সন্ধি

সন্ধি


পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো।

সন্ধি ধ্বনির মিলন : সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।

সন্ধির উদ্দেশ্য : সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-

১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),

২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)

সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে দেয়া হলো-

নাম

অঘোষ

ঘোষ

নাসিক্য

অল্পপ্রাণ

মহাপ্রাণ

অল্পপ্রাণ

মহাপ্রাণ

ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) ক খ গ ঘ ঙ

চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) চ ছ জ ঝ ঞ

ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) ট ঠ ড ঢ ণ

ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) ত থ দ ধ ন

প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) প ফ ব ভ ম

রূপতত্ত্বের বিচারে সন্ধি হল- সম-Öধা (ধারণ করা) +ই (কি), ভাববাচ্য। এর সমার্থ হলে— সংযোগ, সংশ্লেষ, মিলন। পাণিনীয় ব্যাকরণের সূত্রে বাংলা ব্যাকরণে এর প্রবেশ ঘটেছে। গোড়ার দিকে বাংলা ব্যাকরণে তৎসম শব্দের সন্ধি প্রবেশ করেছিল প্রত্যক্ষভাবে সংস্কৃত ব্যাকরণে অনুলিপি হিসাবে। পরে বাংলা ব্যাকরণে বাংলা সন্ধি যুক্ত হয়েছে, বাংলা উচ্চারণ ও বানান রীতি অনুসারে।

পাণিনীয় ব্যাকরণ মতে- পরঃ সন্নিকর্ষঃ সংহিতা (১।৪।১০৯)। বিদ্যাসাগরের সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী (ডিসেম্বর ২০০৩) -এর বাংলা বর্ণনায় বলা হয়েছে— ‘দুই বর্ণ পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত হইলে উভয়ে মিলিত হয়’। লক্ষ্যণীয় বিষয় পাণিনী সংজ্ঞায় যাকে সংহিতা বলা হয়েছে— তাই বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি। সংস্কৃত ব্যাকরণে প্রত্যক্ষভাবে সন্ধিতে উচ্চারণের বিষয়টি পাওয়া যায় না।

ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতও পাণিনি’র অনুরূপ (..বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে। বাঙ্গালা ব্যাকরণ (মাওলা ব্রাদ্রাস, ফাল্গুন ১৩৪২ )। এই সন্ধির সংজ্ঞার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (বৈশাখ ১৩৯৬) –এ। এই ব্যাকরণে সন্ধির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘দুইটি (বা ক্বচিৎ দুইটির অধিক) ধ্বনি একই পদে, অথবা দুইটি বিভিন্ন পদে, পাশাপাশি অবস্থান করিলে, দ্রুত উচ্চারণের সময় তাহাদের মধ্যে আংশিক বা পূর্ণভাবে মিলন হয়; কিংবা একটির লোপ হয়, অথবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এইরূপ মিলন বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।

সুনীতিকুমারের এই সংজ্ঞায় ধ্বনিটাই প্রধান। কিন্তু বাস্তবে এই সংজ্ঞা আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করে। ধরা যাক- সন্ধির নিয়মে বলা হচ্ছে, অ +অ=আ। কিন্তু বাস্তবে অ+অ হওয়া উচিৎ অঅ। কারণ, অনন্ত কাল ধরে চেষ্টা করলেও ‘অ +অ’ কে আ ধ্বনিতে পরিণত করা যায় না। কিন্তু যখন বিশেষভাবে বলে দেওয়া হবে যে- ‘অ +অ’ যুক্ত করলে আ হবেই, তখন ধ্বনির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করে, বলতেই হবে, অ +অ=আ। এর ফলে ধ্বনিতত্ত্বে সন্ধি একটি কৃত্রিম রীতি হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রকৃষ্ট বিচারে দুই বর্ণের মিলনে যখন যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, প্রাথমিকভাবে যুক্তবর্ণ বানানরীতিকে প্রকাশ করে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন তা ধ্বনির দ্বারা যখন প্রকাশিত হয়, তখন সন্ধির কৃত্রিম রীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। বানানরীতির বিষয় এখানে যুক্ত করায়- আপত্তি উঠতেই পারে। তা হলে- বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। ধরা যাক একটি শব্দ ‘নবান্ন’। স্বরসন্ধির নিয়মে এর বিশ্লেষণ হবে—নব + অন্ন =নবান্ন

