হিসাববিজ্ঞান

হিসাববিজ্ঞান


যারা চাকরির জন্য প্রচুর পড়াশুনা করছেন তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হিসাববিজ্ঞান ।

এই পোষ্টটিতে আমরা প্রায় পরীক্ষায় আসা হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কিত বিসয় আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি ।

লেনদেন
লেনদেনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য :
১. লেনদেনের ফলে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থায় (A=L+OE) অবশ্যই পরিবর্তন আসবে
২. লেনদেন অবশ্যই আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য
৩. পণ্য দ্রব্য বা সেবার বিনিময় থাকতে হবে
৪. দ্বৈতসত্ত্বার অধিকারী হতে হবে (ডেবিট ও ক্রেডিট)
লেনদেন লিপিবদ্ধ করার ভিত্তি :
সাধারণত ২টি ভিত্তির উপরে লেনদেনকে লিপিবদ্ধ করা হয়-
১. বকেয়া ভিত্তি বা প্রাপ্য-প্রদেয় ভিত্তি
২. নগদান ভিত্তি
১. বকেয়া বা প্রাপ্য-প্রদেয় ভিত্তি : এ ভিত্তিতে যখন আয় অর্জিত বা সংঘটিত হয়, তখনই লেনদেনটিকে আয় বা ব্যয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয় (নগদ অর্থ প্রাপ্তি বা পরিশোধ না হলেও)।
আধুনিক হিসাববিজ্ঞান বকেয়া ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত
হিসাববিজ্ঞানের সর্বসাধারণ গৃহীত নীতিমালা (GAAP) অনুযায়ী বকেয়া ভিত্তিতে হিসাব-নিকাশ করা হয়
২. নগদান ভিত্তি : এ ভিত্তিতে শুধুমাত্র নগদ টাকার প্রাপ্তি ও প্রদানের ঘটনা ঘটলেই তা লিপিবদ্ধ করা হয়।
এটি GAAP স্বীকৃত নয়
হিসাব
লেনদেনের সংক্ষিপ্ত শ্রেণীবদ্ধ বিবরণকে হিসাব বলে। আর্থিক ঘটনা বা লেনদেনের সমজাতীয় পক্ষগুলোকে উপযুক্ত শিরোনামে ও নির্দিষ্ট ছকে সংক্ষিপ্তাকারে প্রদর্শিত বিবরণীকে হিসাব বলে।
লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ
লেনদেনে জড়িত হিসাবসমূহকে তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় (হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র)
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব ৩ প্রকার-
হিসাবের ধরন
ডেবিট
ক্রেডিট
ব্যক্তিবাচক হিসাব
সুবিধা গ্রহণকারী
সুবিধা প্রদানকারী
অব্যক্তিবাচক হিসাব
সম্পত্তিবাচক হিসাব
সম্পত্তি আসলে
সম্পত্তি গেলে
নামিক হিসাব
ব্যয় ও ক্ষতি হলে
আয় ও লাভজনক
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
হিসাবের স্বাভাবিক জের
হিসাব
স্বাভাবিক জের
সম্পদ হিসাব
ডেবিট
দায় হিসাব
ক্রেডিট
মূলধন হিসাব
ক্রেডিট
আয় হিসাব
ক্রেডিট
ব্যয় হিসাব
ডেবিট

হিসাব চক্র
হিসাব চক্র বলতে হিসাববিজ্ঞানের ধারাবাহিক কারযপ্রক্রিয়াকে বুঝায়। হিসাব্বিজ্ঞানের চলমান প্রতিষ্ঠান ধারনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানের কারযাবলী অনন্ত কাল ধরে চলতে থাকবে। এই অনিরদিষ্ট জীবনকে হিসাবকাল বলে। প্রত্যেক হিসাবকালে হিসাব সংক্রান্ত কারযাবলী ধারাবাহিকভাবে চক্রাকারে সংগঠিত হয়। হিসাব সংক্রান্ত কারযাবলীর এই পরযায়ক্রমিক ধারাবাহিকতা এবং এদের পুনরাবৃত্তিকে হিসাবচক্র বলে।
হিসাবচক্রের ঐচ্ছিক ধাপ
কার্যবিবরনী প্রস্তুতকরণ
বিপরীত দাখিলা দেয়া
ভুল সংশোধনী দাখিলা দেয়া
লিপিবদ্ধকরণ ধাপ
লেনদেন বিশ্লেষণ
জ়াবেদা দাখিলা প্রদান
জ়াবেদার তথ্য সমূহ খতিয়ানে স্থানান্তর

