের উপ চাপ হ্রাস পায়। তাই উষ্ণতার তারতম্য ও চাপ হ্রাসের ফলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য পৃথিবীর মরুভূমিগুলিতেই বেশি দেখা যায়।
12. গ্রানাইট শিলাগঠিত অঞ্চলে ভূমিরূপ গোলাকৃতি হয় কেন?
উঃ গ্রানাইট শিলায় গঠিত অংশে যে গোলাকৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তার জন্য দায়ী শল্কমোচন প্রক্রিয়া।
13. স্ক্রী বা ট্যালাস কী?
উঃ শীতল জলবায়ু অঞ্চলে শিলার ফাটলের মধ্যে জমা জল ঠান্ডা হয়ে জমে গিয়ে বরফে পরিণত হয় আবার অধিক উষ্ণতায় গলে যায়। জল বরফে পরিণত হলে আয়তন প্রায় ৯% বৃদ্ধি পায়। এই কারণে ওই জমে যাওয়া বরফ ফাটলের গায়ে প্রবল চাপ দেয় এবং শিলার ফাটল আরও বৃদ্ধি পায়। দিন ও রাতের উষ্ণতার তারতম্যের জন্য জল ও বরফের চাপের হ্রাসবৃদ্ধির জন্য শিলায় পীড়নের সৃষ্টি হয়। ফলে শিলাসমূহ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে তীক্ষ্ণ শিলাখণ্ডে পরিণত হয়। একে স্ক্রী বা ট্যালাস বলে।
14. রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে?
উঃ যখন জলীয় বাষ্প বা জলের মাধ্যমে শিলাসমূহের খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত, বিচ্ছিন্ন ও পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে।
15. রাসায়নিক আবহবিকার কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ চার প্রকার। কার্বোনেশান, অক্সিডেশান, হাইড্রেশান, হাইড্রোলিসিস বা আর্দ্রবিশ্লেষণ।
16. উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে কোন আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ রাসায়নিক আবহবিকার।
17. জৈব আবহবিকার কাকে বলে?
উঃ প্রাণী ও উদ্ভিদ অর্থাৎ জীবের সাহায্যে যখন শিলা যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়, তখন তাকে জৈব আবহবিকার বলে।
18. জৈব আবহবিকার কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ দুই প্রকার। যথা- জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার ও জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার।
19. রেগোলিথ কী?
উঃ আবহবিকারের ফলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলার ওপর এক ধরনের শিথিল ভূ-আস্তরণের সৃষ্টি হয়। একে রেগোলিথ বলে।
20. এলুভিয়েশন ও ইলুভিয়েশন কী?
উঃ আবহবিকার প্রাপ্ত শিলাখণ্ড বা রেগোলিথের ওপর উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ সঞ্চিত হওয়ার পর সেগুলি হিউমাসে পরিণত হয়, অর্থাৎ হিউমিফিকেশন ঘটে। এরপর হিউমাস বিয়োজিত হয়ে খনিজ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ খনিজকরণ ঘটে। এই খনিজ ও জিউমাস বৃষ্টির জল দ্বারা মৃত্তিকার তলদেশে প্রবেশ করার নাম এলুভিয়েশন। আবার তলদেশে খনিজ পদার্থ সঞ্চয়ের নাম ইলুভিয়েশন।
21. ব্লক স্পেড কী?
উঃ নিম্ন অক্ষাংশের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং উচ্চ অক্ষাংশের উচ্চভূমির পাদদেশে ত্রিকোণাকার শিলাখণ্ড গঠিত ভূভাগ দেখা যায়। তুষারের কার্যের ফলে শিলাগাত্র ফেটে সৃষ্ট হওয়া (ট্যালাস) এই ভূভাগ ব্লকস্পেড, ফেলসেনমার প্রভৃতি নামে পরিচিত।
22. টেরারোসা কী?
উঃ চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে লৌহকণাসমৃদ্ধ ভূআস্তরণের সৃষ্টি হয়। একে টেরারোসা বলে।
23. কৈশিক প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝ?
উঃ মৃত্তিকার নীচের স্তর থেকে অভিকর্ষের বিপরীতে জল ও খনিজ পদার্থের মৃত্তিকার ফাঁক দিয়ে ওপরে ওঠার প্রক্রিয়াকে কৈশিক প্রক্রিয়া বলা হয়।
24. এক্সফোলিয়েশান বা শল্কমোচন বা গোলাকৃতি আবহবিকার কাকে বলে?
উঃ দিনের বেলা সূর্যের প্রচণ্ড তাপে শিলার বাইরের অংশ উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয় আবার, রাত্রি বেলা তাপবিকিরণ করে শিলা সংকুচিত হয়। শিলা তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় শিলাপৃষ্ঠের তুলনায় এর ভিতরের অংশ তেমন প্রসারিত ও সংকুচিত হতেপারে না। ফলে, শিলার ভিতর ও বাইরের মধ্যে একটি তাপীয় ঢালের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলার বাইরের অংশ স্তরে স্তরে পেঁয়াজের খোসার মতো আলগা হয়ে শিলা থেকে খুলে পড়ে। একেই শল্কমোচন বা এক্সফোলিয়েশন বলে।
25. এক্সফোলিয়েশান বা গোলাকৃতি আবহবিকার কোন শিলায় বেশি দেখা যায়?
উঃ গ্রানাইট জাতীয় শিলায়।
26. ক্ষুদ্রকণা বিশরণ কাকে বলে?
উঃ উষ্ণ মরু অঞ্চলে বিসমসত্ত্ব শিলার খনিজগুলির তাপগ্রহণ ও প্রসারণ ক্ষমতা এবং তাপ বিকিরণ ও সঙ্কোচন ক্ষমতা এক হয় না। দিনের বেলা অধিক সৌরতাপে শিলা মধ্যস্থিত খনিজ আসমভাবে প্রসারিত এবং রাত্রিবেলা অসমভাবে সংকোচিত হয়। এই কারণে শিলার মধ্যে ক্রমাগত পীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং একসময় প্রচণ্ড শব্দ করে শিলা ফেটে যায় ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। একে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ বলে।
27. চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কোন প্রকার আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি?
উঃ রাসায়নিক আবহবিকার।
28. কী ধরণের আবহবিকারের ফলে শিলার বিভিন্ন উপাদানের ধর্ম পরিবর্তিত হয়?
উঃ রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে।
29. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ উষ্ণ-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে।
30. কার্বোনেশান কাকে বলে?
উঃ বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলের সমন্বয়ে সৃষ্ট কার্বনিক অ্যাসিড শিলা খনিজের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলায় আবহবিকার ঘটায়। একে কার্বোনেশান বলে।
31. চুনাপাথর কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয়?
উঃ কার্বোনেশান।
32. অক্সিডেশান কী?
উঃ যেসব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলা বিয়োজিত হয় তার মধ্য অক্সিডেশান অন্যতম। শিলার খনিক পদার্থের সঙ্গে যখন অক্সিজেনের রাসায়নিক সংযোগ ঘটে এবং তার ফলে শিলার যে আবহবিকার হয়, তাকেই বলে অক্সিডেশান।
33. হাইড্রেশান কাকে বলে?
উঃ শিলায় উপস্থিত খনিজের সাথে জল যুক্ত হয়ে রাসায়নিক আবহবিকার ঘটলে তাকে হাইড্রেশান বলে।
34. হাইড্রোলিসিস বা আর্দ্রবিশ্লেষণ বলতে কী বোঝ?
উঃ শিলা মধ্যস্থ খনিজ জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খনিজ অণুতে একই সঙ্গে বিয়োজন ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন যৌগে পরিণত হয়। এই পদ্ধতিকে আর্দ্রবিশ্লেষণ বলে।
35. বৃষ্টিবহুল ক্রান্তীয় অঞ্চলে কোন আবহবিকারের প্রাধান্য দেখা যায়?
উঃ রাসায়নিক আবহবিকার।
36. সমপ্রকৃতির শিলায় কোন আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ যান্ত্রিক আবহবিকার।
37. মরুঅঞ্চলে কোন প্রকার আবহবিকার বেশি দেখা যায়?
উঃ যান্ত্রিক আবহবিকার।
38. উষ্ণতার তারতম্যের জন্য যখন শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় তখন তাকে কী বলে?
উঃ বিচূর্ণীভবন।
39. লোহার সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তাকে কী বলে?
উঃ অক্সিডেশান।
40. কলিকরণ (Slaking) ও কলয়েড প্লাকিং বলতে কী বোঝ?
উঃ উপকূল বরাবর পর্যায়ক্রমে জোয়ারভাটার প্রভাবে শিলা আর্দ্র ও শুষ্ক হয় এবং ফেটে যায়। একেই কলিকরণ বলে। শিলাস্তরের উপর আর্দ্র মৃত্তিকা কণা সঞ্চিত হলে তা যখন শুকিয়ে যায় মূল এবং শিলা থেকে ক্ষুদ্রকণা উৎপাটন করে তখন তাকে কলয়েড প্লাকিং বলে।
41. মরুভূমিতে বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার আওয়াজ হয় কেন?
উঃ মরুভূমি অঞ্চলে দিনে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং রাতে দিনের তুলনায় অনেক বেশি শীতলতা বিরাজ করে। তাই বিভিন্ন খনিজের তাপগ্রহণ এবং বিকিরণের মধ্যে তারতম্য এখানে সর্বাধিক হয়। এতে শিলার মধ্যে সর্বাধিক পীড়ন দেখা যায় এবং পীড়নের নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে শিলাটি বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার মত আওয়াজ করে ফাটে।
বায়ুমণ্ডল
1. বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?
উঃ ভুপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তাকেই বলে বায়ুমণ্ডল।
2. বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী?
উঃ বায়ুমণ্ডল হল গ্যাসীয় ও অ-গ্যাসীয় পদার্থের যৌগিক মিশ্রণ।
গ্যাসীয় উপাদানগুলি হল- নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন ও বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় গ্যাস, যেমন- হিলিয়াম, নিয়ন, ক্রিপ্টন, জেনন প্রভৃতি।
অ-গ্যাসীয় উপাদানগুলি হল- জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা, লবণকণা ও অতিক্ষুদ্র জৈবকণা।
3. বায়ুমণ্ডলে শতকরা কত ভাগ নাইট্রোজেন থাকে?
উঃ ৭৮.০৮৪ ভাগ।
4. বায়ুমণ্ডলে শতকরা কত ভাগ অক্সিজেন থাকে?
উঃ ২০.৯৪৬ ভাগ।
5. বায়ুমণ্ডলে শতকরা কতভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে?
উঃ ০.০৩ শতাংশ।
6. বায়ুমণ্ডলে শতকরা কতভাগ আর্গন থাকে?
উঃ ০.৯৩ শতাংশ।
7. বায়ুমণ্ডলে প্রধান গ্যাসীয় উপাদানটির নাম কী?
উঃ নাইট্রোজেন।
8. ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম কী?
উঃ ট্রপোপজ।
9. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায়?
উঃ ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডলে।
10. ক্ষুব্ধমণ্ডল কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। ফলে এই অঞ্চলে ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত ইত্যাদি দেখা যায়। এই অঞ্চলকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে।
11. এরোসল কী?