প্রাথমিকভাবে বানানরীতি অনুসারে বলা যেতে পারে—

১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,

২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,

৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—

নব (শেষ বর্ণ কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনধ্বনি) + অন্ন (প্রথম বর্ণ অ) =ব (প্রথম পদের শেষবর্ণ) +আ=বআ

৪। এই আ, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে আ-কার হিসাবে যুক্ত হবে।

নব +অন্ন=নবআন্ন>নবান্ন।

এখানে উৎপন্ন নবান্ন শব্দের ‘বা’ ধ্বনির ব্যাখ্যাকে ধ্বনির বিশ্লেষণ করে, যে সংজ্ঞাই দেওয়া হোক না কেন, তা হবে একটি কৃত্রিম পদ্ধতি। লক্ষ্য করুন, এই বিচারে উচ্চারণ ত্রুটির চেয়ে আমরা বানানের শুদ্ধতাকে প্রাধান্য দেই বেশি। এক্ষেত্রে আর একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। নমুনা- শব্দটি ‘রবীন্দ্র’ । বাংলা উচ্চারণরীতিতে ‘ই’ ঈকারে প্রভেদ নেই। তাই ‘রবীন্দ্র’ আর ‘রবিন্দ্র’ দুটোর উচ্চারণ হবে একই। সন্ধির নিয়মে আমরা যদি বিষয়টি পরপর লিখি, তাহলে বিশ্লেষণটা নিচের মতো হতে পারে।

রবি + ইন্দ্র=রবীন্দ্র (বানানরীতে শুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্‌.দ্রো )

রবি + ইন্দ্র=রবিন্দ্র (বানানরীতে অশুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্‌.দ্রো)

লক্ষ্য করুন। ‘রবীন্দ্র’ ও ‘রবিন্দ্র’ দুটির উচ্চারণ একই। তাই সন্ধির সূত্র এখানে কোন কাজই করছে না। কিন্তু বানান রীতিতে সন্ধির রীতি (ই +ই=ঈ) অপরিহার্য।

সন্ধির সূত্রে বাংলাতে বানানরীতির পাশাপাশি ধ্বনি তত্ত্বের যে কৃত্রিম রীতি পাই, তারই আলোকে আমি সন্ধির প্রথাগত বিষয়গুলো নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। বলাই বাহুল্য বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের সন্ধির সূত্রগুলো প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে না বটে, কিন্তু সন্ধিজাত শব্দের উচ্চরণে কৃত্রিম ধ্বনিরীতিকে বিশেষ নিয়ম হিসাবে মানা যেতে পারে।

সন্ধির প্রকারভেদ

ধ্বনির মিলনকে সন্ধি হিসাবে বিবেচনা করলেও প্রথমেই তা বিচার করতে হবে, মৌলিক ধ্বনির বিচারে। ধ্বনির বিচারে প্রাথমিক প্রধান দুটি ভাগ হলো- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। যদিও বাংলাতে মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা রয়েছ মাত্র সাতটি। কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই তালিকায় অবশ্যই এ্যা নামক মৌলিকধ্বনিটি নেই। কারণ এ্যা নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় নেই। কিন্তু সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়।

যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।

সংস্কৃত তথা তৎসম সন্ধিতে যে নিয়মে নূতন শব্দ তৈরি হয়, অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে তা খাটে না। মূলত এই অ-তৎসম শব্দ বাংলা সন্ধি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই সব বিবেচনায় গোড়াতেই সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটো হলো-

সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সন্ধি

বাংলা শব্দের সন্ধি

তৎসম শব্দের সন্ধি

তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় (সংকলিত ও নির্বাচিত) বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের প্রকৃতি অনুসারে এই সন্ধিকে যে ভাবে পাই তা হল—