হিসাব সমীকরণ
প্রতিটি লেনদেন ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে এ প্রভাব দুটি পক্ষের উপর (ডেবিট ক্রেডিট) সমভাবে পরিলক্ষিত হয়। লেনদেনের এই প্রভাব আর্থিক অবস্থার উপর নির্দিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় হিসাব সমীকরণ। এক কথায়, হিসাব সমীকরণের দ্বারা একটি লেনদেনের প্রভাব সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হিসাব ব্যবস্থার মধ্যে চিহ্নিত করা যায়।
হিসাব সমীকরণ :
A = L + OE
এখানে,
A = Assets (সম্পত্তি)
L = Liabilities (দায়)
OE = Owner’s Equity (মালিকানা স্বত্ত্ব)
সম্পত্তি : সম্পত্তি হলো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন এবং কোন বস্তু যা প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যত সুবিধা প্রদান করবে। সম্পত্তি সাধারণত মূলধনজাতীয় ব্যয় থেকে সৃষ্টি হয় এবং ভবিষ্যত সুবিধা প্রদান করে। যেমন- আসবাবপত্র, দালানকোঠা, বকেয়া আয়, অগ্রিম ব্যয়, সুনাম, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক, নগদ জমা, ব্যাংকে জমা, লাভ-লোকসান আবণ্টন হিসাবের ডেবিট উদ্বৃত্ত, ইত্যাদি।
দায় : সম্পত্তির বিপরীতে মালিক ব্যতীত তৃতীয় পক্ষের দাবীকে দায় বলে। যেমন- বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বকেয়া ব্যয়, অনুপার্জিত আয়, ঋণপত্র, বন্ধকী ঋণ, ইত্যাদি।
মালিকানা স্বত্ত্ব : সম্পত্তির বিপরীতে মালিকের দাবীকে মালিকানা স্বত্ত্ব বা মূলধন বলে। যেমন- শেয়ার মূলধন, শেয়ার অধিহার, জমাকৃত মুনাফা, সাধারণ সঞ্চিতি, বিশেষ সঞ্চিতি, ইত্যাদি।
হিসাব লেনদেনের প্রকারভেদ : প্রত্যেকটি লেনদেন এই হিসাব সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলে। লেনদেনের এই প্রভাবকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন
২. গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন
১. পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন : যদি কোনো লেনদেনের দ্বারা হিসাব সমীকরণের দুই পাশই সমপরিমাণ অংক দ্বারা হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, তাহলে তা পরিমাণগত বা নীট পরিবর্তন। যেমন- নগদে বেতন প্রদান করা হলো ২,০০০ টাকা। এর ফলে সম্পত্তি (নগদ) ও মালিকানা স্বত্ত্ব (বেতন) উভয়ই ২,০০০ টাকা হ্রাস পায়।
২. গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন : যদি কোনো লেনদেনের দ্বারা হিসাব সমীকরণের শুধুমাত্র একটি পাশ পরিপূরকভাবে হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা গুণগত বা কাঠামোগত পরিবর্তন। যেমন- নগদে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো ৫,০০০ টাকা। এর ফলে সম্পত্তি (নগদ) একবার হ্রাস পায়, এবং আরেকবার সম্পত্তি (আসবাবপত্র) বৃদ্ধি পায়।
সম্পত্তি
দায় ও মূলধন
সম্পত্তি : সম্পত্তি হল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন এমন কিছু বস্তু বা উপাদান যা প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যত সুবিধা প্রদান করে।
কোন Cost-এর যে অংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বর্তমান হিসাবকালে ব্যবহৃত হয়, তা Expense (ব্যয় বা খরচ) হিসেবে বিবেচ্য হয়। অন্যদিকে, Cost-এর যে অংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বর্তমান হিসাবকালে ব্যবহৃত হয় না, তা-ই Asset বা সম্পত্তি।
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
স্থায়ী সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তি একটি হিসাবকালের অধিক সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাদের স্থায়ী সম্পত্তি বলে। এদের উপর অবচয় ধার্য করা হয়। ঐতিহাসিক মূল্য নীতি অনুযায়ী স্থায়ী সম্পত্তিকে অর্জন মূল্যে বা ক্রয়মূল্যে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
এদের দীর্ঘ জীবন রয়েছে
এ ধরনের সম্পত্তি পুনরায় বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করা হয় না
উদাহরণ : আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, ভূমি, দালানকোঠা, ইত্যাদি
চলতি সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তি শুধুমাত্র একটি হিসাবকালের মধ্যেই এর যাবতীয় সুবিধা প্রদান করে, তাদের চলতি সম্পত্তি বলে। চলতি সম্পত্তি মূল্যায়নে হিসাববিজ্ঞানের রক্ষণশীলতার নীতি (সীমাবদ্ধতা) অনুসরণ করা হয়।
চলতি সম্পত্তি একটি হিসাবকালের মধ্যেই ব্যবহার করা হয় বা নগদ মূল্যে রূপান্তর করা যায়
উদাহরণ : নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা, প্রাপ্য হিসাবসমূহ, প্রাপ্য নোট, প্রাপ্য আয়, স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ, মজুদ পণ্য, অগ্রপ্রদত্ত ব্যয়, ইত্যাদি
স্পর্শনীয় সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তির বাহ্যিক বা কাঠামোগত রূপ রয়েছে, তাদেরকে স্পর্শনীয় সম্পত্তি বলে।
উদাহরণ : ল্যাপটপ, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা, ইত্যাদি
অস্পর্শনীয় সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তির বাহ্যিক বা কাঠামোগত রূপ রয়েছে, তাদেরকে স্পর্শনীয় সম্পত্তি বলে।
উদাহরণ : সুনাম, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, প্যাটেন্ট, গ্রন্থস্বত্ব, প্রাথমিক খরচ, শেয়ার অবহার, ঋণপত্রের অবহার, ফ্র্যাঞ্চাইজ, ইত্যাদি
বাস্তব সম্পত্তি : যে সম্পত্তির বাজারমূল্য বা বিক্রয়যোগ্যতা রয়েছে, তাকে বাস্তব সম্পত্তি বলে।
উদাহরণ :
স্পর্শনীয় বাস্তব সম্পত্তি : যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, দালানকোঠা, অফিস সরঞ্জাম, ইত্যাদি
অস্পর্শনীয় বাস্তব সম্পত্তি : সুনাম, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, গ্রন্থস্বত্ব, ইত্যাদি
অবাস্তব সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তিকে কোন মূল্যেই কারো নিকট বিক্রয় করা যায় না, বা যে সকল সম্পত্তির কোন বাজারমূল্য নেই, তাদেরকে অবাস্তব সম্পত্তি বলে।
অবাস্তব সম্পত্তি অলীক সম্পত্তি/ কাল্পনিক সম্পত্তি/ ভুয়া সম্পত্তি নামেও পরিচিত
ব্যবসায়ের সকল অসমন্বয়কৃত ব্যয়সমূহ এর অবাস্তব সম্পত্তি
উদাহরণ :
স্পর্শনীয় বাস্তব সম্পত্তি : পুরাতন পরিত্যক্ত দালানকোঠা,
অস্পর্শনীয় বাস্তব সম্পত্তি : শেয়ার ও ঋণপত্রের বাট্টা, লাভ-লোকসান আবণ্টন হিসাবের ডেবিট উদ্বৃত্ত, প্রাথমিক খরচাবলী, ইত্যাদি
ভাসমান বা ত্বরিত সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে শূণ্য ঝুঁকিতে বা অল্প ঝুঁকিতে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়, তাকে ভাসমান বা ত্বরিত সম্পত্তি বলে।
নগদ টাকা প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক তরল বা ত্বরিত সম্পত্তি
ত্বরিত সম্পত্তি = চলতি সম্পত্তি – মজুদ পণ্য
উদাহরণ : নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা, দেনাদার, প্রাপ্য বিল, অগ্রপ্রদত্ত ব্যয়, স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ, ইত্যাদি
ক্ষয়িষ্ণু সম্পত্তি : যে সকল সম্পত্তি প্রাকৃতিক বা ব্যবহার জনিত কারণে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, সেগুলোকে ক্ষয়িষ্ণু সম্পত্তি বলে।
এদের উপর অবচয় ধার্য না করে অবলোপন ধার্য করতে হয়
উদাহরণ : কয়লার খনি, তেলের খনি, গ্যাসফিল্ড, বনাঞ্চল, জলাশয়, ইত্যাদি
দায় : ব্যবসায়ের সম্পত্তির বিপরীতে যে কোন পক্ষের দাবীকেই দায় বলে। তবে সাধারণত দায় বলতে আমরা বহির্দায়কেই বুঝি। আর বহির্দায় হল সম্পত্তির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানের বহিঃস্থ পক্ষের দাবী।
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী দায় : যে সকল দায় ব্যবসায় একাধিক হিসাবকাল ধরে পরিচালনা করে সেগুলোকে স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী দায় বলে।
উদাহরণ : দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, বন্ধকী ঋণ, ঋণপত্র, ইত্যাদি
চলতি বা স্বল্পমেয়াদী দায় : যে সকল দায় ব্যবসায়কে একটি হিসাবকালে বা স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় সেগুলোকে চলতি বা স্বল্পমেয়াদী দায় বলে।
স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী দায়ের চলতি অংশ একটি চলতি বা স্বল্পমেয়াদী দায় (দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চলতি অংশ)