উঃ এরোসল হল ক্ষুদ্রাকৃতি কঠিন কণা (সিলিকেট কণা, লবণ কণা প্রভৃতি) যাকে কেন্দ্র করে জলবিন্দুর সৃষ্টি হয়।
12. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরের মধ্যে মেঘ, ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়?
উঃ ট্রপোস্ফিয়ারে।
13. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরকে, কেন শান্তমণ্ডল বলে?
উঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার-কে। এই স্তরে আবহাওয়া শান্ত থাকার জন্য এই স্তরকে শান্তমণ্ডল বলে।
14. রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?
উঃ দুই ভাগে। হোমোস্ফিয়ার ও হেটরোস্ফিয়ার।
15. ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুর যে স্তর আছে তার নাম কী?
উঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
16. ওজোন গ্যাসের স্তর কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
উঃ স্ট্রাটোস্ফিয়ার–এ।
17. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে সুমেরু ও কুমেরু প্রভা দেখা যায়?
উঃ আয়নোস্ফিয়ার-এ।
18. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুর যে স্তর আছে তার নাম কী?
উঃ মেসোস্ফিয়ার।
19. মেসোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুর যে স্তর আছে তার নাম কী?
উঃ থার্মোস্ফিয়ার।
20. মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত?
উঃ ৬-৮ কিমি।
21. গ্যাসীয় উপাদান ছাড়া বায়ুমণ্ডলের অপর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদানের নাম কর।
উঃ ধূলিকণা।
22. বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরের নাম কী?
উঃ এক্সোস্ফিয়ার।
23. বায়ুমণ্ডল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত?
উঃ ওপরের দিকে প্রায় ১০,০০০ কিমি।
24. কে কবে প্রথম কোথায় ওজোন ছিদ্র আবিষ্কার করেন?
উঃ ১৯৮৫ সালে জে. সি. ফারমেন ও তার সহকর্মীরা, আন্টার্কটিকায়।
25. ইন্সোলেশান বা সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীতে সকল শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্য থেকে যে আলোক রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে পৃথিবীতে পৌঁছায় তাকে ইন্সোলেশান বা সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে।
26. অ্যালবেডো কী?
উঃ পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মির পরিমাণকে ১০০ শতাং ধরা হয়। এর মধ্যা ৩৪ শতাংশ রশ্মি ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডল থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই ৩৪ শতাংশ রশ্মিকে অ্যালবেডো বলে।
27. পরিবহন কাকে বলে?
উঃ কোনও অনুগুলির মধ্য দিয়ে খুব ধীর গতিতে তাপের যে সঞ্চালন ঘটে তাকে পরিবহন বলে।
28. পরিচলন কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী স্তরে বায়ু বেশি উষ্ণ হয়, ফলে প্রসারিত হয় এবং ঘনত্ব কমে যায়, যার দরুণ ঊর্ধ্বমুখে গমন করে। ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শীতল বায়ু ওই স্থান দখল করে এবং পুনরায় উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায়। বায়ুর এই উল্লম্ব প্রবাহকে পরিচলন বলে।
29. অ্যাডভেকশন কী?
উঃ উষ্ণ বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহকে অ্যাডভেকশন বলে।
30. কাকে, কেন Radiation Window বলে?
উঃ বায়ুমণ্ডলের নিম্ন অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য থাকে। ফলে এই অংশে বিকিরণ কম হয়। তার চেয়ে অধিক উচ্চতায় সৌর বিকিরণ বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই পর্বতগুলিকে Radiation Window বলে।
31. রুদ্ধতাপ উত্তাপন প্রক্রিয়া কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপ সর্বোচ্চ, যতই উচ্চে ওঠা যায় বায়ুচাপ ততই হ্রাস পেতে থাকে। ফলে বায়ুর আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং বায়ুর অণুগুলির মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং Thermodynamics-4 –এর সূত্রানুসারে বায়ুটি ক্রমশ শীতল হয়। একে রুদ্ধ তাপ শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বলে। অপরপক্ষে বায়ু যখন নীচে নেমে আসে তখন তাপমাত্রা ওই একই কারণে বৃদ্ধি পায় যাকে ‘রুদ্ধতাপ উত্তাপন প্রক্রিয়া (adiabatic heating) বলে।
32. তাপ পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ ক্যালোরিমিটার।
33. তাপমাত্রা পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ থার্মোমিটার।
34. স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার কাকে বলে?
উঃ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার অঞ্চলে প্রতি ১ কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা ৬.৪oC হারে হ্রাস পায়। একে স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার বলে।
35. বৈপরীত্য তাপমাত্রা বলতে কী বোঝ?
উঃ সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তবে কখনও কখনও উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা হ্রাস না পেয়ে বৃদ্ধিও পেতে দেখা যায়। একেই ঋণাত্মক উষ্ণতা হ্রাসের হার বা বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে।
36. তাপীয় নিয়ন্ত্রক কাকে বলে?
উঃ সমুদ্রস্রোত উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই একে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রক বলা হয়।
37. স্বাভাবিক উদ্ভিদ কাকে বলে?
উঃ প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে (মানুষের সাহায্য ছাড়া) যে উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে তাকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে।
38. সমোষ্ণরেখা কাকে বলে?
উঃ ভূ-পৃষ্ঠের সম উষ্ণতাযুক্ত স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।
39. গ্রিনহাউস কী?
উঃ শীত প্রধান দেশে যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে সেখানে এক প্রকার কাঁচের ঘর নির্মাণ করে চারা গাছ রাখা হয়, এই ঘরকে গ্রিনহাউস বলা হয়।
40. গ্রিনহাউস এফেক্ট কাকে বলে?
উঃ শীত প্রধান দেশে যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে সেখানে এক প্রকার কাঁচের ঘর নির্মাণ করে চারা গাছ রাখা হয়, এই ঘরকে গ্রিনহাউস বলা হয়। এই ঘরের বিশেষত্ব এই যে সূর্য রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে কাঁচের ঘরে প্রবেশ করে ওই ঘরকে উত্তপ্ত করে। কিন্তু প্রতিফলির রশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গ বিশিষ্ট রশ্মিতে পরিণত হয়ে কাঁচের আবরণ ভেদ করে ওই ঘরের বাইরে যেতে পারে না, ফলে পুনঃপ্রতিফলনের দরুণ ওই ঘরটি উত্তপ্ত হওয়ায়, ঘরের ভিতরের উদ্ভিদ সবুজ (green) থাকে। এই ঘটনাকে গ্রিনহাউস এফেক্ট বলা হয়।
41. গ্রিনহাউস গ্যাস কোনগুলি?
উঃ পৃথিবীতে প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসটি হল কার্বন ডাই অক্সাইড। এছাড়াও কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন, সালফার ডাই অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) প্রভৃতি গ্রিনহাউস গ্যাসের উদাহরণ।
42. El Nino শব্দের অর্থ কী?
উঃ শিশু খ্রীষ্ট।
43. এল নিনো কাকে বলে?
উঃ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেরুরু পশ্চিম উপকূল দিয়ে কয়েক বছর ছাড়া (২-৭) যে উষ্ণস্রোত প্রবাহিত হয় তাকে এল নিনো বলে।
44. বায়ুচাপ কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে প্রতি বর্গমিটার স্থানের ওপর বায়ু তার নিজের ওজন জনিত যে চাপ প্রয়োগ করে তাকে বায়ুচাপ বলে।
45. প্রমাণ চাপ কাকে বলে?
উঃ সমুদ্রপৃষ্ঠে ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে ০ (শূন্য) ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় বায়ু যে চাপ (৭৬ সেমি উঁচু পারদ স্তম্ভের চাপ) দেয় তাকে প্রমাণ চাপ বলে।
46. বায়ুচাপের পরিমাপের যন্ত্র কী?
উঃ ব্যারোমিটার।
47. কে কবে টরিসেলি ব্যারোমিটার আবিষ্কার করে?
উঃ ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে বিজ্ঞানী টরিসেলি।
48. কে কবে ফর্টিন্স ব্যারোমিটার আবিষ্কার করে?
উঃ ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে নিকোলাস ফর্টিন।
49. ভার্নিয়ার স্কেল কী?
উঃ সূক্ষ্মতম দৈর্ঘ্য মাপার জন্য ১৬৩১ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী গণিতবিদ্ পি ভার্নিয়ার যে স্কেল আবিষ্কার তার নাম ভার্নিয়ার স্কেল।
50. কোন ব্যারোমিটারে পারদ ব্যবহার করা হয় না?
উঃ অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটারে।
51. সমপ্রেস বা সমচাপ রেখা কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠের ওপর সমান বায়ুচাপ বিশিষ্ট স্থানগুলিকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে মানচিত্রে উপস্থাপন করলে তাকে সমপ্রেস বা সমচাপ রেখা বলে।
52. বায়ুচাপের ঢাল কাকে বলে?
উঃ দুটি সমচাপ রেখার মধ্যে সমকোণে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রতি একক দূরত্বে বায়ুচাপের যে পার্থক্য ঘতে তাকে বায়ুচাপের ঢাল বলে।
53. আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল কাকে বলে?
উঃ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে মিলিত হয়। এই মিলনস্থলকে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বা Intertropical Convergence Zone (ITCZ) বলে।
54. অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে?
উঃ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে অবস্থিত কর্কটীয় উচ্চচাপবলয়ে (২৫o-৩৫o উত্তর অক্ষাংশ) অনুভূমিক বায়ু প্রবাহ প্রায় হয় না বললেই চলে। প্রাচীনকালে বণিকেরা পালতোলা জাহাজে করে এই অঞ্চলে এসে উপস্থিত হলে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের অভাবে জাহাজ থেমে যেত। তাই তারা জাহাজ হালকা করার জন্য সমুদ্রে কিছু ঘোড়া নিক্ষেপ করত। এই কারণে এই অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে।
55. সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় কাকে বলে?
উঃ উত্তর গোলার্ধে ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৬৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত নিম্নচাপ বলয়কে সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলা হয়।
অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে ৬৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত নিম্নচাপ বলয়কে কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলে।
56. বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?
উঃ ভূপৃষ্ঠের ওপর বায়ু যখন অনুভূমিকভাবে চলাচল করে তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।
57. নিয়ত বায়ু কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ যে বায়ু সারা বৎসর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয় তাকে নিয়ত বায়ু প্রবাহ বলে।
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ তিনপ্রকার। যথা- আয়ন বায়ু, পশ্চিমাবায়ু, ও মেরু বায়ু।
58. আয়ন বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলা যায় কেন?
উঃ উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহের দরুন আগেকার দিনের বণিকরা খুবই উপকৃত হত। কারণ, বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহ পালতোলা জাহাজের যাতায়াতে সহায়তা করত। তাই আয়ন বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলা হয়।
59. গর্জনশীল চল্লিশা কী?