১. স্বর-স্বর সন্ধি। বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়

২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি। বাক্ + ঈশ =বাগীশ

৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি। তৎ + সম =তৎসম

সংস্কৃত স্বরসন্ধি (স্বর-স্বর সন্ধি)

স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—

স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + অ =আ নব + অন্ন =নবান্ন

অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়

আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত

আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়

স্বরসন্ধি সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে উভয় মিলে এ-কার হয় এবং এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + ই =এ রাজ + ইন্দ্র =রাজেন্দ্র

অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর

আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট

আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ

স্বরসন্ধি সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + উ =ও হিত + উপদেশ =হিতোপদেশ

অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব

আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়

আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি

স্বরসন্ধি সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ হলে উভয় মিলে অর্ হয় এবং অর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি

আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি

স্বরসন্ধি সূত্র : ৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋত হলে উভয় মিলে আর্ হয় এবং আর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত

আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত

স্বরসন্ধি সূত্র : ৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার, ঐ, ঐ-কার হলে উভয় মিলে ঐ-কার হয় এবং ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক

অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য

আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব

আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য

স্বরসন্ধি সূত্র : ৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার, ঔ, ঔ-কার হলে উভয় মিলে ঔ-কার হয় এবং ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন

অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ

আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি

আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ

স্বরসন্ধি সূত্র : ৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার হলে উভয় মিলে য (য-ফলা) হয় এবং য-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত

ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু

স্বরসন্ধি সূত্র : ৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ আ, আ-কার হলে উভয় মিলে য্আ (এ্যা) হয় এবং এ্যা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার

ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার

স্বরসন্ধি সূত্র : ১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে উভয় মিলে ঈ হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র

ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা

ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র

ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে য্উ (এ্যউ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর

ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার হলে উভয় মিলে য্এ (এ্যএ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঐ, ঐ-কার, হলে উভয় মিলে য্ঐ (এ্যঐ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার থাকলে উভয় মিলে য্ও (এ্যও) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার, ই, ই-কার হলে উভয় মিলে বয় (অয়), বায়, বি, বী হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—

উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়

উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত

উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত

উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ঊ হয়। যেমন—

উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত

উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি

ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি

ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ, ঋ-কার হলে উভয় মিলে ঋ, ঋ-কার হয়। যেমন—

উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পর পদের আদ্যবর্ণ এ-কার লে উভয় মিলে এ হয়। যেমন—

ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঋ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে স্বরবর্ণ যুক্ত হলে উভয় মিলে ঋ-কার হয় এবং পরপদের স্বরবর্ণ ঋ-কারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে

ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়

ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা

ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ

ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)

ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা

স্বরসন্ধি সূত্র : ২০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি এ, এ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে অয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন

স্বরসন্ধি সূত্র : ২১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঐ, ঐ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে আয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক

স্বরসন্ধি সূত্র : ২২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ও, ও-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, আ, আ-কার, এ, এ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে অব, অবা, অবে হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

ও + অ =অব ভো + অন =ভবন

ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি

ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র

ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা

স্বরসন্ধি সূত্র : ২৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঔ, ঔ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, ই, ই-কার, উ, উ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে আব ও আবি, আবু হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক

ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক

ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক

নিপাতনে সিদ্ধ :

অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য

কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর

গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি

গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর

প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ

বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা

মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ

শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ

সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।

সংস্কৃত ব্যঞ্জন সন্ধি

ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ তিনটি হলো-

১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি

২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।

৩। ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি

স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।

ব্যাখ্যা : ধরা যাক পূর্বপদটি ‘কথা’। এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি থ এবং এর সাথে আ ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। আবার ধরা যাক পরপদটি ‘ছলে’। এই পদটির প্রথম বর্ণটি ছ। অর্থাৎ ছ্ +অ। তাহলে সূত্র অনুসারে সন্ধির ফলাফল হবে আ + ছ =আচ্ছ। সব মিলিয়ে দাঁড়াবে- কথা +ছলে=কথাচ্ছলে। এরূপ—