উদাহরণ : প্রদেয় হিসাবসমূহ, প্রদেয় বিল বা নোট, প্রদেয় ব্যয়, স্বল্পমেয়াদী ঋণ, প্রদেয় লভ্যাংশ, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চলতি অংশ, ইত্যাদি
সম্ভাব্য দায় : যে সকল ঘটনার কারণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যতে দায় সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেগুলোকে সম্ভাব্য দায় বলা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের পূর্ণ প্রকাশ নীতি অনুসারে সম্ভাব্য দায়কে উদ্বৃত্তপত্রের ফুটনোটে দেখানো হয় (মূল অংশে দেখানো হয় না)
উদাহরণ : বাট্টাকৃত বিনিময় বিল মেয়াদপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত, বিচারাধীন মামলার দাবি, জামিন সংক্রান্ত দেনা, চুক্তিভঙ্গের খেসারত দেয়ার সম্ভাবনা, ইত্যাদি
মালিকানা স্বত্ব : ব্যবসায় সম্পত্তির বিপরীতে মালিকের/ শেয়ারহোল্ডার/ অংশীদারদের দাবিকে মালিকের মূলধন বা মালিকানা স্বত্ব বলা হয়। এটি ব্যবসায়ের অন্তর্দায়।
মালিকানা স্বত্ব = সাধারণ শেয়ার + অগ্রাধিকার শেয়ার + শেয়ার অধিহার + জমাকৃত মুনাফা + মূলধন সঞ্চিতি + সাধারণ সঞ্চিতি + অন্যান্য সঞ্চিতি বা তহবিল
উদাহরণ : মালিকের মূলধন, সাধারণ শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার, শেয়ার অধিহার, জমাকৃত মুনাফা, মূলধন সঞ্চিতি, সাধারণ সঞ্চিতি, অন্যান্য সঞ্চিতি বা তহবিল, ইত্যাদি
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
স্থায়ী মূলধন : ব্যবসায়ের স্থায়ী সম্পত্তিসমূহ অর্জনের জন্য যে ব্যয় হয় তাকে স্থায়ী মূলধন বলে।
উদাহরণ : দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, ইত্যাদি ক্রয়ে বিনিয়োগকৃত অর্থ
কার্যকরী মূলধন : ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য য়ে অর্থ ব্যবহৃত হয়, তাকে কার্যকরী মূলধন বলে। ব্যবসায়ের চলতি সম্পত্তি থেকে চলতি দায় বাদ দিলে ব্যবসায়ের কার্যককরী বা চলতি মূলধন পাওয়া যায়।
চলতি বা কার্যকরী মূলধন = চলতি সম্পত্তি – চলতি দায়

ধারণা সংক্রান্ত কাঠামো

হিসাব বিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযোগী তথ্য ব্যবহারকারীর নিকট উপস্থাপন করা। এই তথ্য কখন কিভাবে এবং কার নিকট উপস্থাপন করা হবে, এবং উপস্থাপিত তথ্যের কি কি গুণাগুণ থাকতে হবে, তা নিয়ে হিসাববিজ্ঞানের ধারণা সংক্রান্ত কাঠামো আলোচনা করে। Financial Accounting Standard Board (FASB) এই ধারণা, নীতি ও সীমাবদ্ধতাগুলো প্রণয়ন করে।
চিত্রে থাকতে পারে: পাঠ্য
হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণাবলী
প্রাথমিক গুণাবলী
প্রাসঙ্গিকতা : একটি তথ্য প্রাসঙ্গিক হবে, যদি সে তথ্য আমাদের ভবিষ্যতে কোন বিষয় অনুমান করতে সাহায্য করে। একই সাথে তা যদি সময়মতো ব্যবহারকারীর নিকট উপস্থাপিত হয়। যেমন- এ বছরের সমাপনী মজুদ পণ্যের জের কতো রয়েছে তা আমাদের আগামী বছরের ক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করবে। এবং এই জের এই বছরের শেষেই নির্ধারণ করতে হবে।
সহায়ক গুণাবলী
বিশ্বাসযোগ্যতা : হিসাববিজ্ঞান পরিবেশিত তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। যেমন, ভাউচার, ক্যাশ মেমো, ইত্যাদি। এবং একই সাথে তা পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে।
তুলনাযোগ্যতা : হিসাববিজ্ঞান তথ্য প্রতিষ্ঠানের বিগত হিসাবকালের তথ্যের সাথে এব্ং একইসাথে সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের হিসাবতথ্যের সাথে তুলনাযোগ্য হতে হবে।
সামঞ্জস্যতা : কোন প্রতিষ্ঠানের হিসাবতথ্য প্রতি হিসাবকালে একই নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন- একটি সম্পত্তির অবচয় নির্ধারণের জন্য যদি সরলরৈখিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাহলে প্রত্যেকটি হিসাবকালে সরলরৈখিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
ধারণা, নীতি ও সীমাবদ্ধতা
বিভিন্ন তথ্য ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, লাভ-ক্ষতি হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্রে কোথায় প্রদর্শন করতে হবে, কিভাবে এবং কতটুকু প্রদর্শন করতে হবে, এ বিষয়গুলো হিসাববিজ্ঞানের কয়েকটি ধারণা, নীতি ও সীমাবদ্ধতার উপর নির্ভর করে।
ধারণা
হিসাববিজ্ঞানের ধারণাসমূহ লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের ভিত্তি হতে শুরু করে তা হিসাববিজ্ঞানের বিবরণীসমূহে প্রদর্শনের পদ্ধতির সম্পর্কে ধারণা দেয়।
১. আর্থিক মূল্যের একক ধারণা : হিসাববিজ্ঞানে সেই সব তথ্যই লিপিবদ্ধ করা যাবে, যা অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যায়। যেমন- ব্যবসায়ের একজন দক্ষকর্মীর ‍মৃত্যু ব্যবসায়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেললেও তা আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করা যায় না বিধায় লিপিবদ্ধ হবে না।
২. ব্যবসায় স্বত্ত্বা ধারণা : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় মালিক পৃথক স্বত্ত্বা। এবং হিসাববিজ্ঞান শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য হিসাব সংরক্ষণ করবে।
৩. চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা : একটি প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেগুলো হল-
সম্পত্তিকে চলতি এবং স্থায়ী হিসেবে ভাগ করা হয়
দায়কে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে ভাগ করা হয়
অগ্রিম প্রদত্ত ব্যয়কে সম্পদ ও অগ্রিম প্রদত্ত আয়কে দায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়
সম্পত্তির অবচয় ধার্য করা হয়
৪. সময়কাল/ হিসাবকাল ধারণা : চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে থাকা প্রতিষ্ঠানের সময়কালকে কতগুলো ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলোকে হিসাবকাল বলা হয়। যেমন- ১ বছর, ৬ মাস, ৪ মাস, ইত্যাদি। এবং নির্দিষ্ট সময়কালের শেষে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা হয়।
নীতিসমূহ
১. ক্রয়মূল্য/ ঐতিহাসিক মূল্য নীতি : এই নীতি অনুসারে ব্যবসায়ের স্থায়ী সম্পত্তিগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক মূল্য বা ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করতে হয়।
২. আয় স্বীকৃতি নীতি : আয় স্বীকৃতি নীতি অনুসারে আমরা ঐ সকল আয়কে লিপিবদ্ধ করবো যা ঐ নির্দিষ্ট হিসাবকালে অর্জিত হয়েছে। এই নীতি অনুসারে-
অগ্রিম আয়কে দায় হিসেবে দেখানো হয়
বকেয়া আয়কে সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়
৩. ব্যয় স্বীকৃতি/ সমন্বয়/ মিলকরণ নীতি : এই নীতি অনুসারে নির্দিষ্ট হিসাবকালে প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিপরীতে খরচগুলো দেখিয়ে প্রকৃত ফলাফল নির্ণয় করা হয়। ব্যয় নগদে বা বকেয়ায় যেভাবেই সংঘটিত হয় না কেনো, তাকে ঐ বছরের আয়ের বিপরীতে চার্জ করতে হয়। এজন্য-
ব্যয়ের সাথে বকেয়া ব্যয় যোগ করতে হয় এবং অগ্রিম ব্যয় বাদ দিয়ে দেখানো হয়
অবচয় হিসাবভুক্ত করা হয়
৪. পূর্ণ প্রকাশ নীতি : হিসাববিজ্ঞান তথ্যের ব্যবহারকারীদের ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পূর্ণ প্রকাশ নীতি ব্যবহৃত হয়। এ নীতি অনুযায়ী-
জাবেদার ব্যাখ্যা দেয়া হয়
ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী তৈরি করা হয়
ভুল সংশোধনী জাবেদা দেয়া হয়
আর্থিক বিবরণীতে টাকার পরিমাণের আন্তর্কলাম ও বহির্কলাম দেখানো হয়
আর্থিক বিবরণীতে খসড়া ও টীকা অন্তর্ভূক্ত করা হয়
সীমাবদ্ধতাসমূহ
১. বস্তুনিষ্ঠতার সীমাবদ্ধতা : হিসাববিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠতা সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী তথ্য তার গুরুত্ব অনুসারে পরিবেশিত হয়। যেমন- ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মনিহারিকে (কলম, পেন্সিল, স্কেল, কার্বন পেপার) একই শিরোনামের অধীনে দেখানো হয়।
২. রক্ষণশীলতা সীমাবদ্ধতা : হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লাভের দিক থেকে চিন্তা না করে সম্ভাব্য ক্ষতির দিক ভেবে লেনদেন লিপিবদ্ধ করাকে হিসাববিজ্ঞানের রক্ষণশীলতার সীমাবদ্ধতা বলে। এজন্য-
সমাপনী মজুদ পণ্য নির্ধারণের সময় ক্রয়মূল্য ও বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি কম তা লিপিবদ্ধ করা হয়
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি সৃষ্টি করা হয়
উদ্বৃত্তপত্রে দেনাদার থেকে অনাদায়ী পাওনা বাদ দিয়ে নীট মূল্যে দেখানো হয়