উঃ দক্ষিণ গোলার্ধে অধিক জলভাগের অবস্থান থাকায় বায়ু বিনা বাধায় ভীষণ শব্দ করে তীব্রগতিতে প্রবাহিত হয়। তাই ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে ইহা ‘গর্জনশীল চল্লিশা’; ৫০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে এটি ‘ভয়ঙ্কর পঞ্চাশিয়া’, ও ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে ইহা ‘চিৎকারী ষাট’ নামে পরিচিত।
60. মেরু বায়ু কাকে বলে?
উঃ মেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় হতে যে বায়ু মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে মেরু বায়ু বলে।
61. সাময়িক বায়ু কাকে বলে?
উঃ দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বৎসরের বিভিন্ন ঋতুতে সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে।যেমন স্থল বায়ু, সমুদ্র বায়ু, মৌসুমি বায়ু ইত্যাদি।
62. স্থল বায়ু কাকে বলে? এই বায়ু কখন প্রবাহিত হয়?
উঃ স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে স্থল বায়ু বলে। মধ্যরাত্রি ও ভরবেলায় এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
63. সমুদ্র বায়ু কাকে বলে?
উঃ সমুদ্র থেকে স্থল ভাগের দিকে সাময়িকভাবে এই বায়ু প্রবাহিত হয় তাই একে সমুদ্র বায়ু বলে।
64. অ্যানাবেটিক বায়ু কাকে বলে?
উঃ দিনের বেলায় অতিরিক্ত উত্তাপ পর্বতের উপরিভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। এর ফলে উপত্যকা অঞ্চলে শীতল বায়ু নিম্নচাপের আকর্ষণে ধীরে ধীরে উপরে উঠে যায় একে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে।
65. ক্যাটাবেটিক বায়ু কাকে বলে?
উঃ পার্বত্য অঞ্চলে শীতল ভারি বায়ু অনেক সময় পর্বতের ঢাল বেয়ে উপত্যকায় নেমে আসে। এই প্রকার বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে।
66. স্থানীয় বায়ু কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ স্থান ভেদে প্রবাহিত বায়ুকে স্থানীয় বায়ু বলে। এই বায়ু দুই প্রকার। যথা – উষ্ণ বায়ু ও শীতল বায়ু।
67. কোন বায়ুকে কেন তুষার ভক্ষক বায়ু বলে?
উঃ চিনুক একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির বায়ু। উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পশ্চিম ঢালে দেখা যায়। এই বায়ু বরফকে গলিয়ে দেয় বলে একে ‘তুষার ভক্ষক’ বলে।
68. বোরা কী?
উঃ অ্যাডিয়াট্রিক সমুদ্র উপকুল অঞ্চলে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ুকে বোরা বলে।
69. ব্লিজার্ড কী?
উঃ রকি পর্বতের পুর্বদিকে বৃহৎ সমভূমিতে মাঝে মাঝে অতি শীতল ও তীব্র তুষার ঝড় হয়। একে ব্লিজার্ড বলে।
70. আকস্মিক বায়ু কাকে বলে?
উঃ আকস্মিকভাবে খুব জোরে ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে আকস্মিক বায়ু বলে।
71. ঘূর্ণবাত কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ ভূপৃষ্ঠের কোনো স্বল্প পরিসর যুক্ত স্থানে হঠাৎ করে যদি উষনতা বৃদ্ধি পায় তবে বায়ুচাপ আকস্মিকভাবে খুব কমে যায়। এর ফলে পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে অপেক্ষকৃত শীতল বাতাস ওই শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ঘূর্ণির আকারে ছুটে আসে। এটা উত্তপ্ত হয়ে উপরে ঘূর্ণির আকার ধারণ করে। এরূপ কেন্দ্রগামী ঊর্ধ্বগামী বায়ুকে ঘূর্ণবাত বলে।
72. ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
উঃ ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর পার্থক্যগুলি হল-
১) ঘূর্ণবাত ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রের উপর সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত উচ্চ অক্ষাংশের শীতল বায়ুপুঞ্জ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়।
২) ঘূর্ণবাতে কেন্দ্রে নিম্নচাপ ও বাইরে উচ্চচাপ থাকে।
অপরদিকে প্রতীও ঘূর্ণবাতে কেন্দ্রে উচ্চচাপ ও বাইরে নিম্নচাপ থাকে।
৩) ঘূর্ণবাত সাধারণত দুই-তিন দিন স্থায়ী থাকে।
অপরদিকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত একই স্থানে অনেকদিন অবস্থান করে।
৪) ঘূর্ণবাতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
অপরদিকে প্রতীপ ঘূর্ণবাতে আবহাওয়া শান্ত অ নির্মল থাকে।
৫) ঘূর্ণবাতে কেন্দ্রের বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়।
অপরদিকে প্রতীপ ঘুর্ণবাতে কেন্দ্রের বায়ু নিম্নগামী হয়।
৬) ঘূর্ণবাতে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অপরদিকে প্রতীপ ঘূর্ণবাতে ক্ষতির সম্ভাববা কম।
73. কোন মেঘে মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়?
উঃ নিম্বাস মেঘ।
74. ঘূর্ণবাতের চক্ষু ও চক্ষু দেওয়াল কাকে বলে?
উঃঘূর্ণবাতের কেন্দ্র থেকে ২০ কিমি ব্যাস পর্যন্ত অংশকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। এবং চক্ষুর বাইরের অংশে ১০ থেকে ১৫ কিমি পর্যন্ত অংশকে চক্ষু-দেওয়াল বলে।
75. জেটবায়ু কী?
উঃ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯-১২ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় যে শক্তিশালী বায়ু প্রবাহিত হয় তার নাম জেট বায়ু।
76. জলচক্র কাকে বলে? জলচক্রের উপাদানগুলি কী কী?
উঃ বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল এবং শিলামণ্ডলের মধ্যে জলের কঠিন, তরল গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থার সমন্বয়ে যে আবর্তন তাকেই জলচক্র বলে। জলচক্রের তিনটি উপাদান। এগুলি হল – বাষ্পীভবন, ঘনীভবন এবং অধঃক্ষেপন।
77. বাষ্পীভবন কাকে বলে?
উঃ সৌররশ্মির তাপীয় ফলের প্রভাবে সাগর, মহাসাগর, নদী, খাল, বিল, জলাশয়ের জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত হয়।যে প্রক্রিয়ায় জল বাষ্পে পরিণত হয় তাকে বাষ্পীভবন বলে।
78. বায়ুর আর্দ্রতা কাকে বলে?
উঃ বায়ুতে অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে। বায়ুর এই প্রকার জলীয় বাষ্পের ধারণ ক্ষমতাকেই বায়ুর আর্দ্রতা বলে।
79. আর্দ্র বায়ু কাকে বলে?
উঃ বায়ুতে যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ (৬০ শতাংশের) বেশি থাকে তখন তাকে আর্দ্র বায়ু বলে।
80. শুষ্ক বায়ু কাকে বলে?
উঃ বায়ুতে যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে তখন তাকে শুষ্ক বায়ু বলে।
81. আপেক্ষিক আর্দ্রতা কাকে বলে?
উঃ কোনো নির্দিষ্ট উষনতায় এবং নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং ওই বায়ুকে ওই একই উষ্ণতায় সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন সেই দুইয়ের অনুপাতকে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।
82. নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা কাকে বলে?
উঃ একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণকে নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা বলে।
83. নির্দিষ্ট বা বিশেষ আর্দ্রতা কাকে বলে?
উঃ নির্দিষ্ট ওজনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের মোট ওজনকে নির্দিষ্ট বা বিশেষ আর্দ্রতা বলে।
84. সম্পৃক্ত ও অম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে?
উঃ কোনো নির্দিষত উষনতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুর সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা আছে, যদি ওই বায়ুতে সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তাহলে তাকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে।
যদি কোনো বায়ুতে তার সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারনক্ষমতা অপেক্ষা কম জলীয় বাষ্প থাকে তাহলে তাকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে।
85. শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
উঃ যে বিশেষ তাপমাত্রায় বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছায় যেই তাপমাত্রাকে শিশিরাঙ্ক বলে।
86. বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ হাইগ্রোমিটার।
87. বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ সাইক্লোমিটার।
88. ঘনীভবন কাকে বলে?
উঃ বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক উষনতার নীচে নেমে গেলে ঐ বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তখন ঐ বায়ুর অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প, জলকণা অথবা বরফ কণায় রূপান্তরিত হবে। এভাবে জলীয় বাষ্প থেকে জলকণায় এবং বরফ কণায় রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে।
89. শিশির কাকে বলে?
উঃ যখন ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত কোনো শীতল বস্তু যথা ঘাস, পাতা ইত্যাদির ওপর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় তখন তাকে শিশির বলে।
90. কুয়াশা কাকে বলে?
উঃ শীতকালে সাধারণত দীর্ঘ রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকরণ করে ভোর রাত্রে অধিক শীতল হলে ভুপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর শীতল হয়ে শিশিরাঙ্কে পৌঁছালে বায়ুর জলীয় বাষ্প বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয়ে ভূমি সংলগ্ন নিম্নবায়ুস্তরে ভাসতে থাকে। একেই কুয়াশা বলে।
91. ধোঁয়াশা কাকে বলে?
উঃ সাধারণত শহরাঞ্চলে ধূলিকণা ও কলকারখান থেকে নির্গত প্রচুর ধোঁয়া ঘন কুয়াশার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ধূসর বর্ণের এক বিশেষ কুয়াশার সৃষ্টি হয় একে ধোঁয়াশা বলে।
92. মেঘ কাকে বলে?
উঃ জলকণা ও বরফকণার সমষ্টিকে মেঘ বলে।
93. অধঃক্ষেপন কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভবন প্রক্তিয়ায় কঠিন বা তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ওই কঠিন বা তরল পদার্থ ভুপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে অধঃক্ষেপন বলে।
94. পরিচলন বৃষ্টিপাত কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর যে সমস্ত স্থানে জলভাগের অবস্থান অপেক্ষাকৃত বেশি এবং সৌররশ্মি অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় সেখানে দিনের বেলায় অত্যধিক উষ্ণতার ফলে বায়ু উষ্ণ হয়ে উপরে ওঠে যায় এবং ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। পুনরায় শীতল হয়ে নেমে আসে, এইভাবে পরিচলন বৃষ্টি হয়।
95. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কাকে বলে?
উঃ শৈল কথার অর্থ পর্বত, অর্থাৎ জলীয় বাষ্প পূর্ণ বাতাস পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।
96. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উঃ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস পর্বত অনুবাত ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন অনুবাত ঢালে পৌঁছায় তখন তাতে জলীয় বাষ্প প্রায় থাকে না তাই বৃষ্টিপাত হয় না। এই কারণে অনুবাত ঢালকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
97. কোথায় পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ মেঘালয়ের মৌসিনরামে।
98. ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলে অথবা অন্য কোনো স্থানে যখন নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন চারদিক থেকে উচ্চচাপ অঞ্চলের ভিন্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাযুক্ত বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে উষ্ণ বায়ু হালকা হওয়ায় শীতল বায়ুর ওপর দিয়ে উপরে উঠে যায় এবং ঘনীভুত হয়ে বৃষ্টিপাত সৃষ্টি হয়। একে ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত বলে।
99. তুষারপাত কাকে বলে?