অ +ছ =অচ্ছ। প্র +ছদ =প্রচ্ছদ

আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন

ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন

উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া

২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি

ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।

ব্যাখ্যা : সূত্রানুসারে ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। অর্থাৎ এই নিয়মে ক =গ, চ =জ, ট =ড়, ত (ৎ) =দ এবং প =ব হবে। অপর দিকে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। অর্থাৎ এই সূত্রে পরিবর্তনের রূপ হবে

ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।

উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত

চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত

ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন

ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর

প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।

ব্যতিক্রম : যাচ্ +অক=যাচক।

৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র :

ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের ফলে যে সন্ধির সৃষ্টি হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিচারে তিনটি বর্ণকে পরাশ্রায়ী বলা হয়। এই বর্ণ তিনটি হলো- ং, ঃ ও ঁ। এই তিনটি বর্ণের মধ্যে ‘ঃ’-এর ব্যবহার সন্ধিতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে- প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে বিসর্গ সন্ধিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধিকে দুটি ধারায় ভাগ করতে পারি। ভাগ দুটি হলো-

৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি

৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।

নিচে উভয় সন্ধির নিয়মাবলিকে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।

৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি:

পরাশ্রায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া অন্যান্য সকল ব্যঞ্জন বর্ণ অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তা ব্যঞ্জন- ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি হবে। এক্ষেত্রে সন্ধির সূত্রগুলো হবে—

৩.১.১ । পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ বর্গের তৃতীয় চতুর্থ বর্ণ বা অন্তঃস্থ বর্ণ হয়, তবে ক, চ, ট, ত, প বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।

ব্যাখ্যা : বর্গের (ক, চ, ট, ত, প) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো হলো- যথাক্রমে গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব এবং ভ। পক্ষান্তরে অন্তঃস্থ বর্ণগুলো হলো- য (য়), র, ল ও অন্তঃস্থ ব। এই বর্ণগুলো যদি পরপদে থাকে এবং পূর্বপদের শেষ বর্ণ যদি ক্, চ্, ট্, ত্ এবং প হয়, তবে এই পাঁচটি বর্ণ যে রূপ লাভ করবে তা হলো- ক্=গ, চ্=জ, ট্ =ড (ড়), ত=দ এবং প=ব।

উদাহরণ : ক্ + গ =গ্গ দিক্ +গজ =দিগ্গজ

ক্ + জ =গ্‌জ বাক্ +জাল =বাগ্‌জাল

ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্‌দত্তা

ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা

ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়

ক্ + ভ =গ্‌ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্‌ভ্রম

ক্ + ল =গ্‌ল বাক্ + লোপ =বাগ্‌লোপ

ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ

ট্ + দ =ড়্‌দ ষট্ + দর্শন =ষড়্‌দর্শন

ট্ + ধ =ড়্‌ধ ষট্ + ধা =ষড়্‌ধা

ট্ + ব =ড়্‌ব ষট্ + বর্গ =ষড়্‌বর্গ

ট্ + ভ =ড়্‌ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্‌ভুজ

ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত

ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন

ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত

ত্ + ড =ড্‌ড উত্ +ডীন =উড্‌ডীন

ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম

ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু

ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব

ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ

ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ

দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন

প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ

প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি

৩.১.২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয় তা হলে পূর্বপদের ক্, চ্, ট্, ত্, প্ যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়্), দ ও ব হয় কিম্বা বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়।

ব্যাখ্যা : পূবপদের শেষ বর্ণ ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয়। যেমন : বাক্, বচ্ ইত্যাদি। পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয়। যেমন : নির্ণয়, মন্দির ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত শব্দ তৈরিতে ক=গ, চ=জ, ট=ড (ড়), ত=দ এবং প=ব হবে। বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়। যেমন ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা বিকল্পে ষণ্মাস। এখানে ট্=ড় হয়েছে। পক্ষান্তরে ট-বর্গের নাসিক্য বর্ণ ণ যুক্ত হয়েছে।