মূলধন ও মুনাফা
জাতীয় আয় – ব্যয়
মূলধন জাতীয় আয় –ব্যয়
যে সব আয়-ব্যয়ের কার্যকারিতা একাধিক হিসাবকালে বিদ্যমান থাকে তাদেরকে মূলধন জাতীয় আয়-ব্যয় বলে। যেমন-
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় সংক্রান্ত খরচাবলি।
স্থায়ী সম্পত্তি কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির খরচাবলি।
মূলধন জাতীয় আয়-ব্যয় এর বৈশিষ্ট্য :
অনিয়মিত ভাবে সংঘটিত হয়।
বৃহৎ অঙ্কের লেনদেন।
একাধিক হিসাব কালে প্রভাব ফেলে।
এ ধরনের লেনদেন এর ফলে স্থায়ী সম্পত্তি বা অফেরত যোগ্য দায়ের সৃষ্টি হয়।
আর্থিক বিবরণীর উদ্বৃত্ত পত্রে প্রকাশ করা হয়।
মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয়
যে সব আয়-ব্যয়ের কার্যকারিতা একটি হিসাবকালের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাদেরকে মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয় বলে। যেমন-
চলতি সম্পত্তির ক্রয় সংক্রান্ত খরচাবলি।
ব্যবসায় পরিচালনা সংক্রান্ত খরচাবলি।
মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয় এর বৈশিষ্ট্য :
নিয়মিত ও দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে সৃষ্টি হয়।
অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঙ্কের হয়।
শুধুমাত্র একটি হিসাব কালে প্রভাব ফেলে।
আয়-ব্যয় বিবরণীতে প্রকাশ করা হয়।
বিলম্বিত মুনাফা জাতীয় ব্যয়
যে সব মুনাফা জাতীয় ব্যয় একটি হিসাব-কালে নিঃশেষ না হয়ে পরবর্তী কয়েকটি হিসাবকালে নিঃশেষ হয় তাকে বিলম্বিত মুনাফা জাতীয় ব্যয় বলে।
বিলম্বিত মুনাফা জাতীয় ব্যয়ের বৈশিষ্ট্য
এই মুনাফা জাতীয় ব্যয়গুলো বড় অংকের হয়ে থাকে।
কয়েকটি হিসাব-কালে ভাগ করে দেয়া হয়।
প্রত্যেক বছরের খরচের অংশ আয়-ব্যয় বিবরণীতে ডেবিট করে দেখানো হয় এবং বাকি অংশ আর্থিক বিবরণীতে সম্পত্তি হিসাবে দেখানো হয়।
জাবেদা
জাবেদা হচ্ছে হিসাবচক্রের প্রথম স্তর। হিসাব নিকাশের যে প্রাথমিক বইতে দৈনন্দিন সংঘটিত লেনদেনসমুহ চিহ্নিত করে ডেবিট ক্রেডিটে বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে প্রতিদিন লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জ়াবেদা বলে।
জাবেদা দাখিলার কাঠামোগত শ্রেণীবিভাগ
সরল দাখিলা: কোন একটি জাবেদা দাখিলায় যদি শুধু দুটি হিসাবখাত জড়িত থাকে অর্থাৎ একটি ডেবিট ও সমপরিমান একটি-ই ক্রেডিট পক্ষ থাকে তবে তাকে সরল দাখিলা বলে।
মিশ্র দাখিলা: কোন একটি লেনদেনের জাবেদা দাখিলায় দুইয়ের অধিক হিসাবখাত জড়িত থাকলে তাকে মিশ্র দাখিলা বলে। এতে মোট ডেবিট ক্রেডিট টাকার পরিমান অবশ্যই সমান হবে।
জাবেদার সাধারণ শ্রেণীবিভাগ
বিশেষ জাবেদা
সাধারণ জাবেদা
বিশেষ জাবেদা: সমজাতীয় লেন দেনসমুহ স্বতন্ত্রভাবে লিপিবদ্ধ করার জন্য যে জাবেদা ব্যবহার করা হয় তাকে বিশেষ জাবেদা বলে।
সরল দাখিলা
মিশ্র দাখিলা
বিক্রয় জাবেদা : ধারে বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
ক্রয় জাবেদা : ধারে ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
ক্রয়ফেরত জাবেদা : ধারে ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
বিক্রয়ফেরত জাবেদা : ধারে বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
নগদপ্রাপ্তি জাবেদা : নগদ অর্থ প্রাপ্তি সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
নগদপ্রদান জাবেদা : নগদ অর্থ প্রদান সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
প্রাপ্য বিল জাবেদা : দেনাদারের নিকট থেকে প্রাপ্য বিল সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
প্রদেয় বিল জাবেদা : পাওনাদারের নিকট প্রদেয় বিল সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়
সাধারণ জাবেদা: যে সকল দাখিলা সমুহ কোন বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না তাদেরকে যে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে সাধারণ জাবেদা বলে।
প্রারম্ভিক দাখিলা : নতুন ব্যবসায় শুরু করার সময় এবং হিসাবকালের শুরুতে শুধুমাত্র বাস্তব হিসাবগুলো নিয়ে যে দাখিলা দেয়া হয়, তাকে প্রারম্ভিক দাখিলা বলে। এই দাখিলার উদ্দেশ্য পূর্ববর্তী হিসাবকালের বাস্তব হিসাবসমূহকে (সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা স্বত্ত্ব) পরবর্তী বছরে নিয়ে আসা। এই জাবেদা চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী দেয়া হয়।
সমাপনী দাখিলা : হিসাবকালের শেষে অস্থায়ী হিসাবগুলোকে/নামিক হিসাব বন্ধ করে দেয়ার জন্য যে দাখিলা দেয়া হয়, তাকে সমাপনী দাখিলা বলে। এই জাবেদা হিসাবকাল ধারণা, আয় স্বীকৃতি নীতি ও ব্যয় স্বীকৃতি নীতি অনুযায়ী দেয়া হয়। সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া অস্থায়ী হিসাবগুলো হলো-
১. সকল আয় হিসাব
২. সকল ব্যয় হিসাব
৩. মালিকের উত্তোলন হিসাব
সমন্বয় দাখিলা : সাধারণ নিয়মে হিসাব রাখার পরেও কিছু কিছু লেনদেন একাধিক হিসাবকালের জন্য সংঘটিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট হিসাবকালের কিছু অর্জিত আয় ও সংঘটিত ব্যয় হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হয় না। এ সকল অসমন্বিত হিসাবসমূহকে সমন্বিত করার জন্য যে দাখিলা দেয়া হয়, তাকে সমন্বয় জাবেদা বলে। এই দাখিলা হিসাবকাল ধারণা এবং আয় স্বীকৃতি নীতি ও ব্যয় স্বীকৃতি নীতি অনুযায়ী দেয়া হয়।
সমন্বয় জাবেদার প্রকারভেদ : সমন্বয় জাবেদাকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়-
১. অগ্রিম সমন্বয় জাবেদা
২. বকেয়া সমন্বয় জাবেদা
১. অগ্রিম সমন্বয় জাবেদা : অগ্রিম সমন্বয় জাবেদাকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়-
ক) অগ্রিম ব্যয় : প্রাথমিকভাবে অগ্রিম ব্যয়কে সম্পত্তি হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হলেও হিসাবকালের সমাপ্তিতে এর ব্যবহৃত অংশ ব্যয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে দেখাতে হয়। অগ্রিম ব্যয়ের সমন্বয় জাবেদা-
সংশ্লিষ্ট ব্যয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট অগ্রিম ব্যয় হিসাব ক্রেডিট
এ সমন্বয় দেখানো না হলে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বেশি দেখানো হবে এবং ব্যয় কম দেখানো হবে।
খ) অগ্রিম আয় বা অনুপার্জিত আয় : প্রাথমিকভাবে অগ্রিম বা অনুপার্জিত আয়কে দায় হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হলেও হিসাবকালের সমাপ্তিতে এর ব্যবহৃত অংশ আয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে দেখাতে হয়। অগ্রিম বা অনুপার্জিত আয়ের সমন্বয় জাবেদা-
সংশ্লিষ্ট অগ্রিম বা অনুপার্জিত আয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট আয় হিসাব ক্রেডিট
এ সমন্বয় দেখানো না হলে প্রতিষ্ঠানের দায় বেশি দেখানো হবে এবং আয় কম দেখানো হবে।
২. বকেয়া সমন্বয় জাবেদা : বকেয়া সমন্বয় জাবেদাকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়-
ক) বকেয়া আয় : প্রাথমিকভাবে কোন সেবা প্রদানের পর আয়ের অর্থ পাওয়া না গেলে তাকে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু প্রাপ্য অর্থ আদায়ের পরে উক্ত সম্পত্তিকে কমিয়ে দেখাতে হয়। অগ্রিম বা অনুপার্জিত আয়ের সমন্বয় জাবেদা-
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি (নগদান/ব্যাংক) হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট আয় হিসাব ক্রেডিট
এ সমন্বয় দেখানো না হলে প্রতিষ্ঠানের আয় এবং সম্পত্তি কম দেখানো হবে।
খ) প্রদেয় বা বকেয়া ব্যয় : প্রাথমিকভাবে ব্যয় সংঘটনের পরে তার অর্থ পরিশোধ না করলে তাকে দায় হিসেবে দেখাতে হয়। প্রদেয় বা বকেয়া ব্যয়ের সমন্বয় জাবেদা-
সংশ্লিষ্ট ব্যয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট বকেয়া ব্যয় হিসাব ক্রেডিট
এই সমন্বয় দেখানো না হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং দায় কম দেখানো হবে।
স্থানান্তর দাখিলা : একটি হিসাবের জেরকে অপর একটি হিসাবে স্থানান্তর করার জন্য যে দাখিলা দেয়া হয় তাকে স্থানান্তর দাখিলা বলে।
ভুল সংশোধনী দাখিলা : হিসাববিজ্ঞানের রক্ষণশীলতা নীতি অনুযায়ী কোন ভুল দাখিলা কেটে ঠিক করা যায় না। এর জন্য আলাদা একটি ভুল সংশোধনী জাবেদা দিতে হয়। এটি হিসাববিজ্ঞানের একটি পরিত্যাজ্য ধাপ।
বিপরীত দাখিলা : পূর্ববর্তী হিসাবকালে সমন্বয় দাখিলার বিপরীতে পরবর্তী হিসাবকালে এর ঠিক উল্টো যে দাখিলা দেয়া হয়, তাকে বিপরীত দাখিলা বলে।
খতিয়ান
লেনদেন শ্রেণীবিন্যাস করণ/ খতিয়ান
হিসাবনিকাশের যে পাকা বইতে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনগুলোর বিভিন্ন প্রকার পক্ষ সমূহকে পৃথক পৃথক শিরোনামে শ্রেণীবদ্ধভাবে সংক্ষিপ্তাকারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এক কথায় একটি প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাবের সমষ্টিগত রূপকে খতিয়ান বলা হয়।
খতিয়ানের ছক
সাধারন ছক
আদর্শ বা চলমান জের ছক
আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী হিসাবের শ্রেনীবিভাগ :
নামিক হিসাব/সাময়িক হিসাব : যে হিসাবের জেরগুলো হিসাবকালের শেষে লাভ-ক্ষতি হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে শূণ্য করে দেয়া হয়, তাকে নামিক বা সাময়িক হিসাব বলে। যেমন- আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সকল হিসাব।
স্থায়ী হিসাব/বাস্তব হিসাব : যে হিসাবের জেরগুলো হিসাবকালের শেষে পরবর্তী হিসাবকালে স্থানান্তর করা হয়, তাকে স্থায়ী বা বাস্তব হিসাব বলে। যেমন- সম্পত্তি ও দায় সংক্রান্ত সকল হিসাব।
খতিয়ানের শ্রেণীবিভাগ
সাধারন খতিয়ান
সহকারী খতিয়ান
সাধারন খতিয়ান: যে খতিয়ানে সম্পত্তি, দায় এবং স্বত্তাধিকার সম্পর্কিত সকল হিসাবসমুহ সংরক্ষণ করা হয় তাকে সাধারন খতিয়ান বলা হয়।
সহকারী খতিয়ান: সাধারন খতিয়ানে সংক্ষিপ্তাকারে লিপিবদ্ধ একটি হিসাবের বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য উক্ত হিসাবের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষের এক একটি স্বতন্ত্র হিসাবে যে খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে সহকারী খতিয়ান বলে।
ডেবিট নোট
ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত পাঠিয়ে কিংবা কোন প্রকার ভুল সংশোধন করার জন্য ক্রেতা বিক্রেতার হিসাবকে ডেবিট করে তা বিক্রেতাকে অবহিত করার জন্য যে পত্র ইস্যু করে তাকে ডেবিট নোট বলে।
ক্রেডিট নোট