উঃ অধঃক্ষেপণের দরুণ বরফকণা যখন নীচে নামতে থাকে তখন বায়ুস্তরের তাপমাত্রা যদি ঋণাত্মক হয় তখন বরফ তাপে পরিণত হতে পারে না। ফলে কঠিন রূপে পতিত হয়। একেই তুষারপাত বলে।
100. শিলাবৃষ্টি কাকে বলে?
উঃ অনেক সময় ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্প ঘনীভুত হয়ে জলকণা বা তুষার কণায় পরিণত হয়, সেগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে বৃহৎ তুষার কণায় পরিণত হয়, তা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নীচে পতিত হলে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে।
101. শ্লিট কী?
উঃ বৃষ্টির ফোঁটা নীচে পতিত হবার সময় কখনও কখনও অতি শীতল বায়ুর স্তর ভেদ করে। তখন অধিক শীতলতার প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটা বরফকণায় পরিণত হয়ে নীচে পতিত হয়। একে শ্লিট বলে।
102. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ রেইন গেজ।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান
1. অ্যালবেডো কী?
উঃ পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ সূর্যরশ্মি আসে তার প্রায় ৪০ শতাংশ মেঘ, ধূলিকণা, ভূপৃষ্ঠ প্রভৃতি দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্যরশ্মির এই মহাশূন্যে প্রত্যাবর্তনকে বলে অ্যালবেডো।
2. তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস-হার কাকে বলে?
উঃ উচ্চতা অনুসারে বায়ুর তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাসকে তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস-হার বলে।
3. তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাসের হার কত?
উঃ তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাসের হার প্রতি ১ কিলোমিটার উচ্চতায় ৬.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
4. বায়ুর চাপ কী?
উঃ বায়ুর ওজনকে বায়ুর চাপ বলে।
5. বায়ুর চাপ কোন যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়?
উঃ ব্যারোমিটার।
6. একটি নিয়ত বায়ুর নাম কর।
উঃ আয়ন বায়ু।
7. একটি সাময়িক বায়ুর নাম লেখ।
উঃ মৌসুমী বায়ু।
8. চীন সাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের নাম কী?
উঃ টাইফুন।
9. সাইক্লোন কী?
উঃ বঙ্গোপসাগর বা আরবসাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত।
10. হ্যারিকেন কী?
উঃ পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত।
11. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কী বলে?
উঃ টর্নেডো।
12. বায়ুর তাপমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উঃ থার্মোমিটার।
13. কোন যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ করা হয়?
উঃ হাইগ্রোমিটার।
14. কোন মেঘে বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ নিম্বাস মেঘে বৃষ্টিপাত হয়।
15. বৃষ্টিপাত-মাপক যন্ত্রের নাম কী?
উঃ রেনগজ বা বৃষ্টিপাতমাপক যন্ত্র।
16. সমবর্ষণ রেখা কাকে বলে?
উঃ যে কাল্পনিক রেখা দিয়ে সমান বৃষ্টিপাত যুক্ত জায়গাগুলিকে যুক্ত করা হয়, সেই কাল্পনিক রেখাকে বলে সমবর্ষণ রেখা।
17. সমোষ্ণরেখা কাকে বলে?
উঃ যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের একই তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যুক্ত করা হয়, সেই কাল্পনিক রেখাকে বলে সমোষ্ণরেখা।
18. একটি স্থানীয় বায়ুর নাম লেখ।
উঃ লু।
19. একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের মোট পরিমাণকে কী বলে?
উঃ নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা।
20. আপেক্ষিপ আর্দ্রতা কী?
উঃ কোনও নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয় বাশপের পরিমাণ এবং একই উষ্ণতায় ঐ একই আয়তনের বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা -এই দুয়ের অনুপাতকে বলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা।
21. বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০ শতাংশ হলে সেই বায়ুকে কী বলে?
উঃ সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু।
22. বায়ুতে ভাসমান জলীয় বাষ্প যখন শীতল ভূ-পৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে জলকণায় পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উঃ শিশির।
23. কালবৈশাখীর সময় উত্তর-পশ্চিম আকাশে কী মেঘ দেখা যায়?
উঃ কিউমুলো-নিম্বাস।
24. উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণবাতের সময় বায়ুর গতি কোন দিকে থাকে?
উঃ ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে।
25. নিয়ত বায়ু কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কতকগুলি বায়ু সারা বছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। এদের নিয়ত বায়ু বলে। যেমন –আয়ন বায়ু।
26. কীভাবে বায়ুপ্রভাবের নামকরণ করা হয়?
উঃ বায়ু যেদিক থেকে আসে সেই দিক অনুসারে বায়ুপ্রবাহের নামকরণ করা হয়।
27. বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ কর।
উঃ চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা - নিয়ত বায়ু, সাময়িক বায়ু, আকস্মিক বায়ু ও স্থানীয় বায়ু।
28. মেঘ কাকে বলে?
উঃ ঊর্ধ্বাকাশে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণার সমষ্টিকে বলে মেঘ।
29. কোন প্রকার মেঘে অধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ নিম্বাস মেঘে।
30. ক্যাটাবেটিক বায়ু কী?
উঃ মাধ্যাকর্শন শক্তির প্রভাবে পর্বতের ঢাল বরাবর নিচের দিকে প্রবাহিত শীতল বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে।
31. অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?
উঃ জলীয় বাষ্পপূর্ণ ঊর্ধ্বগামী বায়ু ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণাগুলি যখন পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বড় ও ভারী হয়, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে। একে অধঃক্ষেপণ বলে।
32. সমচাপরেখা বা সমপ্রেষরেখা কাকে বলে?
উঃ যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে ভু-পৃষ্ঠের সমান চাপবিশিষ্ট স্থানগুলিকে যুক্ত করা হয় তাকে সমচাপরেখা বলে।
33. ফারেনহাইট থার্মোমিটারের হিমাঙ্ক কত?
উঃ ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
34. ফারেনহাইট থার্মোমিটারের স্ফুটনাঙ্ক কত?
উঃ ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
35. পম্পাস তৃণভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত শুষ্ক বায়ুকে কী বলে?
উঃ পাম্পেরো।
36. ‘ফন’ কী?
উঃ রাইন নদী-উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত স্থানীয় বায়ু।
37. বায়ুর গতি পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উঃ অ্যানিমোমিটার।
38. বায়ুর দিক নির্ণয়কারী যন্ত্রের নাম কী?
উঃ বাতপতাকা।
39. নিরক্ষীয় অঞ্চলে কী জাতীয় বৃষ্টি হয়?
উঃ পরিচলন বৃষ্টি।
40. আবহাওয়া ও জলবায়ুর দুটি উপাদানের নাম লেখ।
উঃ বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুর চাপ।
41. সমুদ্র উপকূলে দিবাভাগে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তার নাম কী?
উঃ সমুদ্র বায়ু।
42. বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?
উঃ ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরাল বা অনুভূমিকভাবে যখন বায়ু চলাচল করে, তখন তাকে বলে বায়ুপ্রবাহ।
43. ভূ-গোলকের কোন অংশে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ অত্যন্ত প্রবল?
উঃ দক্ষিণ গোলার্ধে বিশেষত ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ অত্যন্ত প্রবল।
44. পৃথিবীর গড় অ্যালবেডো কত?
উঃ ৪০ শতাংশ।
45. বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝ?
উঃ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ক্রমধ ওপরের দিকে অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। একে তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস-হার বলে। কিন্তু কোন কোন সময় উচ্চতা অনুসারে তাপমাত্রা না কমে বেড়ে যায় অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়, তাকে বৈপরীত্য উত্তাপ বলে।
46. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের নাম কর।
উঃ শিলং পাহাড় সংলগ্ন এলাকা।
47. অশ্ব-অক্ষাংশ কাকে বলে?
উঃ উত্তর গলার্ধের উপক্রান্তীয় শান্তবলয় অর্থাৎ ৩০ ডিগ্রি থেক ৩৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে।
48. উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় সেই বায়ুর নাম কী?
উঃ পশ্চিমা বায়ু।
49. ভূ-পৃষ্ঠে কয়টি বায়ুচাপ বলয় আছে?
উঃ সাতটি।
50. আয়ন বায়ু কাকে বলে?
উঃ উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাকে আয়ন বায়ু বলে।
51. উত্তর গোলার্ধে পর্বতের কোন ঢাল বেশি উষ্ণ?
উঃ দক্ষিণ ঢাল।
52. সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার জলবায়ুর প্রকৃতি কেমন হয়?
উঃ সমবাভাপন্ন।
53. দুই মেরু অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে কী প্রকার চাপ বিরাজ করে?
উঃ উচ্চচাপ।
বারিমণ্ডলঃ সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা
1. বারিমণ্ডল কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর যে বিশাল অংশে জলের অবস্থান লক্ষ করি তার নাম বারিমণ্ডল।
2. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উঃ প্রশান্ত মহাসাগর।
3. পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উঃ আটলান্টিক মহাসাগর।
4. ভূ-পৃষ্ঠের শতকরা কত ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে?
উঃ ৭০ ভাগ।
5. আটলাণ্টিক মহাসাগরের দুটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ।
উঃ উপসাগরীয় স্রোত ও ব্রেজিল স্রোত।
6. আটলাণ্টিক মহাসাগরের কোন অংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়?
উঃ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়।
7. সমুদ্রস্রোত বলতে কী বোঝ?। এইজন্য এই অংশের নাম শৈবাল সাগর।
উঃ সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্র জলরাশির এই প্রবাহকেই বলে সমুদ্রস্রোত।
8. সমুদ্র স্রোত কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ দুই প্রকার। যথা – উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত।
9. শীতল স্রোত কাকে বলে?
উঃ মেরু অঞ্চলের সমুদ্র থেকে শীতল জলরাশির যে স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে শীতল স্রোত বলে। যেমন- ল্যাব্রাডার।
10. উষ্ণস্রোত কাকে বলে?ে।
উঃ উষ্ণ জলের স্রোতকে উষ্ণস্রোত বলে। যেমন – গিনি স্রোত।
11. শৈবাল সাগর কী?
উঃ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, উপসাগরীয় স্রোত, ক্যানারী স্রোত প্রভৃতি মিলে একটি জলাবর্তের সৃষ্টি করে যার মধ্যভাগ স্রোতবিহীন। ফলে মধ্যভাগে নানারকম আগাছা, শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এইজন্য এই অংশের নাম শৈবাল সাগর।
12. ব্রেজিল স্রোত কাকে বলে?
উঃ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বাংশে ব্রেজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর যে উষ্ণ স্রোতটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয় তাকে ব্রেজিল স্রোত বলে।
13. বেঙ্গুয়েলা স্রোত কাকে বলে?
উঃ এটি আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের একটি শীতল স্রোত। দক্ষিণ মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়। এরই নাম বেঙ্গুয়েলা স্রোত।
14. হিমপ্রাচীর কী?