উদাহারণ : ক্ +ন =গ্ বা ঙ্ দিক্ + নাগ=দিগ্নাগ বা দিঙ্নাগ।

ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।

চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা

ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি

ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।

ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্‌নাগ বা জগন্নাথ।

ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।

প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।

৩.১.৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি চ-বর্গীয় হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ন হয়, তবে তা (ন) ঞ হয়।

উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা

জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)

৩.১.৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ত্ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ এবং স থাকে, তবে দ ও ধ স্থানে ত্ হয়।

উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল

দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব

দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর

দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল

দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম

ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর

ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা

৩.১.৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ছ, জ, ঝ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের চ=চ্চ, ছ=চ্ছ, জ=জ্জ এবং ঝ=জ্ঝ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।

ব্যাখ্যা : পূর্বদের শেষ বর্ণটি খাঁটি ব্যঞ্জন ধ্বনি হলে তার সাথে হসন্ত যুক্ত হবে। যেমন- যেমন- সৎ, বিপদ্ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। যেমন- পরপদের শব্দের শব্দটি যদি চিত্র হয়, তা হলে- এর আদ্য চি ধ্বনিটি হবে চ্ + ই। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত চ্চ, চ্ছ, জ্জ, জ্ঝ-এর সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি যুক্ত হবে।

উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র

ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ

ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন

ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা

দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা

দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি

দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য

দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।

৩.১.৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ট, ড, ঢ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের ট=ট্ট, ড=ডড, ঢ=ড্ঢ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।

উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা

ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন

ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা

দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা

দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা

৩.১.৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ, দ্, ধ্ হয় এবং পরপদের ন বা ম থাকলে, ৎ বা দ্ এর স্থানে ন হয়।

উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি

ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়

দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত

দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়

ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি

৩.১.৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ শ থাকে. তবে শ স্থানে চ্ছ হয়।

উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস

দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি

৩.১.৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ হ হয়, তবে পূর্বপদের ৎ =দ্ এবং পরপদের হ =ধ হবে।

উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার

দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি

৩.১.১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ল হয়, তবে উক্ত ল-দ্বিত্ব বর্ণে পরিণত হয়।।

উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ

দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক

৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।

উদাহরণ : ধ্ +ত =দ্ধ বুধ্ +ত =বুদ্ধ

ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ

হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ

৩.১.১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, গ, ঘ, য, র, ল, ব, শ, স এবং হ হয়, তবে পূর্বপদের ম ধ্বনি ং বা ঙ-তে পরিণত হয়।উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার

ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা

ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত

ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ

ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা

ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত

ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ

ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ

ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন

ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার

ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার

৩.১.১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ট, ত প-বর্গের হয়, তবে সন্ধির ফলে বর্গের পঞ্চম বর্ণ হবে।

ব্যাখ্যা : পরিচর্তনের ফলে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ)=ঞ,(ট, ঠ, ড, ঢ, ণ)=ণ, (ত, থ, দ, ধ, ন) =ন এবং (প, ফ, ব, ভ, ম)=ম হবে।উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।

ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।

ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।

ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।

ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।

ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ

ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।

ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত

ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান

৩.১.১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ষ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত বা থ থাকলে, ত=ট, থ=ঠ হয়।উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি

ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ

৩.১.১৫। উৎ-উপসর্গের স্থা ধাতু যোগে যে সন্ধি হয়, তার প্রথম ধ্বনি (স) লোপ পায়।উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান

উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত

৩.১.১৬। সম্ উপসর্গের পরে কৃ-ধাতু যুক্ত হলে, ধাতুর আগে স যুক্ত হয়। যেমন-

সম্ +কার =সংস্কার।

কিন্তু পরি উপসর্গের পরে ষত্ব বিধানের নিয়মে স>ষ হয়। যেমন-

পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।

৩.২। বিসর্গ সন্ধি

পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।

৩.২.১। পূর্ব পদের অঃ থাকলে এবং পর পদে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে, এবং উভয় মিলে ও-কার হয় এবং উক্ত ও-কার পূর্ব পদে যুক্ত হয়।

উদাহরণ : অঃ +গ =ও মনঃ +গত =মনোগত

অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত

অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ

অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান

অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন

অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর

অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব

অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।

অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ

অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।

অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ

অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত

৩.২.২। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে অ থাকলে এবং পর পদের অ ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ঃ লোপ পায় এবং সন্ধি না হয়ে, পূর্বপদ ও পরপদ পাশাপাশি বসে।উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা

অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা

অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত

অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব

৩.২.৩। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে ই বা উ থাকলে এবং পর পদের প্রথম বর্ণ র হলে, পূর্বপদের ই=ঈ বা উ=ঈ হয় এবং পরপদের র অপরিবর্তিত থাকে।উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।

উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ

৩.২.৪। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ থাকলে, পরপদে র্ যুক্ত হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণ প্রকাশিত হয়।উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।

ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।

ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র

ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ

ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন

ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ

৩.২.৫। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পর থাকলে অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গের স্থানে র্ হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।

ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।

ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র

ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন

ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।

ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।

ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।

ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর

ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।

ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।

ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়

ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।

ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য

ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ

ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন

ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ

ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত

৩.২.৬। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে চ ও ছ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ শ হয়।উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়

ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ

৩.২.৭। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে ট ও ঠ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ ষ হয়। এবং পরপদের ট বা ঠ উক্ত ষ-এর সাথে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়

ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর

৩.২.৮। পূর্বপদে ই বা উ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ ষ-তে পরিণত হয়।উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার

ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি

ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল

উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি

উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ

৩.২.৯। পূর্বপদে অ বা আ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ স-তে পরিণত হয়।উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার

অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি

আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর

৩.২.১০। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, ক্ষ, খ, প, ফ, র, শ, স থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না।উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ

ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ

ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত

ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়

ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন

ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ

৩.৩.১১। পূর্বপদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গের লোপ হয়।উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ

ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ

ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি : আ +চর্য =আশ্চর্য আ +পদ =আস্পদ

অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি

অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ

অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি

গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর

দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি

পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি

পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি

বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ

হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র

বাংলা শব্দের সন্ধি

খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলাতে এই সন্ধি ঘটে থাকে দুই ভাবে। বাংলা স্বরসন্ধি ও বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি।

১। বাংলা স্বরসন্ধি

বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলা হয়। নিচে বাংলা স্বরসন্ধি সমূহ দেখানো হলো-

বাংলা স্বরসন্ধির সূত্রাবলী

১। অ + অ =আ পোস্ট +অফিস =পোস্টাফিস

২। অ + আ =আ থাল + আ =থালা

৩। অ + ই =ই তাঁত + ই =তাঁতি

৪। অ + উ =উ দুষ্ট + উ =দুষ্টু

৫। অ + এ =এ শত + এক =শতেক

৬। আ + আ =আ শাঁখা + আরি =শাঁখারি

৭। আ + ই =এ যা + ইচ্ছেতাই =যাচ্ছেতাই

৮। আ + ঈ =এ ঢাকা + ঈশ্বর =ঢাকেশ্বর

৯। আ + উ =উ মিথ্যা + উক =মিথ্যুক

১০। আ + এ =য় আমা + এ =আমায়

১১। ই + ই =ই ঘড়ি + ইয়াল =ঘড়িয়াল

১২। ই + এ = য় দই + এ =দইয়ে

১৩। ই + ও = ইও বাড়ি + ওয়ালা =বাড়িওয়ালা

১৪। ঈ + উ =ও ঈদ + উৎসব =ঈদোৎসব

১৫। উ + আ = য়া বাবু + আনা = বাবুয়ানা

১৬। এ + আ = এ মেয়ে + আলি = মেয়েলি

১৭। এ + এ = এ বোঁদে + এর = বোঁদের

১৮। ও + আ =য়া শো + আ = শোয়া

১৯। ও + এ =য় আলো + এ = আলোয়

ব্যতিক্রম : কুড়ি + এক = কুড়িক

২। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি :

বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের কিম্বা ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধিজাত ধ্বনি গুলো সংস্কৃত সন্ধির অনুরূপ নয়। এক্ষেত্রে বাঙলাতে যে সন্ধিজাত ধ্বনি পাই তার সবগুলোই বাঙলার নিজস্ব রীতিতে উচ্চারিত হয়। ফলে সব সময় বাংলা সন্ধি সুনির্দিষ্ট কোন রীতিকে অনুসরণ করে না। তারপরেও কিছু কিছু সাধারণ রীতি অনুসৃত হয়, তা পর্যায়ক্রমে নিচে আলোচনা করা হলো।

২.১। বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি :

বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষে স্বরধ্বনিযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনধ্বনি হলে, কখনো পূর্বপদের স্বরধ্বনি লোপ পায়।

উদাহরণ : বড় + দাদা =বড়্দাদা (অ লোপ)

মিশি +কালো =মিশ্‌কালো (ই লোপ)পেটে +ব্যথা =পেটব্যথা (এ লোপ)

২.২। বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি

বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে এবং পরপদের আদ্য বর্ণ স্বরবর্ণ হলে, উক্ত স্বরবর্ণ অবিকৃতভাবে পূর্বপদের শেষ বর্ণে যুক্ত হয়।

উদাহরণ : এক + এক =একেককয় + এক =কয়েক

তখন + ই =তখনইমাস + এক =মাসেক

২.৩। বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি

বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত, দ থাকলে এবং পরের বর্ণে জ থাকলে, জ্জ হয়।

উদাহরণ : ত্ +জ =জ্জ নাত্ +জন =নাজ্জামাইদ্ +জ =জ্জ বদ্ +জাত =বজ্জাত

বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি চ-বর্গীয় হলে এবং পরপদে জ, শ, ষ, স থাকলে তা দ্বিত্ব হয়।

উদাহরণ : চ্ +জ =জ্জ পাঁচ্ +জন =পাঁজ্জন>পাজ্জ্ন

চ্ +শ =শ্‌‌‌‌শো পাঁচ্ +শ =পাঁশ্‌শো

চ্ +স =স্‌স পাঁচ +সের =পাঁস্‌সের

বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত থাকলে এবং পরপদে দ=দ্দ এবং স থাকলে চ্ছ হয়।

উদাহরণ : ত্ +দ =দ্দ তৎ +দিন =তদ্দিনত্ +স =চ্ছ উৎ +সন্ন =উচ্ছন্ন

বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে এবং পরের বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি পাশাপাশি বসে।

উদাহরণ : শাক্ +ভাত =শাকভাত।

সমীভবন

দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-

ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।

খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।

গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।]

১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।

২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই

৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি

৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা

৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক

৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "সন্ধি"

Post a Comment

যোগাযোগ ফর্ম

Name

Email *

Message *

 BIPLOB BLOGGER

প্রতিদিন সকল ধরনের চাকরির খবর আপডেট পেতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করবে এবং আপনি যদি এন্ড্রয়েড মোবাইলে আপনার চাকরির বিজ্ঞপ্তি গুলো পেতে চান তাহলে আমাদের একটি অ্যাপস রয়েছে সেটি নিচের দেওয়া লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন

বাংলাদেশ রেলওয়েতে একটি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে পদের 
নামঃ খালাসী 
পদ সংখ্যা:-১০৮৬ জন
আবেদনের শেষ তারিখ:-২৬ই জানুয়ারি ২০২২।  ও বিস্তারিত জানুন নিচের দেওয়া ভিডিওটিতে