বিক্রেতার কাছে বিক্রিত পণ্য ফেরত আসলে কিংবা কোন প্রকার ভুল সংশোধন করার জন্য বিক্রেতা ক্রেতার হিসাবকে ক্রেডিট করে তা ক্রেতাকে অবহিত করার জন্য যে পত্র ইস্যু করে তাকে ক্রেডিট নোট বলে।
রেওয়ামিল
গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই/ রেওয়ামিল
আয়, ব্যয়, সম্পত্তি ও দায় জাতীয় হিসাবগুলোর জেরগুলোকে ডেবিট-ক্রেডিট অনুযায়ী সাজিয়ে হিসাবের শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য তৈরি তালিকাকে রেওয়ামিল বলে। সকল ব্যক্তিবাচক, সম্পত্তি বাচক ও নামিক হিসাব রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত হয়। জাবেদায় লেনদেনগুলোকে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে কি না, এবং খতিয়ানের জেরগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে কি না, তা রেওয়ামিলের মাধ্যমে জানা যায়।
সীমাবদ্ধতা : হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ার কিছু ভুল রেওয়ামিলের মাধ্যমে ধরা পরেনা। রেওয়ামিলে যে সব ভুল ধরা পরে না, সেগুলো ২ প্রকার-
১. নীতিগত ভুল
২. করণিক ভুল
ক) বাদ পড়ার ভুল
খ) লেখার ভুল
গ) পরিপূরক ভুল
ঘ) বে-দাখিলার ভুল
১. নীতিগত ভুল : হিসাবরক্ষণের নীতিমালা লঙ্ঘন করে/ না মেনে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হলে তাকে নীতিগত ভুল বলে। যেমন- বিলম্বিত বিজ্ঞাপনকে সম্পত্তি হিসাবে না দেখিয়ে ব্যয় হিসাবে দেখালে তা হবে নীতিগত ভুল। কারণ, বিলম্বিত বিজ্ঞাপনের প্রভাব একাধিক হিসাবকালের উপর বণ্টিত হয়। কিন্তু ব্যয় হিসাবে দেখানো হলে তা শুধুমাত্র একটি বছরের উপর চার্জ করা হয়।
২. করণিক ভুল :
করণিক ভুল ৪ ধরনের-
ক) বাদ পড়ার ভুল : লিপিবদ্ধকরণের সময় কোন লেনদেন সম্পূর্ণরূপে বাদ পড়লে তাকে বাদ পড়ার ভুল বলে। যেমন- ৫,০০০ টাকা ধারে পণ্য ক্রয় লিপিবদ্ধ করা হলো না। কারণ, এর ফলে ৫,০০০ টাকার ক্রয় কম দেখানো হচ্ছে (ডেবিট দিকে কমে যাচ্ছে ৫,০০০ টাকা) এবং ৫,০০০ টাকার পাওনাদার কম দেখানো হচ্ছে (ক্রেডিট দিকে কমে যাচ্ছে ৫,০০০ টাকা)।
খ) লেখার ভুল : লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় টাকার অংকে ভুল হলে তাকে লেখার ভুল বলে। যেমন- ৫,০০০ টাকার ক্রয়কে ৫০০ টাকায় লিপিবদ্ধ করা হলো। এখানে, ডেবিট ও ক্রেডিট উভয় দিকে ৪,৫০০ টাকা কম দেখানো হচ্ছে।
গ) পরিপূরক ভুল : লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় একাধিক ভুল হলে, এবং তাদের একটির দ্বারা অপরটি সংশোধিত হলে তাকে পরিপূরক ভুল বলে। যেমন- ৫,০০০ টাকার একটি ক্রয়কে ৪,০০০ টাকায় চার্জ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেতন ৪,০০০ টাকার বদলে ৫,০০০ টাকায় চার্জ করা হয়েছে। এখানে, প্রথম লেনদেনে ১,০০০ টাকা ডেবিট দিকে কম দেখানো হয়েছে। এবং দ্বিতীয় লেনদেনে ১,০০০ টাকা ডেবিট দিকে বেশি দেখানো হয়েছে।
ঘ) বে-দাখিলার ভুল : লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় কোন নির্দিষ্ট হিসাবকে ডেবিট বা ক্রেডিট করার বদলে সমজাতীয় অন্য হিসাবকে ডেবিট বা ক্রেডিট করলে তাকে বে-দাখিলার ভুল বলে। যেমন- ৫,০০০ টাকার বেতনকে ৫,০০০ টাকার ভাড়া হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
নোট :
সম্পত্তি হিসাবের ক্রেডিট ব্যালেন্স মানে করণিক ভুল
দায় হিসাবের ডেবিট ব্যালেন্স মানে করণিক ভুল
নগদান বই
নগদান বই : যে বিশেষ জাবেদায় নগদ লেনদেনসমূহ তারিখের ক্রমানুযায়ী প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে নগদান বই বলে। নগদ প্রাপ্তি ও প্রদানসমূহ প্রাথমিকভাবে নগদান বইতে লিপিবদ্ধ করা হলেও এ বিশেষ জাবেদাটির ছকে খতিয়ান হিসাবের মতো ডেবিট ও ক্রেডিট দু’টি পার্শ্ব থাকে। এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে এর জের নির্ণয় করা হয়। ফলে এটি জাবেদা হলেও খতিয়ানের মতো পাকাপাকি ভাবে লেনদনে সংক্ষণ করে। তাই একে জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই বলা হয়।
নগদান বই থেকে হাতে নগদের প্রারম্ভিক ও সমাপনী জেরের পরিমাণ জানা যায়।
নগদান বইয়ের শ্রেণীবিভাগ :
একঘরা নগদান বই : এই বইতে কেবল একটি টাকার ঘর থাকে। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নগদ প্রাপ্তি ডেবিট দিকে এবং নগদ প্রদান ক্রেডিট দিকে লিপিবদ্ধ করতে হয়। একঘরা নগদান বই শুধুমাত্র ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে। ক্ষেত্রবিশেষে শূণ্য উদ্বৃত্ত হলেও কখনোই ক্রেডিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে না।
দু’ঘরা নগদান বই : কারবারের নগদ লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেনগুলোও লিপিবদ্ধ করার জন্য দু’ঘরা নগদান বই সংরক্ষণ করা হয়। দু’ঘরা নগদান বইয়ে দু’টি টাকার কলাম থাকে- নগদ কলাম ও ব্যাংক কলাম। নগদ কলামে সর্বদা ডেবিট উদ্বৃত্ত হলেও ব্যাংক কলাম ডেবিট বা ক্রেডিট উভয় উদ্বৃত্তই প্রকাশ করতে পারে।
পাল্টা দাখিলা : কোনো লেনদেনের ফলে একই সাথে নগদান বইয়ের নগদ টাকা বৃদ্ধি বা হ্রাস এবং ব্যাংকের টাকা হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে যে দাখিলা দেয়া হয়, তাকে পাল্টা দাখিলা বলে।
তিনঘরা নগদান বই : নগদ ও ব্যাংক লেনদেনের পাশাপাশি বাট্টা প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনগুলো তিনঘরা নগদান বইতে লেখা হয়। এজন্য টাকার অতিরিক্ত একটি কলাম রাখা হয়।
বাট্টা : প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বা ব্যবসায়িক চুক্তির ভিত্তিতে পণ্যের চালানমূল্য বা প্রাপ্য অর্থ/পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে যে অর্থ মওকুফ করা হয়, তাকে বাট্টা বলে। বাট্টা একটি অনগদ লেনদেন। কারণ বাট্টা প্রাপ্তি বা প্রদান, কোনো ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ের নগদ তহবিলের কোন পরিবর্তন হয় না।
বাট্টার প্রকারভেদ : বাট্টা ২ প্রকার-
১. কারবারি বাট্টা
২. নগদ বাট্টা
কারবারি বাট্টা : ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যে বাট্টা দেয়া হয় তাকে কারবারি বাট্টা বলে। কারবারি বাট্টা কোন হিসাব বহিতে হিসবাভুক্ত হয় না।
নগদ বাট্টা : দেনাদারের কাছ থেকে দ্রুত টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রাপ্য অর্থ হতে যে বাট্টা দেয়া হয়, তাকে নগদ বাট্টা বলে। নগদ বাট্টা নগদান বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু এর ফলে নগদ তহবিলের কোন পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ নগদ বাট্টার ফলে কারবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও নগদ তহবিলের কোন পরিবর্তন হয় না, তাই একে নগদ বাট্টা বলে।
এটি ব্যবসায়ের জন্য ব্যয় এবং দেনাদারের জন্য আয়।
খুচরা নগদান বই : প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট খরচগুলো (যেমন- ৫ টাকা, ১০ টাকা, ৫০ টাকা, ইত্যাদি) হিসাবের বইতে সংরক্ষণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্যাশিয়ারের বইতে যে বিবরণী সংরক্ষণ করা হয়, তাকে খুচরা নগদান বই বলে। এই সকল খরচগুলো সাধারণ নগদান বইতে দেখানো হলে তা অনেক দীর্ঘ ও জটিল হয়ে পড়তো। সাধারণত এইসব খরচ নির্বাহের জন্য সাধারণ ক্যাশিয়ার, খুচরা ক্যাশিয়ার বা পেটি ক্যাশিয়ারকে একটি তহবিল প্রদান করে থাকে।
খুচরা নগদান বই প্রধানত ২ প্রকার:সাধারণ খুচরা নগদান বই ও বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদান বই। বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদান বই আবার ২ প্রকার- সাধারণ ও অগ্রদত্ত।
অংশীদারী ব্যবসায়
অংশীদারী ব্যবসায় : চুক্তি সম্পাদনে সক্ষম দুই বা ততোধিক ব্যক্তি তাদের অর্থ, শ্রম, শক্তি, বুদ্ধি ও দক্ষতা একযোগে বা এদের যে কোন একটি বিনিয়োগের মাধ্যমে যে আইনসম্মত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন করে এবং তা হতে মুনাফা নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে বণ্টনের জন্যে যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি করে, তাকে অংশীদারী ব্যবসায় বলে।
অংশীদারী ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি
অংশীদারী ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে।
১. পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতি
২. স্থিতিশীল বা স্থির মূলধন পদ্ধতি
পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতি : যে পদ্ধতিতে অংশীদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মূলধন ও অন্যান্য সমন্বয়সমূহ অংশীদারদের মূলধন হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতি বলে। এটি একটি সনাতন হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অংশীদারদের মূলধন হিসাবে ব্যবসায় ও অংশীদারদের মধ্যে সংঘটিত যাবতীয় লেনদেনসমূহ হিসাবভুক্ত করা হয়।
স্থিতিশীল বা স্থির মূলধন পদ্ধতি : যে পদ্ধতিতে অংশীদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মূলধনের হিসাব পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তাকে স্থিতিশীল বা স্থির মূলধন পদ্ধতি বলে। এখানে মূলধন ব্যতীত অন্য কোন সমন্বয় লিপিবদ্ধ হয় না। এই হিসাব সর্বদা ক্রেডিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে।
অংশীদারী ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণীর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ
১. লাভ-লোকসান বণ্টন হিসাব
২. অংশীদারদের মূলধন হিসাব
৩. চলতি হিসাব (শুধুমাত্র স্থিতিশীল পদ্ধতিতে প্রযোজ্য)
লাভ-লোকসান বণ্টন হিসাব : যে হিসাবের মাধ্যমে অংশীদারগণ ব্যবসায়ের নীট মুনাফা হতে বণ্টনযোগ্য মুনাফা বা ক্ষতি চুক্তি অনুযায়ী বণ্টন করে নেয়, তাকে লাভ-লোকসান বণ্টন হিসাব বলে। ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করার পর লাভ-লোকসান বণ্টন হিসাব প্রস্তুত করা হয়।
অংশীদারদের মূলধন হিসাব : যে হিসাবের মাধ্যমে ব্যবসায়ের অংশীদারগণের মূলধনের জের জানা যায়, তাকে অংশীদারদের মূলধন হিসাব বলে। পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতিতে ব্যবসায় অংশীদারদের মধ্যে সংঘটিত যাবতীয় লেনদেনসমূহ এ হিসাবে হিসাবভুক্ত করা হয়।
চলতি হিসাব : স্থিতিশীল বা স্থির মূলধন পদ্ধতিতে মূলধন ব্যতীত ব্যবসায় ও অংশীদারদের মধ্যে বাকি সকল সমন্বয়সমূহ এ হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
অংশীদারদের কমিশন
অংশীদারী চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে অংশীদারগণ মুনাফার অংশ ছাড়া নীট লাভের উপর নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়ে থাকে। কমিশন অংশীদারদের আয় এবং ব্যবসায়ের জন্য ব্যয়। কমিশন ২ ভাবে ধার্য করা যায়।