উঃ উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রায় সবুজ জল এবং উত্তরমুখী উষ্ণ মহাসাগরীয় স্রোতের ঘন নীল জলের মাঝখানে যে বিভাজন রেখা দেখা যায় তাকে হিমপ্রাচীর বলে।
15. হিমশৈল কাকে বলে?
উঃ সমুদ্রে ভাসমান বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপকে বলে হিমশৈল।
16. প্ল্যাঙ্কটন কী? কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ এক প্রকার ক্ষুদ্রাকার জীব। দুই প্রকার ফাইটো প্ল্যাঙ্কটন ও জু-প্ল্যাঙ্কটন।
17. আটলাণ্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী?
উঃ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় মধ্যাংশে পশ্চিমমুখী উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দুটির ঠিক মাঝখানে একটি স্রোত বিপরীত মুখে অর্থাৎ পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। একে বলে আটলান্টিকের নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত।
18. কুরেশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত কাকে বলে?
উঃ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশে বিশেষত জাপানের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত উষ্ণ স্রোতের নাম কুরেশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত।
19. জাপান উপকূল কোন স্রোতের প্রভাবে উষ্ণ থাকে?
উঃ কুরেশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোতের প্রভাবে।
20. বেরিং স্রোত কাকে বলে?
উঃ উত্তরের সুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত মেরুবায়ুর প্রভাবে বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে। একেই বলে বেরিং স্রোত।
21. মালাগাসি দ্বীপের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোতটির নাম কী?
উঃ মালাগাসি স্রোত।
22. হিমপ্রাচীর কোন মহাসাগরে দেখা যায়?
উঃ আটলাণ্টিক মহাসাগরে।
23. মগ্নচড়া বলতে কী বোঝ?
উঃ উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রতের মিলনস্থলে যে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় তাকে মগ্নচড়া বলে।
24. কাকে Thermal Regulatory বলে।
উঃ সমুদ্রস্রোতকে।
25. জোয়ার ভাঁটা কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর ওপর চন্দ্র ও সুর্যের পারপ্সরিক আকর্ষণে সমুদ্র ও নদীর জলের সময়ভিত্তিক ওঠানামকেই জোয়ার ভাটা বলে। জলের স্ফীত অংশকে জোয়ার ও অবনত অংশকে ভাটা বলে।
26. জোয়ার ভাটা সৃষ্টির দুটি কারণ লেখো।
উঃ জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণগুলি হল। যথা-
১) মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে।
২) কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে।
27. মুখ্য জোয়ার কাকে বলে?
উঃ আবর্তনের সময় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের নিকটতম সম্মুখে আসে সেখানে চাঁদের আকর্ষণ ক্ষমতা সর্বাধিক হওয়ার ফলে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে মুখ্য জোয়ার বা চন্দ্র জোয়ার বলে।
28. গৌণ জোয়ার কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীত অংশে (প্রতিপাদ স্থানে) কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
29. ভরা কোটাল কাকে বলে? কোন তিথিতে এই জোয়ার হয়?
উঃ পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। চন্দ্র ও সূর্যের মাঝে থাকে পৃথিবী। এরূপ অবস্থায় চন্দ্রের নিকটবর্তী পৃথিবীর অংশে হয় মুখ্য জোয়ার। এই জোয়ারের সময় জল অত্যধিক স্ফীত হয় বলে একে ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চন্দ্র একই সরলরেখায় অবস্থান করে এক্ষেত্রে চন্দ্র অ সূর্যের মিলিত আকর্ষণে সমুদ্রের জলস্ফীতি অনেক বেশি উঁচু হয় একেও ভরা কোটাল বলে। পূর্ণিমার তুলনায় অমাবস্যা তিথির জোয়ার বেশি তেজী হয়।
30. মরা কোটাল কাকে বলে? কোন তিথিতে মরা কোটাল হয়?
উঃ শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে সুর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর সঙ্গে সমকোণে অবস্থান করে। ফলে পৃথিবীর উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ তীব্র হয় না। পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের সম্মুখে থাকে সেখানে মুখ্য চন্দ্র জোয়ার ও যে অংশ সূর্যের সম্মুখে থাকে সেখানে সূর্যের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার হয়। উভয় ক্ষেত্রেই জোয়ারের তীব্রতা কম থাকে বলে একে মরা কোটাল বলে।
31. কী কী কারণে জোয়ার-ভাটা হয়?
উঃ পৃথিবীর আবর্তন গতি এবং পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণজনিত বলের কারণে।
32. চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে?
উঃ চন্দ্রের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলে।
33. সৌর জোয়ার কাকে বলে?
উঃ সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় রাকে সৌর জোয়ার বলে।
34. কোন স্থানে একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উঃ ৬ ঘণ্টা ১ মিনিট।
35. কোন স্থানে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উঃ ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট।
36. পৃথিবীর একটি স্থানে দিনে কত বার জোয়ার-ভাটা হয়?
উঃ দু-বার জোয়ার ও দু-বার ভাটা হয়।
37. কোন স্থানে যখন মুখ্য জোয়ার হয়, তার প্রতিপাদ স্থানে তখন কী অবস্থা বিরাজ করে?
উঃ গৌণ জোয়ার।
38. কোন স্থানে দু-বার মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উঃ ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট।
39. প্রত্যহ কতবার জোয়ার ভাটা হয়?
উঃ প্রত্যহ দু-বার জোয়ার ভাটা ও দু-বার ভাটা হয়।
40. ভরা কোটাল কোন দিনে হয়?
উঃ অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে।
41. দুই মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত?
উঃ ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট। । এইজন্য এই অংশের নাম শৈবাল সাগর।
42. জোয়ার-ভাটা খেলে এমন একটি নদীর নাম কর।
উঃ হুগলী নদী।
43. সিজিগি কী? সিজিগি অবস্থান কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ বছরের বিশেষ দিনে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এই সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে। এই অবস্থান দুই প্রকার। যথা –সহযোগ ও গতিযোগ।
44. সহযোগ অবস্থান কাকে বলে?
উঃ অমাবস্যা তিথিতে একই সরল রেখায় সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চন্দ্র অবস্থান করে। এই অবস্থানকে সহযোগ বলে। ে।
45. অ্যাপোজি কী?
উঃ পৃথিবীর উপগ্রহ চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। কক্ষপথের যে অবস্থায় চন্দ্র ও পৃথিবীর দুরত্ব সবচেয়ে বেশি তাকে অ্যাপোজি অবস্থান বলা হয়। এর ফলে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে অ্যাপোজি বা অপসূর জোয়ার বলে।
46. পেরিজি কী?
উঃ কক্ষপথের যে অবস্থায় চন্দ্র ও পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় তাকে পেরিজি অবস্থান বলা হয়। এর ফলে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে পেরিজি বা অনুসূর জোয়ার বলে।
47. বান ডাকা কী?
উঃ বর্ষাকালে সমুদ্র জলের চাপ অধিক থাকার কারণে জোয়ারের জল নদীর সংকীর্ণ খাতে প্রবল বেগে ও স্ফীত হয়ে অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করলে তাকে বান ডাকা বলা হয়।
48. কোন নদীতে ষাঁড়াষাড়ি বান দেখা যায়?
উঃ হুগলি নদীতে বর্ষাকালে।
49. একটি স্বাদু জলের হ্রদের নাম লেখ।
উঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সুপিরিয়র।
50. ভারতের একটি সুপেয় জলের হ্রদের নাম লেখ।
উঃ ডাল হ্রদ।
51. একটি লবণাক্ত জলের হ্রদের নাম লেখ।
উঃ জর্ডন-ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর।
52. চিল্কা কী জাতীয় হ্রদ?
উঃ লবণাক্ত জলের হ্রদ।
53. পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদের নাম কী?
উঃ কাস্পিয়ান।
54. পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের হ্রদের নাম কী?
উঃ আমেরিকার সুপিরিয়র।
55. পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা লবণাক্ত হ্রদ কোনটি?
উঃ জর্ডন-ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর।
56. পৃথিবীর গভীরতম হ্রদের নাম কী?
উঃ রাশিয়ার বৈকাল।
57. পৃথিবীর সর্বোচ্চ হ্রদের নাম কী?
উঃ দক্ষিণ আমেরিকার টিটিকাকা।
58. পৃথিবীর নিম্নতম হ্রদ কোনটি?
উঃ জর্ডন-ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর।
59. হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে কোন হ্রদ সৃষ্টি হয়?
উঃ করি হ্রদ।
60. ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি উপহ্রদের নাম কর।
উঃ চিল্কা, পুলিকট।
61. একটি উপহ্রদের নাম লেখ।
উঃ চিল্কা।
দুর্যোগ ও বিপর্যয়
1. দুর্যোগ কাকে বলে?
উঃ দুর্যোগ হল এমন এক প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা যা পরিবেশের ভারসাম্য অবস্থার বিচ্যুতি ঘটিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সাময়িকভাবে ব্যাহত করে।
2. বিপর্যয় কাকে বলে?
উঃ দুর্যোগ যখন প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক কারণে প্রচুর পরিমাণে সম্পদহানি ও বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনহানি ঘটায়, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সাময়িকভাবে অথবা দীর্ঘকাল ধরে স্তব্ধ করে দেয় তখন তাকে বিপর্যয় বলে।
3. দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
উঃ দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
১) দুর্যোগ হল এমন এক প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা যা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সাময়িকভাবে ব্যাহত করে।
বিপর্যয় হল এমন এক আকস্মিক ঘটনা যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সাময়িকভাবে বা দীর্ঘকাল ধরে স্তব্ধ করে দেয়।
২) প্রকৃতি হল দুর্যোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ। তবে মানুষ নিজের অবিবেচনাপ্রসূত কাজের জন্য দুর্যোগ ডেকে আনে। যেমন- খরা, বন্যা প্রভৃতি।
মানুষের কৃতকর্মের জন্য প্রাকৃতিক রোষে বিপর্যয় ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজন্য মানুষই দায়ী। যেমন- ভূপাল গ্যাস বিপর্যয়।
৩)প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশাল এলাকা জুড়ে ঘটে। কিন্তু মানুষের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ কম পরিসরে ঘটে থাকে।
তীব্রতা ও বিস্তৃতির মাপকাঠিতে বিপর্যয়ের মাত্রা ব্যাপক।
৪) দুর্যোগের ফলে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ হয় না।
১০ জনের লোক মারা গেলে ও ১০০ বা তার বেশি মানুষ আহত হলে এবং ১০০ মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলে তাকে বিপর্যয় বলে গণ্য করা হয়।
৫) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় দেশীয় অর্থনীতির ওপর বিশেষ চাপ পড়ে না।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি মাত্রায় হওয়ায় দেশীয় অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে।
4. Disaster শব্দটি কোথা থেকে এসেছে? এর অর্থ কী?
উঃ ‘Disaster’ শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘Desastre’ থেকে। যেখানে ‘Des’-এর অর্থ হল ‘Bad’ or ‘Evil’ (মন্দ) এবং ‘astre’ শব্দের অর্থ হল ‘star’ (তারা), অর্থাৎ ‘Bad or Evil Star’ বা ‘শয়তান তারা’। অতীতে মানুষ মনে করত শয়তান তারার প্রভাবেই প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসে।
5. বিপন্নতা কাকে বলে?
উঃ কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনাবলি বা পরিস্থিতি উপস্থিত হয় যা কোনো জনগোষ্ঠীকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে অসহায় করে তোলে, তাকে বিপন্নতা বা vulnerability বলে।
6. পরিবেশিক চাপ কাকে বলে?
উঃ দুর্যোগ ও বিপর্যয় বৃদ্ধি পেয়ে যদি প্রাকৃতিক পরিবেশের সহ্যের সীমা ও সমতা নষ্ট করে, সেই পরিস্থিতিকে পারিবেশিক চাপ বা Environmental Stress বলে।
7. ২০০১ সালে World Disater Report অনুযায়ী দুর্ঘটনাকে কখন বিপর্যয় বলা হবে?
উঃ ২০০১ সালে World Disater Report-এ বলা হয়েছে – কোনো দুর্ঘটনাকে তখনই বিপর্যয় বলে গণ্য করা হয়, যখন –
১) দশ বা তার বেশি মানুষের মৃত্যু হয়,
২) একশো বা তার বেশি মানুষ আহত হয়,
৩) পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সাহায্যের প্রয়োজন হয়,
৪) সরকারীভাবে আপতকালীন পরিস্থিতি ঘোষিত হয়।
8. হড়পা বান কী?
উঃ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অতধিক বৃষ্টি বা হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদের জলে আচমকা বাঁধ ফেটে বন্যার সৃষ্টি হলে, তাকে হড়পা বান (Flash Flood) বলে।
9. বন্যা কাকে বলে?
উঃ স্বাধারণত শুষ্ক কোনও ভূভাগ যখন বেশ কয়েকদিনের জন্য বিশাল জলরাশির দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ে, তখন তাকে বন্যা বলে।
10. কী কী কারণে বন্যা হয়?
উঃ বন্যা প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক উভয় কারণেই ঘটে। বন্যা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) দীর্ঘস্থায়ী ভারী বর্ষণ,
২) গ্রীষ্মে নদীতে তুষার গলা জলের আগমন,
৩) পলি সঞ্চয়ে নদীখাত মজে যাওয়া বা গভীরতা কমে যাওয়া,
৪) উপকূল অঞ্চলে আবহাওয়া বিশৃঙ্খল হলে জোয়ার ও ঢেউয়ের কারণে,
৫) ধসের কারণে নদীখাত বন্ধ বা গভীরতা কমলে বন্যা সৃষ্টি হয়।
বন্যা সৃষ্টির অপ্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) জলাধারের জল ছাড়া,
২) গাছ কাটার কারণে মাটির ক্ষয় বেড়ে গিয়ে নদীখাত মজে যাওয়া বা গভীরতা হ্রাস পাওয়া,
৩) নদী থেকে কাটা খালগুলির সংস্কার না করা,
৪) মিউনিসিপ্যালিটিগুলিতে অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাট করা এবং নিকাশি সংস্কার না করার কারণে বন্যা হয়।
11. বন্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
উঃ বন্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া যেতে পারে-
১) বিভিন্ন গণমাধ্যম যথা- রেডিও, টিভি প্রভৃতির মাধ্যমে বন্যার পূর্বেই বারবার জনগণকে সতর্ক করা প্রয়োজন।
২) বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে ঐ অঞ্চলে নিরাপদ দূরত্বে বন্যার হাত থেকে বাঁচার উপযুক্ত বৃহৎ গৃহ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
৩) বন্যা প্রবণ অঞ্চলের নদীগুলির নাব্যতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
৪) বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে প্রয়োজনে বিজ্ঞান সম্মতভাবে নদীতে বাঁধ দেওয়া অবং সঠিক সময়ে মেরামত করা প্রয়োজন।
৫) বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পানীয় জল এবং ঔষধের ও খাদ্যের যোগান রাখা প্রয়োজন।
12. খরা কাকে বলে?
উঃ কোনো অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি না হলে বা বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে জলের অভাবে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলা হয়।
13. কী কী কারণে খরা হয়?
উঃ খরার জন্য প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক উভয় কারণই দায়ী। প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়া।
২) মৌসুমি বায়ুর দেরিতে আগমন এবং তাড়াতাড়ি প্রত্যাবর্তন, মৌসুমি বায়ু প্রবাহের সময় বৃষ্টিপাত কম হওয়া।
৩) ভৌম জলস্তর নেমে যাওয়া ও বাষ্পীভবনের জন্য মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত আর্দ্রতা কমে যাওয়া।
৪) উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেটের পশ্চাৎপসরণে দেরি হলে মৌসুমি বায়ু আগমনে দেরি হয়, ফলে বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা যায়।
৫) এল নিনোর বছরগুলিতে কম বৃষ্টিপাতের কারণে খরা হয়।
অপ্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) গাছকাটার দরুণ বাষ্পীয় প্রস্বেদন দ্বারা বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে খরা হয়।
২) দূষণের কারণে কঠিন বস্তুকণা মিশলে বাতাসে আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং খরা সৃষ্টি করে।
14. খরার হাত থেকে মুক্তি পেতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
উঃ খরার হাত থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত ব্যাবস্থাগুলি নেওয়া যেতে পারে। যেমন-
১) বর্ষার জল ধরে রাখার জন্য জলাধার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
২) প্রচুর সংখ্যক গাছ লাগানো প্রয়োজন।
৩) খরা সহ্যকারী ফসলের চাষ করা উচিৎ।
৪) হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া, গোরু, মোষ প্রভৃতি পালনের উপর জোর দেওয়া উচিৎ।
৫) মাটির নীচ দিয়ে পাকা জল নির্গমন প্রণালী ও জলসেচ পদ্ধতি গড়ে তোলা উচিৎ।
৬) নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে জল ধরে রাখা প্রয়োজন।
15. ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে?
উঃ দীর্ঘকালীন উত্তাপের কারণে সৃষ্ট নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা বায়ুকেই ঘূর্ণিঝড় বলে।
16. ভারত কবে কেন জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করেছিল?
উঃ ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ওড়িশায় মহা ঘূর্ণিঝড় বা সুপার সাইক্লোন হয়, যার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২৬০ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এই বিপর্যয়কে ভারতে জাতীয় বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
17. হুদহুদ কী?
উঃ হুদহুদ একটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, যা ২০১৪ সালের ১৮ই অক্টোবর ভারতের পূর্ব উপকূলীয় অংশে আছড়ে পড়ে। এর দ্বারা বিশাখাপত্তনম শহরটি বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
18. ফাইলিন কী?
উঃ ফাইলিন একটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, এটি ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় ২২০ কিলোমিটার বেগে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে। এর দ্বারা ওড়িশার ৮০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়।
19. আয়লা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে?
উঃ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা।
20. ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
উঃ ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া যেতে পারে। যেমন-
১) ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস গণমাধ্যমের দ্বারা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।
২) উপকূল থেকে নিরাপদ দূরত্বে জনগণোকে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
৩) উপকূলের নিকটে গৃহ নির্মাণের ছাড়পত্র না দেওয়া।
৪) উপকূল সংলগ্ন অংশের গৃহগুলির ঝড় সহ্যক্ষমতা বেশি থাকা প্রয়োজন।
৫) পূর্বাভাস পাওয়ামাত্র ঝড়ে আক্রান্ত মানুষদের জন্য খাদ্য, পানীয় জল ও ঔষধের বন্দোবস্ত করা উচিৎ।
৬) ঝড়ের সময় সমুদ্রে যাওয়ার ব্যাপারে মৎসজীবিদের সতর্ক করা উচিৎ।
21. ভূমিকম্প কাকে বলে?
উঃ প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর অভ্যন্তরে হঠাৎ কোনো কম্পন সৃষ্টি হলে, তা যখন ভূত্বকের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য আন্দোলিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে।
22. কী কী কারণে ভূমিকম্প হয়?
উঃ ভূমিকম্প সৃষ্টিতে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উভয় কারণ দায়ী।
প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) দুটি ভূত্বকীয় পাতের সংঘর্ষ বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া,
২) অগ্ন্যুৎপাতের কারণে,
৩) ভূমিধ্বস বা হিমানী সম্প্রপাতের কারণে,
৪) চ্যুতির কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
অপ্রাকৃতিক কারণগুলি হল
১) নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ,
২) পর্বতগাত্রে বৃক্ষছেদন এবং রাস্তা ও গৃহনির্মাণ দ্বারা ভূমিধ্বসকে ত্বরাণ্বিত করা,
৩) পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ডিনামাইটের সাহায্যে পাহাড় ফাটানোর কারণে স্থানীয়ভাবে ভূমিকম্প হয়।
23. ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে?
উঃ ভূগর্ভে যেখানে কম্পনের উৎপত্তি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে।
24. ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কতটা নীচে থাকে?
উঃ ১৬ কিমি নীচে।
25. ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে?
উঃ ভূ-গর্ভে অবস্থিত ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি ওপরে ভু-পৃষ্ঠে অবস্থিত জায়গাটিকে বলে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র।
26. ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কী?
উঃ সিসমোগ্রাফ।
27. ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপক স্কেলটির নাম কী?
উঃ রিক্টার স্কেল।
28. কোন যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের উৎস নির্ধারণ করা হয়?
উঃ সিস্মোগ্রাফ।
29. সিস্মোগ্রাফের কাজ কী?
উঃ ভূমিকম্পের উৎসস্থল এবং তরঙ্গের গতিবিধি নির্ণয় করা।
30. ভারতের একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের নাম লেখ।
উঃ কুমায়ুন হিমায়ন অঞ্চল।
31. ভূ-অভ্যন্তরে উৎপন্ন ভূ-কম্প তরঙ্গগুলি ভূ-পৃষ্ঠে প্রথম কোথায় এসে লাগে?
উঃ ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রে এসে লাগে।
32. সম-ভূকম্পন রেখা বা আইসো-সিস্ম্যাল লাইন কাকে বলে?
উঃ যেসব জায়গায় ভূমিকম্পের তীব্রতা সমান অনুভুত হয় সেই জায়গাগুলিকে পরস্পর যগ করলে যে রেখা উৎপন্ন হয় তাকে সম-ভূকম্পন রেখা বা আইসো-সিস্ম্যাল লাইন বলে।
33. পৃথিবীর কোন দেশে বছরে সর্বাধিক ভূমিকম্প হয়?
উঃ জাপানে।
34. ভূমিকম্পের দেশ কাকে বলে?
উঃ জাপানকে।
35. সুনামি কী?
উঃ কোনো ভুমিকম্প যখন মহাদেশের তলায় সৃষ্টি না হয়ে সমুদ্রের তলায় সৃষ্টি হয় তখন ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশাল বিশাল ঢেউ সৃষ্টি করে উপকূলে আছড়ে পড়ে, একে সুনামি বলে।
36. সুনামি শব্দটির কোথা থেকে এসেছে? সুনামি শব্দটির অর্থ কী?