১. কমিশন চার্জের পূর্বে নীট লাভের উপর কমিশন :
ত্যাগ অনুপাত
কোন অংশীদারী ব্যবসায়ে নতুন অংশীদার যোগদান করলে মুনাফার অংশ থেকে পুরাতন অংশীদারদের যতটুকু ছাড় দিতে হয়, তাকে ত্যাগ অনুপাত বলে।
ত্যাগ অনুপাত = পুরাতন অনুপাত – নতুন অনুপাত
লাভের অনুপাত
কোন অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হতে কোন অংশীদার অবসর গ্রহণ, অংশীদারীত্ব পরিত্যাগ বা মৃত্যুবরণ করলে কিংবা বহিষ্কৃত হলে মুনাফার অংশের মধ্যে অবশিষ্ট অংশীদারদের যতটুকু দাবী বৃদ্ধি পায়, তাকে লাভের অনুপাত বলে।
লাভের অনুপাত = নতুন অনুপাত – পুরাতন অনুপাত
অনুপাত
অনুপাত : অনুপাত আর্থিক বিবরণীর উপাদানগুলোর (সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা সত্ত্ব) মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
অনুপাত বিশ্লেষণ কে যেসব রূপে প্রকাশ করা যেতে পারে
শতকরা রূপে। যেমন- ২৫%, ১০%
আনুপাত রূপে। যেমন- ২:৩, ৪:৫
হার/বার। যেমন- ২ বার, ৫ বার
শ্রেণীবিভাগ
উদ্দেশ্য অনুসারে অনুপাতকে ৪ টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
তারল্য অনুপাত :
চলতি অনুপাত
ত্বরিত অনুপাত
কার্যকরি মূলধন অনুপাত
উপার্জন ক্ষমতা অনুপাত :
মোট লাভ অনুপাত
নীট লাভ অনুপাত
শেয়ার প্রতি আয় (Earning per Share-EPS)
মূলধন কাঠামো অনুপাত
দায়-মালিকানা অনুপাত
দায়-মোট সম্পত্তি অনুপাত
ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সম্পর্কিত অনুপাত
মজুদ আবর্তন অনুপাত
দেনাদার আবর্তন আনুপাত
চলতি সম্পত্তি : যে সব সম্পত্তিকে এক হিসাবকালের মধ্যে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়, তাদের চলতি সম্পত্তি বলে। যেমন- নগদ, ব্যাংকে জমা, স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ, প্রাপ্য হিসাবসমূহ, বিবিধ দেনাদার, প্রাপ্য নোট, অগ্রপ্রদত্ত ব্যয়, মজুদ পণ্য।
চলতি দায় : যে সব দায়কে এক হিসাবকালের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়, তাদেরকে চলতি দায় বলে। যেমন- প্রদেয় হিসাবসমূহ, স্বল্পমেয়াদী ঋণ, অনুপার্জিত আয়, প্রদেয় লভ্যাংশ, প্রদেয় নোট, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চলতি অংশ।
ত্বরিত সম্পত্তি : যে সব চলতি সম্পত্তিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে শূণ্য ঝুঁকিতে প্রায় সমপরিমাণ নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়, তাদেরকে ত্বরিত সম্পত্তি বলে। যেমন- নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা, দেনাদার।
মালিকানা স্বত্ত্ব : ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তির উপরে মালিকের দাবীকে মালিকানা স্বত্ত্ব বা মূলধন বলে।
কোন অনুপাত কি বোঝায়?
চলতি অনুপাত : প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমেয়াদী দায় পরিশোধের ক্ষমতা নির্দেশ করে।
ত্বরিত অনুপাত : প্রতিষ্ঠানের তাৎক্ষণিক দায় পরিশোধের দায় পরিশোধ ক্ষমতা নির্দেশ করে।
কার্যকরি মূলধন অনুপাত :
মোট লাভ অনুপাত : প্রতি টাকা বিক্রয়ের বিপরীতে মোট লাভের পরিমাণ নির্দেশ করে।
নীট লাভ অনুপাত : প্রতি টাকা বিক্রয়ের বিপরীতে নীট লাভের পরিমাণ নির্দেশ করে।
শেয়ার প্রতি আয় : প্রতি শেয়ারের বিপরীতে নীট আয়ের পরিমাণ নির্দেশ করে।
দায়-মালিকানা অনুপাত : বহিঃস্থ ও অভ্যন্তরীণ দাবীর পরিমাণ নির্দেশ করে।
দায়-মোট সম্পত্তি অনুপাত : প্রতি টাকা সম্পত্তির বিপরীতে দায় নির্দেশ করে।
মজুদ আবর্তন অনুপাত : মজুদ গড়ে কত দিন পরপর বিক্রয় হয় তা নির্দেশ করে।
দেনাদার আবর্তন আনুপাত : একটি হিসাবকালে দেনাদারের থেকে অর্থ প্রাপ্তির গড় সময় নির্দেশ করে।
অবচয়
অবচয় : ব্যবহারজনিত কারণে সম্পত্তির মূল্য অবনতিকে অবচয় বলে। হিসাববিজ্ঞানের মিলকরণ নীতি অনুসারে অবচয় ধার্য করা হয়। অবচয় হল সম্পত্তি ব্যবহারের বার্ষিক চার্জ। অবচয় ধার্জের ফলে সম্পত্তি ও মালিকানা সত্ত্ব হ্রাস পায়।
অবচয় ধার্য না করলে সম্পত্তি ও মালিকানা সত্ত্ব বেশি দেখানো হয়।
অবচয় ধার্যের পদ্ধতিসমূহ
সরলরৈখিক পদ্ধতি
ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি
দ্বৈতহ্রাসমান জের পদ্ধতি
উৎপাদন ঘণ্টা পদ্ধতি
উৎপাদন একক পদ্ধতি
বর্ষসংখ্যা পদ্ধতি
বর্ষসংখ্যা পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে বাকি মূল্য ভার আরোপিত বর্ষের ভিত্তিতে ভাগ করে দেখানো হয়।
সরলরৈখিক পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে বাকি মূল্য এর ব্যবহারিক আয়ুষ্কালের মধ্যে ভাগ করে দেখানো হয়। এতে প্রতি বছরের অবচয় সমান হবে।
সরলরৈখিক পদ্ধতিতে মোট অবচয় = ক্রয়মূল্য - ভগ্নাবশেষ মূল্য
উৎপাদন একক / ঘণ্টা পদ্ধতি
সম্পত্তি থেকে প্রাপ্য পরিমাণ উৎপাদনের দ্বারা এর ক্রয়মূল্যকে ভাগ করে অবচয় নির্ধারণ করা হয়।
ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে প্রতি হিসাব কালের শেষে সম্পত্তির বহিমূল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে অবচয় ধরতে হয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কাল যত কমতে থাকে অবচয়ের পরিমাণ তত কমতে থাবে। এক্ষেত্রে সম্পত্তির ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচনা করা হয়না। তবে অবচয়ের হার নির্ণয়ের সময় ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচনা করা হয়।
উদহারণ :
ABC Co. ২০০৫ সালের ১লা জানুয়ারী তারিখে ১,০০,০০০ টাকা মূল্যের একটি মোটরযান ক্রয় করে। অবচয়ের হার ১০%
দ্বৈতহ্রাসমান জের পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ক্রমহ্রাসমান হার এর দিগুণ হার অবচয় ধার্য করা হয়। ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচনা করা হয় না।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু টার্মস :
ভগ্নাবশেষ মূল্য : সম্পত্তির ব্যবহার শেষে বিক্রয় করে যে মূল্য আদায় করা যায়, তাকে ভগ্নাবশেষ মূল্য বলে।
আয়ুষ্কাল : সম্পত্তি মোট যে পরিমাণ সময় ব্যবহার করা হবে, সেটিই সম্পত্তির আয়ুষ্কাল।
অবচয়যোগ্য মূল্য = সম্পত্তির ক্রয়মূল্য – ভগ্নাবশেষ মূল্য
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান
যে সকল প্রতিষ্ঠান কোনরূপ ব্যবসায়িক কার্যকলাপে লিপ্ত না থেকে সমাজের কল্যাণকর কাজে লিপ্ত থেকে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক কার্যক্রম সম্পাদন করে তাদেরকে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে।
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান-এর বৈশিষ্ট্য
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে না।
সদস্যদের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠিত।
পণ্য উৎপাদন বা ক্রয়-বিক্রয় কাজে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লিপ্ত থাকে না।
সদস্যদের চাঁদা, ভর্তি ফি, সমাজের মহৎ ব্যক্তিদের দান, সরকারি অনুদানের মাধ্যমে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয় অর্জিত হয়।
ব্যয় অতিরিক্ত আয় সদস্যদের মাঝে বণ্টিত হয় না।
ব্যয় অতিরিক্ত আয়ের উপর আয়কর দিতে হয় না।
আয় জনকল্যাণ ও সমাজ সেবামূলক কাজে ব্যয় হয়।
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান-এর হিসাব ব্যবস্থা
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের যদিও মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে না, এর পরেও কিছু হিসাব ও বিবরণী সংরক্ষণ করতে হয়। যথাঃ
১. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব।
২. আয় ব্যয় হিসাব।
৩. উদ্বৃত্তপত্র।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে সকল নগদ লেনদেন সম্পাদন করে থাকে, সেই সব লেনদেনগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত আকারে যে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব বলে।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব সর্বদা ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের যে কোন হিসাব বছরের নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান লিপিবদ্ধ করা হয়।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবে সমন্বয় লিপিবদ্ধ করা হয় না।
প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব নগদান বইয়ের একটি সার-সংক্ষেপ।
আয়-ব্যয় হিসাব
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সমূহ একটি নির্দিষ্ট হিসাব বছর শেষে মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয় নিয়ে যে হিসাব প্রস্তুত করে তাকে আয়-ব্যয় হিসাব বলে।
আয়-ব্যয় হিসাবের ডেবিট পার্শে মুনাফা জাতীয় ব্যয় ও ক্রেডিট পাশে মুনাফা জাতীয় আয় লিপিবদ্ধ করা হয়।
আয়-ব্যয় হিসাবে মূলধন জাতীয় আয়-ব্যয় লিপিবদ্ধ করা হয় না।
শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সমূহ আয়-ব্যয় হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
আয়-ব্যয় হিসাবের ক্রেডিট ব্যালেন্স ব্যয় অতিরিক্ত আয় ও ডেবিট ব্যালেন্স আয় অতিরিক্ত ব্যয় নির্দেশ করে।
মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয় : যে সব আয়-ব্যয়ের কার্যকারিতা একটি হিসাবকালের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাদেরকে মূলধন জাতীয় আয়-ব্যয় বলে।
উদ্বৃত্তপত্র
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্তপত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্তপত্রের অনুরূপ। অর্থাৎ এক পার্শ্বে সম্পদ সমূহ এবং অন্য পাশে দায় সমূহ ও মূলধন তহবিল লিপিবদ্ধ করা হয়।
মূলধন তহবিল
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও দায়ের পার্থক্যকে মূলধন বলে। এখানে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও দায়ের পার্থক্যকে মূলধন তহবিল বলে।
বিশেষ তহবিল
অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন করলে তাকে বিশেষ তহবিল বলে। যেমনঃ উন্নতি তহবিল, বৃত্তি তহবিল। এইসব তহবিল উদ্বৃত্তপত্রের দায় পার্শ্বে লিপিবদ্ধ
উৎপাদন ব্যয় হিসাব
কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, ব্যয় বিশ্লেষণ এবং ব্যয় সংক্রান্ত নানা প্রতিবেদন প্রণয়ন সহ উৎপাদন ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম ও এর ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে উৎপাদন ব্যয় হিসাব বলে।
উৎপাদন ব্যয় হিসাবের উদ্দেশ্য
ব্যয় নিরূপণ
ব্যয় নিয়ন্ত্রণ
মুল্য নির্ধারণ
মুনাফা নির্ণয়
পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন
উপযুক্ত ও বিকল্প সিদ্ধান্ত গ্রহণ

কার্যভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস
একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
উৎপাদনমুলক কার্যাবলী ব্যয়
বাণিজ্যিক কার্যাবলী ব্যয়
বাণিজ্যিক কা্র্যাবলী আবার দুই ভাগে বিভক্ত:
বাজারজাতকরণ ব্যয়
প্রশাসনিক ব্যয়
উৎপাদন ব্যয়
উৎপাদন কার্যের মূল কেন্দ্র হছে কারখানা এবং কারখানার মৌলিক কার্যক্রম তথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল খরচের সমষ্টিই হলো উৎপাদন ব্যয়।
বাণিজ্যিক ব্যয়
কোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যতীত যাবতীয় ব্যয় এর অন্তর্ভুক্ত। প্রশাসনিক ব্যয় ও বাজারজাতকরণ ব্যয় এই ব্যয়ের আওতাধীন।
প্রকৃতিভিত্তিক শ্রেনীবিন্যাস
পরিমাণের বিভিন্নতার জন্য প্রকৃতিগত শ্রেণীবিভাগের সৃষ্টি হয়। এগুলো যথাক্রমেঃ
পরিবর্তনশীল ব্যয়
স্থির বা স্থায়ী ব্যয়
আধা পরিবর্তনশীল বা আধা স্থায়ী ব্যয়
পরিবর্তনশীল ব্যয়ঃ উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যার অনুপাতে যে সকল ব্যয়ের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে, সেগুলোই পরিবর্তনশীল ব্যয়।
স্থির বা স্থায়ী ব্যয়ঃ যে সকল ব্যয় উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রায় স্থির বা অবিচল থাকে সেগুলো স্থির বা স্থায়ী ব্যয়।
আধা পরিবর্তনশীলঃযে সকল ব্যয় একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত স্থির থাকে এবং পরবর্তীতে উৎপাদন বা কার্যাবলী বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে, তাকে আধা পরিবর্তনশীল ব্যয় বলে।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
কাজের পরিমাণ কমানোর জন্য কোন হিসাব ব্যবস্থায় দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির ত্রুটিপূর্ণ বা আংশিক প্রয়োগ ঘটলে তাকে একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে। একতরফা দাখিলা পদ্ধতি মূলত একতরফা, দুতরফা এবং বিনা দাখিলার সংমিশ্রণ। ( Single entry system is nothing but an admixture of single entry, double entry and no entry.)
দুতরফা পদ্ধতি : লেনদেনকে ডেবিট-ক্রেডিটে বিশ্লেষণ করে লিপিবদ্ধ (জাবেদা), শ্রেণীবদ্ধ (খতিয়ান), ত্রুটি নির্ণয় (রেওয়ামিল) করে ব্যবসায়ের আর্থিক ফলাফল (ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-ক্ষতি হিসাব) ও আর্থিক অবস্থা (উদ্বৃত্তপত্র) নির্ণয় করার পদ্ধতিকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
ফটোর কোনো বর্ণনা উপলব্ধ নেই।
বিশুদ্ধ একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে শুধু ব্যক্তিবাচক হিসাব রাখা হয়। কিন্তু নামিক ও সম্পত্তি বাচক হিসাব রাখা হয় না।
সাধারণ একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিবাচক ও নগদান হিসাব রাখা হয়।
উপ একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিবাচক, নগদান হিসাব ও কিছু সহকারী বই রাখা হয়।
প্রারম্ভিক ও সহকারী মূলধন নির্ণয়
একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে মূলধন হচ্ছে নীট সম্পদের পরিমাণ। একটি নির্দিষ্ট তারিখে কারবারের দায় মিটানোর পর যে নীট সম্পদ বিদ্যমান থাকে তাকে মূলধন বলে।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রারম্ভিক ও সমাপনী মূলধন পরিমাপ করে লাভক্ষতি নির্ণয় করা হয়।
কিন্তু কোন নির্দিষ্ট হিসাব বইতে প্রারম্ভিক মূলধন ও সমাপনী মূলধনের পরিমাণ লিপিবদ্ধ থাকে না। তাই প্রারম্ভিক মূলধন ও সমাপনী মূলধন নির্ণয় করে নিতে হয়।
প্রারম্ভিক মূলধন ও সমাপনী মূলধন নির্ণয়ের নিয়ামাবলি
প্রারম্ভিক মূলধন = প্রারম্ভিক সম্পত্তি - প্রারম্ভিক দায়
সমাপনী মূলধন = সমাপনী সম্পত্তি – সমাপনী দায়
গাণিতিক সমস্যার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপায়ে প্রারম্ভিক ও সমাপনী মূলধন নির্ণয় করতে হয় :
প্রারম্ভিক মূলধন = সমাপনী মূলধন+উত্তোলনের সুদ+নীট ক্ষতি -অতিরিক্ত মূলধন-মূলধনের সুদ-নীট লাভ
সমাপনী মূলধন = প্রারম্ভিক মূলধন+অতিরিক্ত মূলধন+মূলধনের সুদ+নীট লাভ-উত্তোলন –উত্তোলনের সুদ-নীট ক্ষতি
একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে নামিক হিসাব অর্থাৎ আয়-ব্যয় হিসাব সমূহ সংরক্ষণ করা হয় না। ফলে সঠিক ভাবে আর্থিক ফলাফল /লাভক্ষতি নিরূপণ করা হয় না। এ পদ্ধতিতে সমাপনী মূলধন মূলধন ও প্রারম্ভিক মূলধন তুলনা করে লাভক্ষতি নির্ণয় করা হয়।
লাভ: সমাপনী মূলধন+ উত্তোলন+উত্তোলনের সুদ-প্রারম্ভিক মূলধন-অতিরিক্ত মূলধন-মূলধনের সুদ
ক্ষতি: প্রারম্ভিক মূলধন+অতিরিক্ত মূলধন+মূলধনের সুদ-সমাপনী মূলধন-উত্তোলন-উত্তোলনের সুদ