উঃ সুনামি একটি জাপানি শব্দ। ‘সু’-এর অর্থ সমুদ্রতীরের বন্দর এবং ‘নামি’ শব্দের অর্থ জলোছ্বাস। অর্থাৎ সুনামি শব্দের অর্থ হল ‘সমুদ্রতীরের বন্দরে জলোচ্ছ্বাস’।
37. ভূমিধস কাকে বলে?
উঃ পাহাড়ের ঢালে জমে থাকা মাটি ও পাথরের স্তূপ দ্রুত অথবা ধীর গতিতে অভিকর্ষজ টানে পার্বত্য ঢাল বেয়ে নেমে আসাকে ভূমিধস বলে।
38. পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আর কোথায় ভূমিধস হয়?
উঃ খনি অঞ্চলে, যথা- রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর।
39. ভূমিধসের প্রভাবগুলি কী কী?
উঃ ভূমিধসের প্রভাবগুলি হল-
১) মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়।
২) মাটিতে বসবাসকারী প্রাণীরা বিনষ্ট হয়, তাই বাস্তুতন্ত্রে বিঘ্ন ঘটে।
৩) ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়।
৪) নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়, রাস্তা ভেঙে যায়।
৫) কৃষির ক্ষতি হয়।
৬) অনেক ক্ষেত্রে ভূমিধস মানুষের জীবনহানি ঘটায়।
40. হিমানী সম্প্রপাত কাকে বলে?
উঃ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের তুষারক্ষেত্র পার্বত্য ঢালের সাথে ভারসাম্য হারালে ও মাধ্যাকর্ষণের টানে বিপুল পরিমাণ তুষারপুঞ্জ দ্রুতগতিতে নীচের দিকে নেমে আসাকে হিমানী সম্প্রপাত (Avalanches) বলে।
41. তুষার ঝড় বা ব্লিজার্ড কাকে বলে?
উঃ শীতপ্রধান অঞ্চলে অনেকসময় খুব জোরে (১২০ কিমি – ১৬০ কিমি প্রতি ঘন্টায়) তুষার সহ ঝড় বয়ে যায়। এর ফলে মাটি তুষারে আবৃত হয় এবং সমগ্র এলাকা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। একেই তুষার ঝড় (Blizzard) বলে।
42. কাকে The home of Blizzard বলে?
উঃ আন্টার্কটিকাকে।
43. অগ্ন্যুৎপাত কাকে বলে?
উঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে ভূত্বকের দুর্বল স্থান, ফাটল বা ছিদ্রপ্রথ দিয়ে ভূওভ্যন্তরের ধোঁয়া, বাষ্প, ভস্ম ও গ্যাস সহ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ নিঃশব্দে অথবা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসাকে অগ্ন্যুৎপাত বলে।
44. অগ্ন্যুৎপাতের উপকারিতা গুলি কী কী?
উঃ অগ্ন্যুৎপাত শুধু দানবের মত ধ্বংস করে না, উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা সৃষ্টি করে। আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে মূল্যবান রত্ন ও খনিজ পাওয়া যায়।
45. দাবানল সৃষ্টির কারণগুলি লেখো।
উঃ দাবানল সৃষ্টিতে মূলত প্রাকৃতিক কিয়দাংশে অপ্রাকৃতিক কারণ দায়ী।
প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) গাছের শুকনো ডালে জোরে ঘষা লাগা,
২) বজ্রপাতের কারণে,
৩) অরণ্যে বা সন্নিহিত অংশে অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি।
অপ্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১) স্থানান্তর কৃষি,
২) পথ চলতি মানুষের ধূমপানের অবশিষ্টাংশ,
৩) অরণ্য সন্নিহিত অংশে বনভোজন বা রান্নার কারণে অনেক সময় দাবানল সৃষ্টি হয়।
46. বিপর্যয় মোকাবিলায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উঃ বিপর্যয়কালে শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করতে পারে। যথা-
১) দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে চারপাশের মানুষজনকে সতর্ক করে দিতে হবে।
২) যে সমস্ত অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ, সেখানে যেতে হবে। মানুষজনদের সাথে কথা বলতে হবে। দুর্যোগ সম্পর্কিত সচেতনতা মূলক শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিতে হবে সবার মধ্যে।
৩) দুর্যোগ চলাকালীন অন্যান্য সংগঠকদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নেমে পড়তে হবে দুর্গতদের উদ্ধার কাজে।
৪) ত্রাণ বিতরণের সময় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। ORS, পানীয় জল, শুকনো খাবার দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের হাতে তুলে দিতে হবে।
৫) কোনো খরা বিপর্যস্ত অঞ্চলে জল পেতে সাহায্য করতে হবে।
৬) ত্রাণ শিবিরে সজাগ থাকতে হবে। কোনো মানুষ সেখানে কোনোরকম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে।
৭) মানসিক দিক দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে। মানুষের মনোবল ফিরে পেতে ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে হবে।
৮) গাছ যেহেতু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারে, তাই সুযোগমতো এলাকার চারপাশে গাছ লাগাতে হবে। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, তাদের সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং চারপাশের মানুষজনদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে।
47. পশ্চিমবঙ্গে কত সালে ডিজাস্টার ম্যানেজমেণ্ট অ্যাক্ট পাস হয়?
উঃ ২০০৭ সালে।
48. পশ্চিমবঙ্গে কটি প্রধান বিপর্যয় দেখা যায়?
উঃ চারটি। খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্প।
49. প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে?
উঃ দুর্যোগ সৃষ্টির জন্য যদি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক শক্তি দায়ী থাকে, তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে।
50. আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাকে বলে?
উঃ দুর্যোগ সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক শক্তি এবং কিছুটা অপ্রাকৃতিক শক্তি দায়ী থাকলে, তাকে আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে।
51. ORS এর পুরো নাম কী?
উঃ Oral Rehydration Solution।
52. বিপর্যয় লঘুকরণ দিবস পালন করা হয় কবে?
উঃ ১৩ই অক্টোবর।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
1. বর্জ্য কাকে বলে?
উঃ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার বা ভোগ করার পর অব্যবহারযোগ্য যে আবর্জনা তৈরি হয় সেগুলিকে বর্জ্য পদার্থ বলে?
2. বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
উঃ বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
১) অব্যবহার যোগ্য।
২) দুর্গন্ধযুক্ত
৩) এর ওজন আছে।
3. বর্জ্য কয় প্রকার ও কী কী?
উঃ পাঁচ প্রকার। কঠিন, তরল, গ্যাসীয়, বিষাক্ত ও বিষহীন এই পাঁচ প্রকার।
4. কঠিন বর্জ্য কাকে বলে?
উঃ কঠিন পদার্থে গঠিত যে সমস্ত দ্রব্য কিছুদিন ব্যহারের পর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে সেই সমস্ত দ্রব্যকে কঠিন বর্জ্য বলে। যেমন- ভাঙা বা পুরানো কাঠ, প্লাই, প্লাস্টিক, কাচ, বাড়ির ভাঙা দ্রব্য ইত্যাদি।
5. কঠিন বর্জ্যের উৎস কী?
উঃ গৃহস্থালী ও কারখানার আবর্জনা।
6. তরল বর্জ্য কাকে বলে?
উঃ প্রকৃতিতে উপস্থিত যে সমস্ত তরল ব্যবহারের অযোগ্য সেগুলিকে তরল বর্জ্য বলে। যেমন – গৃহস্থালির ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত জল, কারখানার পরিত্যক্ত জল, পয়ঃপ্রণালীর নোংরা জল ইত্যাদি।
7. গ্যাসীয় বর্জ্য কাকে বলে?
উঃ যে সব গ্যাসীয় পদার্থ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীজগতের জন্য ক্ষতিকর এবং বায়ুমণ্ডলের দূষণমাত্রা বাড়ায় তাদের গ্যাসীয় বর্জ্য বলে। যেমন – মোটর গাড়ি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে বা দাবানলে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।
8. বিষাক্ত বর্জ্য কাকে বলে?
উঃ যে সব বর্জ্য মানুষ ও প্রাণীদেহে প্রবেশ করে বিপাকীয় কাজে গোলযোগ সৃষ্টি করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে তাদের বিষাক্ত বর্জ্য বলে। যেমন – সীসা, আর্সেনিক, পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় কণা, DDT, BHC, ইত্যাদি।
9. বিষহীন বর্জ্য কী?
উঃ প্রকৃতিতে উপস্থিত কঠিন, তরল, গ্যাসীয় যেসমস্ত বর্জ্য পদার্থ সরাসরি জীবমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকারক নয়, বা ক্ষতির মাত্রা কম সেই বর্জ্যগুলিকে বিষহীন বর্জ্য বলে। যেমন – সবজির খোসা, বাথরুমের জল, আচের ধোঁয়া ইত্যাদি।
10. ল্যাণ্ড ফিল্ড কী?
উঃ কঠিন ও অর্ধ অতল বর্জ্য পদার্থ দ্বারা নিচু ভূভাগ ভরাট করাকে ল্যাণ্ডফিল্ড বলে।
11. কম্পোস্টিং কাকে বলে?
উঃ জৈব বিশ্লেষ্য বর্জ্য ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লেষণ করাকে কম্পোস্টিং বলে।
12. নিকাশী কাকে বলে?
উঃ যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তরল বর্জ্যগুলি অপসারণ করা হয় তাকে নিষ্কাষণ বা নিকাশী বলে।
13. স্কাবার কাকে বলে
উঃ যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূলত ধোঁয়া ও ধুলো নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় তাকে স্কাবার বলে।
14. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কবে গৃহীত হয়?
উঃ ১৯৮৫ সালে।
15. গ্যাসীয় বর্জ্যের বৈশিষ্ট্য কী?
উঃ ১। গ্যাসীয় বর্জ্য সরাসরি বায়ুমণ্ডলে মেশে।
২। প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্যাসীয় বর্জ্য সরাসরি মানুষের দেহে প্রবেশ করে।
৩। বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় বর্জ্যের মাত্রা বাড়লে বায়ুর দূষণ মাত্রা বাড়ে।
16. বিষাক্ত ও বিষহীন বর্জ্য কী কী?
উঃ বিষাক্ত বর্জ্যগুলি হল – সীসা, জিংক, আর্সেনিক, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় কণা প্রভৃতি।
17. পৌরসভার বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী?
উঃ ১। পৌরসভার প্রতিটি বাড়ির আবর্জনা।
২। পৌরসভার পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য।
৩। গাড়ি ও রাস্তা ধোয়া জল।
৪। হোটেল রেস্টুরেণ্টের বর্জ্য।
18. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী?
উঃ সীসা, ক্যাডমিয়াম, জিংক, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
19. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ?
উঃ জীববৈচিত্র্য রক্ষা, সমস্ত জীবকূলকে রোগের হাত থেকে রক্ষা, পরিবেশ দুষণ ও অবনমন রোধের উদ্দেশ্যে বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার এবং পুনর্নবীকরণ করাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
20. বর্জ্য পদার্থের প্রভাবে কী বৃষ্টি হয়?
উঃ অম্লবৃষ্টি।
21. কৃষিকার্যের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যকে কী বলে?
উঃ কৃষিজ বর্জ্য।
22. জৈব বর্জ্যের উৎস কী?