বিনিময় বিল
বিনিময় বিল : পাওনা টাকা নির্দিষ্ট তারিখে পরিশোধ করার জন্যে পাওনাদার(আদেষ্টা), দেনাদারের(আদিষ্ট) সাথে যে দলিলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় তাকে বিনিময় বিল বলে।
বিনিময় বিলের বৈশিষ্ট্য
বিনিময় বিল একটি শর্তহীন আদেশনামা বিশেষ।
এটি আদেষ্টা ও আদিষ্ট কর্তৃক সাক্ষরকৃত হতে হবে।
বিলটি প্রস্তুত ও পরিশোধের মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকবে।
বিলে স্ট্যাম্প সংযুক্ত থাকবে।
বিনিময় বিলের গুরুত্বপূর্ণ পক্ষসমূহ
আদেষ্টা : যে বিলটি প্রস্তুত করে এবং কোন বাক্তিকে প্রদান এর মাধ্যমে তাকে এতে উল্লেখিত মূল্য পরিশোধের আদেশ দেয় তাকে আদেষ্টা বলে।
আদিষ্ট : আদেষ্টা যার বরাবর বিল প্রস্তুত করে এবং স্বীকৃতির জন্য উপস্থাপন করে তাকে আদিষ্ট বলে।
প্রাপক : বিলের আদেষ্টা যার বরাবর অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেন তাকে বিলের প্রাপক বলে। আদেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিলটি ধরে রাখলে নিজেই প্রাপক হবেন।
ধারক : ধারক বলতে যিনি বিলি ধারন করেন তাকে বুঝায়।
বিলের প্রকারভেদ
ভৌগোলিক ভিত্তিতে বিনিময় বিল দুই প্রকার।
আভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল : একই দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার ভিতরে যে বিল ব্যবহৃত হয় তাকে আভ্যন্তরীণ বিনিময় বিল বলে।
বৈদেশিক বিনিময় বিল : এক দেশের নাগরিক কর্তৃক অপর দেশের নাগরিকের উপর প্রস্তুতকৃত বিলকে বৈদেশিক বিনিময় বিল বলে।
মূল্য পরিশোধের সময়ের ভিত্তিতে বিল দুই প্রকার।
মেয়াদী বিল : যে বিলে মূল্য পরিশোধের মেয়াদ উল্লেখ থাকে তাকে মেয়াদি বিল বলে।
চাহিবামাত্র দেয় বা দর্শনিয় বিল : যে বিল উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে আদিষ্টকে মূল্য পরিশোধ করতে করতে হয়।
ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ হতে বিল দুই প্রকার:
বাণিজ্যিক বিল : ব্যবসায় সংক্রাত্ত দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্যে যে বিল ব্যবহৃত হয়।
অর্থ সংস্থানকারী বিল : বিলের পক্ষদ্বয়ের পারস্পারিক অর্থ সংস্থানের উদ্দেশে যে বিল প্রস্তুত করা হয় তাকে অর্থ সংস্থানকারী বিল বলে।
ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী
ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী : আমানতকারীর নগদান বইয়ের ব্যাংক কলাম এবং ব্যাংক প্রদত্ত পাশ বইয়ের উদ্বৃত্তের মধ্যে প্রায়ই পার্থক্য দেখা যায়। এ পার্থক্যের কারণ বের করে নগদাই বই ও পাশ বইয়ের উদ্বৃত্তের সমন্বয় সাধরেন জন্য আমানতকারী একটি নির্দিষ্ট তারিখে যে বিবরণী প্রস্তুত করে, তাকেই ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী বলে।
এটি হিসাববিজ্ঞানের পূর্ণ প্রকাশ নীতি অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়
এটি প্রস্তুতের মূল উদ্দেশ্য একটি নির্দিষ্ট তারিখে আমানতকারী হিসাবে প্রকৃত ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত বা জমাতিরিক্ত-এর পরিমাণ নির্ণয়
ব্যাংক সমন্বয় বিবরণীর উদ্বৃত্তকেই উদ্বৃত্তপত্রে ব্যাংক জমা বা জমাতিরিক্ত হিসাবে দেখানো হয়
এটি আমানতকারী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত হয়
নগদান বই ও পাশ বইয়ের জেরের গরমিলের কারণ :
আমানতকারীর অজান্তে ব্যাংক কর্তৃক সম্পাদিত লেনদেনসমূহ :
১. ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষ হতে অর্থ আদায় করলে
২. ব্যাংক জমাকৃত টাকার উপর সুদ প্রাপ্য হলে
৩. সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংক সার্ভিস চার্জ করলে
৪. ব্যাংক আমানতকারীর স্থায়ী নির্দেশ অনুযায়ী বীমা প্রিমিয়াম, ঋণের সুদ, মোবাইল ফোনের বিল, ইত্যাদি প্রদান করলে
৫. দেনাদার কর্তৃক সরাসরি আমানতকারীর হিসাবে টাকা জমা হলে
৬. আদায়ের জন্য জমাকৃত চেক বা বিল প্রত্যাখ্যাত হলে
৭. ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি কোন খরচ পরিশোধ করা হলে
ব্যাংকের অজান্তে আমানতকারী কর্তৃক সম্পাদিত লেনদেনসমূহ :
১. চেক ইস্যু করা হয়েছে, কিন্তু এখনো ব্যাংকে উপস্থাপিত হয়নি
২. ব্যাংকে জমাকৃত চেক, যা এখনো আদায় করা হয়নি
৩. নগদান বইয়ের জের নির্ণয়ে ভুল হলে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টীকা :
Outstanding Cheque- ইস্যুকৃত চেক, যা এখনো ব্যাংকে উপস্থাপিত হয়নি (বকেয়া চেক)
Rejected Cheque- প্রত্যাথ্যাত চেক
Deposit in Transit- ট্রানজিটে জমা
Not Sufficient Fund- এনএসই চেক, ব্যাংক তহবিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকা
Interest Earned on Deposit- ব্যাংক জমার সুদ (আয়)
Interest Payable on Bank Overdraft- ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ (ব্যয়)
শেয়ার ও শেয়ার ইস্যু
শেয়ার
যৌথমূলধনী কোম্পানির মূলধনকে কতগুলো সমান অংশে বিভক্ত করা হয় যার প্রত্যেকটি অংশকে একেকটি শেয়ার বলে। একটি কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার এর মূল্য সমান থাকে। শেয়ার এর মালিককে শেয়ারহোল্ডার বলে। শেয়ার সাধারণত হস্তান্তরযোগ্য।
শেয়ার এর শ্রেণীবিভাগ
যৌথমূলধনী কোম্পানির শেয়ারকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১. সাধারণ শেয়ার/ ইক্যুইটি শেয়ার
২. অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার
৩. বিলম্বিত দাবীযুক্ত শেয়ার
সাধারণ শেয়ার
যে শেয়ার এর মালিকগণ সাধারণ অধিকারের ভিত্তিতে লভ্যাংশ ভোগ করেন এবং মূলধন ফেরত পান অথচ কোম্পানিতে দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সর্বাধিক থাকে, সে সকল শেয়ারকে সাধারণ বা ইক্যুইটি শেয়ার বলে।
কোন বছর মুনাফা না হলে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারগণ কোন লভ্যাংশ পান না।
সাধারণ শেয়ার হোল্ডারগণ কোম্পানির প্রকৃত মালিক
ভোটাধিকার আছে
অগ্রাধিকারযুক্ত শেয়ার
যে শেয়ার এর মালিকগণ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট হারে কোম্পানির লভ্যাংশ ভোগ করেন এবং মূলধন ফেরত পাবার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পান, তাকে অগ্রাধিকার যুক্ত শেয়ার বলে।
নির্দিষ্ট হারে হারে লভ্যাংশের অধিকারী
কোম্পানির বিলোপকালে মূলধন ফেরত পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারি
এ ধরনের শেয়ার হল শেয়ার ও ঋণপত্রের সংমিশ্রণ
বিলম্বিত দাবীযুক্ত শেয়ার
যে সব শেয়ার এর মালিকগণ অগ্রাধিকার ও সাধারণ শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত দেবার পর অবশিষ্ট লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত পায়, সেসব শেয়ারকে বিলম্বিত দাবীযুক্ত শেয়ার বলে। সাধারণত কোম্পানির প্রবর্তকেরা এই ধরনের শেয়ারের মালিক হয়ে থাকেন। কোম্পানি গঠনের প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের বিপরীতে তারা এই শেয়ারের মালিকানা লাভ করেন। তাই একে প্রবর্তকদের শেয়ারও বলা হয়ে থাকে।
শেয়ার মূলধন
যৌথমূলধনী কোম্পানিগুলো জনগণের নিকট তাদের শেয়ার বিক্রয় করে যে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে শেয়ার মূলধন বলে। কোম্পানির পরিমেল বন্ধের শেয়ার মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। শেয়ার মূলধন যৌথমূলধনী কোম্পানির উদ্বৃত্তপত্রের দায় পাশে দেখানো হয়।
শেয়ার মূলধনের শ্রেণীবিভাগ
১. অনুমোদিত মূলধন : কোম্পানি যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে অনুমোদন লাভ করে, তাকে অনুমোদিত বা নামমাত্র বা নিবন্ধিত মূলধন বলে। কোম্পানি গঠনের সময় এই মূলধনের পরিমাণ স্মারকলিপিতে উল্লেখিত থাকে।
২. ইস্যুকৃত/বিলিযোগ্য/বণ্টনযোগ্য মূলধন : নিবন্ধিত মূলধনের যে অংশ জনসাধারণের নিকট বিক্রয়ের জন্য ইস্যু করা হয়, তাকে ইস্যুকৃত/বিলিযোগ্য/বণ্টনযোগ্য মূলধন বলে।
৩. বিলিকৃত মূলধন : ইস্যুকৃত মূলধনের যে অংশ কেনার জন্য জনসাধারণ দরখাস্তের মাধ্যমে সাড়া দিয়েছে তাকে বিলিকৃত মূলধন বলে।
৪. তলবকৃত মূলধন : বিলিকৃত মূলধনের যে অংশ পরিশোধ করার জন্য শেয়ার ক্রেতাগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে তলবকৃত মূলধন বলে।
৫. আদায়কৃত বা পরিশোধিত মূলধন : তলবকৃত মূলধনের যে অংশ শেয়ারহোল্ডাররা পরিশোধ করেছেন তাকে আদায়কৃত বা পরিশোধিত মূলধন বলে।
উদহারণ-
ধরি XYZ লিমিটেড কোম্পানির স্মারকলিপিতে অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ১,০০,০০,০০,০০০ টাকা। যা ১০০ টাকা মূল্যের ১,০০,০০,০০০ শেয়ারে বিভক্ত। প্রাথমিকভাবে XYZ লিমিটেড কোম্পানি ১০.০০.০০০ শেয়ার ইস্যু করে। যার বিপরীতে ১২,০০,০০০ শেয়ারের আবেদন জমা পড়ে। XYZ লিমিটেড কোম্পানি ১০,০০,০০০ শেয়ারের আবেদন মঞ্জুর করে এবং প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৩০ টাকা করে তলব করে (আবেদনে ২০ ও আবণ্টনে ১০ টাকা) । ১,০০,০০০ শেয়ারের মালিক তলবের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
শেয়ার ইস্যু পদ্ধতি
যৌথমূলধনী কোম্পানি ৩ ভাবে শেয়ার ইস্যু করতে পারে। যথা :
১. সমহারে শেয়ার ইস্যু
২. অধিহারে শেয়ার ইস্যু
৩. অবহারে শেয়ার ইস্যু
সমহারে শেয়ার ইস্যু : যখন যৌথমূলধনী কোম্পানি শেয়ারে লিখিত মূল্যে বা অবহিত মূল্যে (facevalue) শেয়ার জনসাধারণের নিকট বিলি করে তখন তাকে সমহারে শেয়ার ইস্যু বলে।
অধিহারে শেয়ার ইস্যু : যৌথমূলধনী কোম্পানি যখন শেয়ারে লিখিত মূল্য বা অভিহিত মূল্যের (facevalue) চেয়ে অধিক মূল্যে শেয়ার জনসাধারণের নিকট বিলি করে তখন তাকে অধিহারে শেয়ার ইস্যু বলে।
অবহারে শেয়ার ইস্যু : যৌথমূলধনী কোম্পানি যখন শেয়ারে লিখিত মূল্য বা অভিহিত মূল্যের (facevalue) চেয়ে কম মূল্যে শেয়ার জনসাধারণের নিকট বিলি করে তখন তাকে অবহারে শেয়ার ইস্যু বলে।
একটি কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য যদি ১০০ টাকা হয়,
নোট : অবহারে শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাট্টার হার ১০%
শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ
শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ বলতে শেয়ার হোল্ডারের মালিকানা বাতিল করা বোঝায়। এর ফলে শেয়ার হোল্ডার শেয়ারের মালিকানা হারায়, কোম্পানির ইস্যুকৃত ও বিলিকৃত শেয়ার মূলধন হ্রাস পায় এবং বাজেয়াপ্তকৃত টাকা মূলধন সঞ্চিতিতে স্থানান্তর করা হয়।
শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে হলে শেয়ারহোল্ডারকে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দিতে হবে। বাজেয়াপ্ত শেয়ার পুনঃবিলির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাট্টার হার ১০%

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "হিসাববিজ্ঞান"

Post a Comment

যোগাযোগ ফর্ম

Name

Email *

Message *

 BIPLOB BLOGGER

প্রতিদিন সকল ধরনের চাকরির খবর আপডেট পেতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করবে এবং আপনি যদি এন্ড্রয়েড মোবাইলে আপনার চাকরির বিজ্ঞপ্তি গুলো পেতে চান তাহলে আমাদের একটি অ্যাপস রয়েছে সেটি নিচের দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন

বাংলাদেশ রেলওয়েতে একটি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে পদের 
নামঃ খালাসী 
পদ সংখ্যা:-১০৮৬ জন
আবেদনের শেষ তারিখ:-২৬ই জানুয়ারি ২০২২।  ও বিস্তারিত জানুন নিচের দেওয়া ভিডিওটিতে