উঃ মৃত পশু, মানুষ ও প্রানীর মল মূত্র ও কাটা আগাছা প্রভৃতি।
23. জলদূষণে মানুষের শরীরে কোন বিষক্রিয়া হয়?
উঃ আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও পারদের বিষক্রিয়া।
24. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য কী? উদাহরণ দাও।
উঃ চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, হাড় ও অস্থি বিভাগ থেকে আসা বর্জ্য ও হাসপাতালের রোগীদের প্রাত্যহিক বর্জ্য প্রভৃতি।
25. জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ যেসকল জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় তাদের জৈব ভঙ্গুর পদার্থ বলে। যেমন- সবজি।
26. অজৈব ভঙ্গুর বর্জ্য বলতে কী বোঝ?
উঃ যেসকল জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয় না তাদের অজৈব ভঙ্গুর পদার্থ বলে। যেমন- ভাঙা কাঁচ।
27. বর্জ্য পৃথকীকরণ বলতে কী বোঝ?
28. ভরাট করণের গুরুত্ব আলোচনা করো।
29. তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াগুলি সংক্ষেপে লেখো।
30. ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।
31. পরিবেশের বর্জ্যের দুটি প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
32. গঙ্গা নদীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
উঃ ১। পৌরসভা ও কারকাখানার তরল বর্জ্য নিষ্কাষণ প্রক্রিয়ায় দূষণ মুক্ত করা।
২। কড়া আইনের দ্বারা কারখানার রাসায়নিক তরল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করা।
৩। বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, পুনর্ব্যবহার ও পুনশ্চক্রীকরণ নীতি কার্যকরী করা।
৪। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
33. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উঃ সমাজের একজন সদস্য হিসাবে শিক্ষার্থী বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন-
১) বাড়ির লোকজনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও ঘরে বর্জ্য পৃথকীকরন প্রক্রিয়া চালু করা।
২) শিক্ষার্থী নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং প্রতিষ্ঠানেরফাঁকা জায়গায় কম্পোস্টিং প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে।
৩) বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস ও পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে পারে।
৪) স্কুলের বর্জ্য কাগজ ও অন্যান্য বর্জ্য জাতীয় পদার্থ থেকে খেলনা বা অন্য ব্যবহার্য জিনিস তৈরি করার প্রচেষ্টা করতে পারে।
৫) Use and throw জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বর্জন করতে হবে।
34. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R নীতি কী?
উঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় বর্জ্যবস্তুর উৎপাদন কমানো। এই ব্যবস্থাপনা তিনটি R নীতি প্রয়োগ করা হয়। তিনটি R নীতি হল-
১। Reduce (কমানো)
২। Re-use (পুনর্ববহার)
৩। Recycle (পুনশ্চক্রীকরণ)।
মানচিত্র ও স্কেল
1. স্কেল কাকে বলে?
উঃ মানচিত্রের দুটি স্থান বা দূরত্ব এবং ভূপৃষ্ঠের ঐ দুটি স্থানের দূরত্বের অনুপাত মানচিত্রে যখন দেখানো হয়, তখন তাকে স্কেল বলে।
2. ম্যাপ (map) শব্দটির উৎস কী? এর অর্থ কী?
উঃ ল্যাটিন শব্দ ‘mappa’ থেকে এসেছে। এর অর্থ টেবিল ক্লথ বা চৌকো কাপড়ের টুকরো।
3. কে সর্বপ্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন?
উঃ গ্রীক পণ্ডিত অ্যানাক্সিম্যাণ্ডার (Anaximander) ।
4. পৃথিবীর প্রথম প্রকাশিত মানচিত্র কোনটি?
উঃ গেরারদাস মারকেটর (Gerardas Mercator)-এর মানচিত্র।
5. মানচিত্রের শ্রেণিবিভাগগুলি লেখো।
উঃ স্কেলের ভিত্তিতে মানচিত্র দুই প্রকার। যথা- বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র, ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র।
বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র আবার তিন প্রকার। যথা-
১) ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র (Topographical map) ।
২) প্ল্যান (Plan) ।
৩) মৌজা মানচিত্র (Cadastral map) ।
6. এটলাস মানচিত্র কী?
উঃ ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে মারকেটর এবং হন্ড যৌথভাবে সংগৃহীত মানচিত্রগুলিকে পুস্তকের আকারে প্রকাশ করেন। এই পুস্তকের প্রচ্ছদে গ্রীক-পুরাণে কথিত দৈত্য অ্যাটলাসের কাঁধে পৃথিবী ধারণ করার ছবি আঁকা আছে। সেই সময় থেকে অ্যাটলাসের নাম অনুসারে পুস্তকের আকারে প্রকাশিত মানচিত্রকে অ্যাটলাস বলা হয়।
7. উপস্থাপন বা প্রকাশ করার ভঙ্গি অনুযায়ী স্কেল কয় প্রকার কী কী?
উঃ তিন প্রকার। যথা- বিবৃতিমূলক স্কেল, ভগ্নাংশসূচক স্কেল ও লৈখিক স্কেল।
8. লৈখিক স্কেল কাকে বল?
উঃ যখন কোনো স্কেলকে রেখার আকারে এঁকে দেখানো হয়, তখন তাকে লৈখিক স্কেল বলে।
9. রৈখিক স্কেল কাকে বলে?
উঃ যখন কোনো স্কেলকে সরলরেখার আকারে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে রৈখিক স্কেল বলে।
10. দিগংশ কী?
উঃ উত্তর রেখা থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে কোনো রেখা যত ডিগ্রি কোণে হেলে অবস্থান করছে, সেটি ঐ রেখার দিগংশ।
11. স্কেচ কী?
উঃ স্কেল ছাড়া অঙ্কিত চিত্রকে স্কেচ বলে।
12. ভূ-প্রকৃতি, নননদী বিষয়ক মানচিত্রকে কি বলা হয়?
উঃ প্রাকৃতিক মানচিত্র।
13. ভারতীয় জরিপ বিভাগ কোন মানচিত্র প্রকাশ করে?
উঃ গ্রিড সমন্বিত ভূবৈচিত্র্য সূচক মানচিত্র (Topographical map) ।
14. দেওয়াল মানচিত্র কোন মানচিত্রের উদাহরণ?
উঃ ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র (Small Scale map) ।
15. ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র কাকে বলে?
উঃ যে মানচিত্র নির্দিষ্ট স্কেলে, নির্দিষ্ট অভিক্ষেপে ও নির্দিষ্ট পরিসরে বিস্তৃর্ণ ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ প্রচলিত প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে বিশদভাবে চিত্রায়িত করা হয় তাকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা Topographical Map বলা হয়।
16. ভগ্নাংশসূচক স্কেল কী?
উঃ মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমিভাগের দূরত্ব যখন ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে ভগ্নাংশ সূচক স্কেল বা Representative Fraction বলে।
R.F. = মানচিত্র দূরত্ব/ভূমি দূরত্ব।
17. বিবৃতিমূলক স্কেল কী?
উঃ মানচিত্রে স্কেলকে যখন কথায় বা ভাষায় প্রকাশ করা হয় তখন তাকে বিবৃতিমূলক স্কেল বলে।
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র
1. উপগ্রহ বলতে কী বোঝ?
উঃ উপগ্রহ একটি যান্ত্রিক বস্তু যা একটি নির্দিষ্ট পথে গ্রহের (মূলত পৃথিবীর) চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে তাকে উপগ্রহ বলে। এই উপগ্রহ পৃথিবীপৃষ্ঠের তথ্য, আবহাওয়া তথ্য প্রভৃতি সংগ্রহ করে।
2. উপগ্রহ চিত্র কাকে বলে?
উঃ দুর সংবেদন ব্যবস্থায় উপগ্রহের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের যে আলোকচিত্র তৈরি করা হয় তাকে উপগ্রহ চিত্র বলা হয়।
3. উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার লেখো।
উঃ ১) বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয় যেমন ভূমিরূপ, নদনদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ইত্যাদি সম্বন্ধে বিশেষভাবে জানা যায়।
২) পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (যেমন সড়ক পথ, রেলপথ, বসতি) সম্বন্ধে জানা যায়।
৩) প্রতিরক্ষা বা সামরিক প্রয়োজনে এই মানচিত্র বেশি ব্যবহৃত হয়।
4. ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র কাকে বলে?
উঃ কোন অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি যে মানচিত্রে প্রচলিত প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয় তাকে ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র বলে।
5. ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে ব্যবহার করা হয় এমন দুটি স্কেলের নাম লেখো।
উঃ বিবৃতিমুলক স্কেল, গ্র্যাফিক্যাল স্কেল, ভগ্নাংশসূচক স্কেল।
6. পৃথিবী পৃষ্ঠের ছবি তোলার জন্য যে দু-ধরণের উপগ্রহ ব্যবহৃত হয় সেগুলি কী কী?
উঃ জিওস্টেশনারী উপগ্রহ, সান-সিনক্রোনাস।
7. ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নাম কী?
উঃ ISROাই অক্সাইড ইত্যাদি।
8. ভারতের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
উঃ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায়।
9. ভারত প্রথম কত সালে সফলভাবে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে?
উঃ ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে।
10. দূর-সংবেদন ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উঃ পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে না এসে ওই বস্তু সম্পর্কে তথ্য, যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয় তাকে দূর-সংবেদন ব্যবস্থা বলে।
11. গ্র্যাফিক্যাল স্কেল কাকে বলে? এর প্রচলিত নাম কী?
উঃ সরলরেখার মাধ্যমে যে স্কেল প্রকাশ করা হয় তাকে গ্র্যাফিক্যাল স্কেল বলে।
12. টোপোসীট কী?
উঃ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের আর এক নাম টোপোসীট।
13. উপগ্রহ চিত্রে আলোর মূল উৎস কী?
উঃ সূর্য।
14. ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি কাকে বলে?
উঃ সূর্যের আলো পৃথিবীপৃষ্ঠে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্য ফিরে যায়। একে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি
15. টার্গেট কাকে বলে?
উঃ পৃথিবী পৃষ্ঠের যে অংশের চিত্র তোলা হয় তাকে টার্গেট বলে।
16. Sensor কাকে বলে?
উঃ টার্গেট থেকে প্রতিফলিত আলো রেকর্ড করার যন্ত্রকে Sensor (ক্যামেরা) বলে।
17. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ Sensor কাকে বলে?
উঃ দিনের আলোয় সক্রিয় Sensor কে পরোক্ষ Sensor এবং রাত্রি বেলায় যে Sensor সক্রিয় থাকে তাকে প্রত্যক্ষ Sensor বলে।
18. আবহাওয়ার তথ্য প্রেরণের জন্য কে কতসালে প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে?
উঃ ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
19. অ্যাস্ট্রোস্যাট উপগ্রহ কবে উৎক্ষেপণ করা হয়?
উঃ ২০১৫ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর।
20. অ্যাস্ট্রোস্যাট উপগ্রহ এর কাজ কী?
উঃ এক্স রে, গামা রশ্মি, অতি বেগুনি রশ্মি, তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র সম্বন্ধে খুঁটি নাটি তথ্য জানাবে।
☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উত্তর"
Post a Comment